• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

পাঙ্গা নিলে আমি চাঙ্গা হই: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রকাশ:  ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০১:৪৮
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফাইল ছবি

ধরনা মঞ্চের পর্দা সরার মিনিট পনেরো পর উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ৯.২০ নাগাদ মাইক তুলে নিলেন। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটিতে মমতার গলা পৌঁছলই না দূরে। বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী ছুড়ে ফেলে দিলেন মাইক। অভিব্যক্তিতে ঠিকরে বেরোচ্ছে রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষা।

সকাল ১১.০৫। ধর্মতলার ধরনা-মঞ্চের গুঞ্জন ক্রমেই কোলাহলে বদলাচ্ছে। দিল্লিতে সদ্য রায় শুনিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। জানিয়ে দিয়েছে, কোনও রকম দমন-নীতির আশ্রয় নিতে পারবে না সিবিআই। মহুয়া মৈত্রের দেওয়া সেই চিরকুটের বার্তায় সহসা উজ্জ্বল মুখ্যমন্ত্রীর মুখ। উচ্ছ্বাস চোখেমুখে। বলে উঠলেন, ‘নো অ্যারেস্ট! উই আর সো গ্রেটফুল। ইটস আওয়ার ভিকট্রি।’

শীর্ষ আদালতের রায়ে মঙ্গলবার এ ভাবেই চকিতে বদলে গেল ধরনাতলার মেজাজ। সকালে যখন এসেছিলেন, তখনও সিপি রাজীব কুমারের মুখ ছিল পাথর-কঠিন। কিন্তু রায়ের পর উধাও সে গাম্ভীর্যের রেশ। মুখ্যমন্ত্রী তখন মঞ্চে বলেই চলেছেন, ‘এটা আমাদের সকলের নৈতিক জয়। সেভ ইন্ডিয়ার জয়। বাংলার মানুষের জয়।’ তার একটু পরেই ধর্মতলা ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন সিপি। মুখে স্মিত হাসি। বুক থেকে টেনশনের পাথর নামল ধর্মতলায় আগত সমর্থকদেরও। তাদের অনেকেই গোটা রাত জেগেছেন দিদির ধরনা মঞ্চের পাহারাদার হিসাবে। হুগলির পলাশ অধিকারীর মতো অনেকেই আসেন ফার্স্ট ট্রেন, ফার্স্ট বাস ধরে। কালীঘাট থেকে পুজোর ডালি এল ধরনা মঞ্চে। উড়ল সবুজ আবির। বিলি হল মিষ্টি। সঙ্গে তারস্বরে স্লোগান। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য নরম গলায় নিষেধ করলেন এ সব করতে। কারণটাও মনে করিয়ে দিলেন, ‘এটা তৃণমূলের মঞ্চ নয়, সেভ ইন্ডিয়ার মঞ্চ।’

ধরনাতলার সেই জয়ের মুড দিনভর আর বদলায়নি। মুখ্যমন্ত্রীরও মেজাজেও আর কালো ছায়া পড়েনি। কোঁচকায়নি ভুরু, ওঠেনি গালে হাত। উল্টে চরকিপাক খেয়েছেন গোটা মঞ্চে। ধরনা মঞ্চে আসা অধ্যাপক, খেলোয়াড়, ধর্মগুরু, অভিনেতাদের নিজে স্বাগত জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর কিছু ক্ষণ অন্তরই মাইক তুলে নিয়েছেন নিজের হাতে। মাঝে কখনও সেরে নিয়েছেন প্রশাসনিক কাজকর্ম, আমলাদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ। সই করেছেন ফাইলে। কখনও দলের সমর্থকদের চিৎকার করতে নিষেধ করেছেন টিপু সুলতান মসজিদের আজানে যাতে অসুবিধা না-হয়। কখনও আবার দলীয় সতীর্থকে গান গাইতে বলেছেন। নিজের লেখা গান ভুল গাইতে গায়ক-মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে ধমকেছেন। জনতার উদ্দেশে বলে উঠেছন, ‘দেখুন, ইন্দ্রনীল ভুল গাইছে।’ তার পরই ভুল শুধরে দিয়ে নিজেই গেয়ে উঠেছেন দু’কলি--- সাম্যের মাঝে দৃষ্টি/আকাশ দিল বৃষ্টি/সবুজ হল সৃষ্টি। কখনও আবার হালকা মেজাজে মজা করেছেন দলীয় বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।

বিকেলে এসেছেন চন্দ্রবাবু নাইডু, তেজস্বী যাদব। সন্ধ্যায় ঘোষণা হয়েছে, উঠে যাচ্ছে ধরনা। তখনও বদলায়নি মুখ্যমন্ত্রীর জয়ের মেজাজ। শুধু চোয়াল শক্ত হয়েছে যখন কেন্দ্র, বিজেপি কিংবা নরেন্দ্র মোদী বা অমিত শাহের নাম উচ্চারণ করেছেন, একমাত্র তখনই। দৃপ্ত কণ্ঠে বলেছেন, ‘পাঞ্জাবিতে একটা কথা আছে। পাঙ্গা। বিজেপি-কে বলছি, আমার সঙ্গে পাঙ্গা নেবেন না। পাঙ্গা নিলে আমি চাঙ্গা হই। দাঙ্গা করি না। সরফরজি কি তমান্না আজ হমারে দিল মে হ্যায়।’ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন, বিজেপি-র চাপে কী ভাবে ভোট প্রচারের জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে অগ্রিম টাকা দিয়েও হেলিকপ্টার হাতছাড়া হয়েছে, তা নিয়ে। মঞ্চে উঠে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুও মমতার সুরে গলা মিলিয়ে বিজেপি-কে একহাত নিয়েছেন। বলেছেন, ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে মমতা ম্যাডামকে এ ভাবে ধরনায় বসতে হল। বিজেপি সারা দেশে স্বৈরাচার চালাচ্ছে যা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। আমার রাজ্যেও একই কাণ্ড ঘটিয়েছে বিজেপি। কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি--- সব দলই নিজের রাজ্যে ভুক্তভোগী। মমতাদির প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ যে ব্রিগেডে তিনি যে র৵ালি করেছেন, তা স্মরণকালের মধ্যে বৃহত্তম।’

চন্দ্রবাবু জানান, তিনি ব্যক্তি হিসেবে আসেননি এই ধরনা মঞ্চে। তিনি এসেছেন, বিজেপি-বিরোধী ২৩টি দলের প্রতিনিধি হিসেবে। এর আগে দিল্লির বৈঠকেও তাঁরা আলোচনা করেছেন, কী ভাবে সিবিআই, ইডি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো প্রতিষ্ঠানকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে চলেছেন মোদী-শাহ জুটি। তাই তাঁর বক্তব্য, ‘কলকাতায় গত রবিবার সিবিআই যা করেছে, তা ভোটের মুখ চেয়েই। এত দিন কী করছিল সিবিআই? মামলাটা তো পুরোনো। ভোটের একমাস আগে হঠাৎ ওদের সিপি-র বাড়িতে হানা দেওয়ার কী দরকার ছিল? এ সবই বিজেপি-র চাল।’ তেজস্বী যাদব মঞ্চে উঠে চন্দ্রবাবুর চেয়েও বেশি সুর চড়ান। তাঁর কথায়, ‘বিজেপি বলে, হর হর মোদী, ঘর ঘর মোদী। আমরা বলছি, বর্বর মোদী, গড়বড় মোদী।

পিবিডি/জিএম

মুখ্যমন্ত্রী,মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়,কলকাতা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close