• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ভারত পানি বন্ধ করে দিলে কিছু যায় আসে না: পাকিস্তান

প্রকাশ:  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২০:৪৭
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

কাশ্মীরের পুলওয়ামায় হামলার পরই পাকিস্তানকে দেওয়া মোস্ট ফেভার্ড ন্যাশন (এমএফএন) মর্যাদা তুলে নিয়েছে ভারত। আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ২০০ শতাংশ। পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়ানোর পথে আরও এক দাপ এগিয়ে গেল নয়াদিল্লি। বৃহস্পতিবারই (২১ ফেব্রুয়ারি) ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী নীতিন গড়করি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, পাকিস্তানে তিনটি নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে। শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সেটাই আরও স্পষ্ট করে তিনি জানান, তিন নদীর পানির বন্ধ করে ভারতের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করতে ইতিমধ্যেই মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে।

সম্পর্কিত খবর

    কিন্তু মন্ত্রীর এই ‌‘‌জল-কামান’র নিশানায় থাকা সীমান্তের ওপারে উদ্বেগ কতটা? পাক সংবাদমাধ্যমগুলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, মুখে কার্যত নিরুত্তাপই ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের প্রথম সারির দৈনিক ‘ডন’র একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, এ নিয়ে বিরোধিতা করবে না ইসলামাবাদ।

    পাক পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব খাওয়াজা শুমাইলকে উদ্ধৃত করে ‘ডন’র ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এ নিয়ে পাক সরকারের কোনো মাথাব্যাথা নেই। আন্তর্জাতিক পানি চুক্তি যদি তিন নদীর পানি পাকিস্তানের দিকে আসা বন্ধ করে ভারতে ঘুরিয়ে দেওয়া সমর্থন করে, তাহলে তাদের কোনো আপত্তি নেই।

    আন্তর্জাতিক পানি চুক্তি অর্থাৎ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তির কথাই বলতে চেয়েছেন পাক আমলা। কী সেই চুক্তি? সিন্ধুর উপত্যকায় মোট ৬টি নদী রয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে তিনটিই ভারতের দিক থেকে পাকিস্তানে প্রবাহিত। এর মধ্যে পূর্ব দিকে রয়েছে ইরাবতী, শতদ্রু এবং বিপাশা। পশ্চিম দিকের তিনটি নদী হল সিন্ধু, বিতস্তা এবং চন্দ্রভাগা। এই ছয়টি নদীর পানিবণ্টন নিয়েই ১৯৬০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাক প্রেসিডেন্ট আয়ুব খানের মধ্যে চুক্তি হয়। সেটাই সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি। এই চুক্তি অনুযায়ী, পশ্চিমের তিন নদী সিন্ধু, ঝিলম এবং চন্দ্রভাগার পানি ব্যবহারের অধিকার পাকিস্তানের এবং ভারতীয় ভূখণ্ডে কোনোভাবেই ওই তিন নদীর প্রবাহে অন্তরায় বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না ভারত। অন্যদিকে পূর্ব দিকের ইরাবতী, শতদ্রু এবং বিপাশা নদীর পানি ব্যবহারের অধিকার ভারতের।

    গড়করির লক্ষ্য এই ভারতের ভাগের উপরেই। অর্থাৎ ভারতের ব্যবহারের পরে ইরাবতী, শতদ্রু এবং বিপাশার পানি ভারতের ব্যবহারের পরেও যা অবশিষ্ট থাকবে, তা কোনোভাবেই পাকিস্তানে প্রবাহিত হতে দেওয়া যাবে না। বাঁধ তৈরি করে পানির প্রবাহ ঘুরিয়ে পঞ্জাব এবং রাজস্থানে যেখানে পানির সঙ্কট, সেই এলাকায় ব্যবহার করা যায় কীভাবে, তা নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেছে মন্ত্রণালয়।

    শুক্রবারও মন্ত্রী জানান, মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনার রূপরেখা চূড়ান্ত হলেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জানানো হবে এবং সবুজ সঙ্কেত পেলেই দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।

    কিন্তু এতে কি পানিবণ্টন চুক্তি লঙ্ঘন করা হবে? আন্তর্জাতিক মহলে চাপ বাড়তে পারে ভারতের উপর? কূটনৈতিক মহলের মতে, সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী ইরাবতী, শতদ্রু এবং বিপাশা নদীর পানি সম্পূর্ণ ব্যবহারের অধিকার পেয়েছে ভারত। সেখানে অন্য কোনও দেশের অধিকার নেই, সেই নদীতে বাঁধ দিলে বা পানি আটকে অন্যদিকে প্রবাহিত করলেও চুক্তি লঙ্ঘন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

    কূটনৈতিক মহলের একটা বড় অংশের মত, এই কারণেই তিন নদীর পানি ভারত আটকে দিলে পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষবাস এবং অন্যান্য অনেক ক্ষতি হলেও এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করছে না ইসলামাবাদ।

    সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নতুন নয়। কিন্তু পুলওয়ামা হামলার পর ভারত জুড়ে পাকিস্তান বিরোধী হাওয়া জোরদার। একইসঙ্গে উঠেছে কড়া জবাব দেওয়ার দাবিও।

    সেই ক্ষোভেই খানিকটা ইন্ধন দিয়ে গড়করি বলেন, প্রতিবেশী দু’দেশের মধ্যে শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্যের পরিবেশ বজায় রাখতেই ১৯৬০ সালে নেহরু-আয়ুব এই সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি করেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান গোড়া থেকেই সন্ত্রাসে মদত দিয়ে আসছে। আর এখন সন্ত্রাসের আঁতুরঘর হয়ে উঠেছে। সেই সন্ত্রাস রফতানি করছে ভারতে। সেই কারণেই পাকিস্তানকে আর কোনও সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।

    /অ-ভ

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close