অস্ট্রেলিয়া উগ্র ও ইসলামবিদ্বেষের উর্বর ভূমি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে জোড়া বন্দুক হামলাকারী শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী ব্রেনটন টেরেন্ট যে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন তা নিশ্চিত করেছেন। হামলার নিন্দা জানিয়ে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, হামলাকারী একজন ডানপন্থী সন্ত্রাসী। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর একটা ইতিহাস আছে। তারা সাধারণত অভিবাসী ও সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু করেন। বিশ শতকের শুরু থেকে ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত নয়, এমন অভিবাসীদের বাদ দিয়েই অস্ট্রেলিয়া বেশ কিছু নীতি প্রণয়ন করেছে। এসব পদক্ষেপ সামগ্রিতভাবে শ্বেতাঙ্গ অস্ট্রেলিয়া নীতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ১৯৭৩ সালেই যা কেবল পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছিল।
সম্পর্কিত খবর
নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে পলিন হ্যানসনের ওয়ান ন্যাশনের মতো উগ্র ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো এশীয় ও অভিবাসীবিরোধী মনোভাব তৈরিতে সক্ষম হয়। যা দেশটির জাতীয় রাজনীতিতে ছোট্ট করে হলেও জায়গা পেয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়ান নেশন এবং অন্যান্য ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলো নতুর রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা পেয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়া থেকে আসা মুসলিম অভিবাসীদের কেন্দ্রভূত করেই তারা এ সম্পর্ক গড়তে পেরেছে।
যদিও অস্ট্রেলীয় উদ্বেগ থেকেই এসব গোষ্ঠীর প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে। কিন্তু শুক্রবারে ক্রাইস্টচার্চে হামলার আগে ঘাতক যুবক যে ইশতেহার প্রকাশ করেন, তাতে স্পষ্ট আভাস রয়েছে যে তিনি হামলা চালাতেই নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছিলেন। কাজেই একটা বিষয় পরিষ্কার যে, বিশ্বের কোনো দূরবর্তী বিচ্ছিন্ন অঞ্চলেও মুসলমানরা নিরাপদ না।
ইশতেহার ও হামলার ভিডিওতে কেবল ছোট্ট করে অস্ট্রেলিয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও ফ্রান্স, নরওয়ে, সার্বিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের ডানপন্থী আন্দোলন ও ঘটনাবলীরও উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া অনলাইনে উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মাঝে জনপ্রিয় রসিকতা তো রয়েছেই। মনডন বলেন, এসব দৃষ্টান্ত অস্ট্রেলীয় উগ্রপন্থার নতুন প্রজন্মের পরিচায়ক। এ ধরনের আন্তর্জাতিক উগ্রপন্থা সত্যিকার অর্থে ইন্টারনেটভিত্তিক।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে আপনি যা দেখতে পাচ্ছেন, এরা হলেন সেসব ঘটনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত। অস্ট্রেলিয়ার উগ্রপন্থার আগের গোষ্ঠীগুলোর চেয়ে তারা আরও বেশি সহিংস এবং পার্লামেন্টারি খেলায় তাদের কোনো আগ্রহ নেই। ক্রাইস্টাচার্চে এলোপাতাড়ি গুলি করে এতগুলো লোককে হত্যা করা হলেও তা নিয়ে এ পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি হ্যানসনের ওয়ান ন্যাশন দল। যাই হোক, কুইন্সল্যান্ডের স্বতন্ত্র সিনেটর ফ্রেসার অ্যানিং এক বার্তায় বলেন, মুসলমানরা আজকে সম্ভবত হামলার শিকার। কিন্তু সচরাচর তারা অপরাধী।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, নিউজিল্যান্ডের আজকের রক্তপাতের মূল কারণ অভিবাসী কর্মসূচি। এতে গোঁড়া মুসলমানরা তাদের প্রথম পছন্দের জায়গা নিউজিল্যান্ডে পারি জমাতে পারছেন।
মুসলমানদের ওপর দোষ চাপানো হ্যানসন ও অ্যানিংয়ের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন অস্ট্রেলিয়ার প্রথম মুসলিম নারী সিনেটর মেহরিন ফারুকী। তিনি বলেন, ইসলামবিদ্বেষ ও বর্ণবাদী ঘৃণার এটাই হচ্ছে ফলাফল।
/এসএইচ