অভিষেক-ঐশ্বরিয়ার সংসারের যুগপূর্তি, জানালেন সুখের গোপন রহস্য
সাবেক বিশ্বসুন্দরী ও অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে সুখে সংসার করছেন বলিউডের প্রভাবশালী বচ্চন পরিবারের ছেলে অভিনেতা অভিষেক বচ্চন। আজ এক যুগ পূর্ণ হলো তাদের যুগল জীবনের। ২০০৭ সালের ২০ এপ্রিল বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তারা। চলুন জেনে নেই এই তারকা দম্পতির সুখী সংসারের খুটিনাটি।
যেভাবে প্রপোজ করেছিলেন
সম্পর্কিত খবর
‘গুরু’ ছবি থেকেই তাদের প্রেম শুরু। নিউ ইয়র্কে শুটিংয়ের সময় হোটেলের একটি নির্দিষ্ট ব্যলকনিতে দাঁড়িয়েই ঐশ্বরিযার কথা ভাবতেন অভিষেক। পরে যখন ‘গুরু’র প্রিমিয়রে একসঙ্গে নিউ ইয়র্কে যান, তখন সেই হোটেলের সেই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েই ঐশ্বর্যাকে বলেছিলেন, ‘উইল ইউ ম্যারি মি?’ অবশেষে ২০০৭-এ চার হাত এক হয় এই যুগলের।
বিয়ে
সংক্ষিপ্ত সময়ের প্রেমের পর ২০০৭ সালের ২০ এপ্রিল রাজকীয় আয়োজনে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ঐশ্বরিয়া ও অভিষেক। মুম্বাইয়ে অভি ও অ্যাশের বিয়ের আয়োজন ছিল বলিপাড়ার অন্যতম অভিজাত। বি-টাউনের সবার কাছে সেই আয়োজন স্মরণীয়। সেই বন্ধনের পর ১২ বছর অতিক্রান্ত হলো।
সুখের ঘরের প্রদীপ তাদের কন্যাসন্তান
ঐশ্বরিয়া ও অভিষেকের ঘর আলো করে আছে কন্যাসন্তান আরাধ্যা বচ্চন। বিয়ের যুগপূর্তি উপলক্ষে ঐশ্বরিয়া, অভিষেক ও আরাধ্যা গেছেন মালদ্বীপে। সেখানেই বিশেষ দিনটি উদযাপন করছেন তাঁরা। শুক্রবার গভীর রাতে নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে স্ত্রী ঐশ্বরিয়ার একটি দারুণ ছবি পোস্ট করেছেন অভিষেক বচ্চন। মনে হচ্ছে, এই ছবিটি অভিষেকই তুলেছেন।
ক্যাপশনে অভিষেক লিখেছেন, ‘মধু ও চাঁদ।’ মধুচন্দ্রিমার কথাই স্মরণ করালেন ছোট বচ্চন। কন্যা আরাধ্যাকে নিয়ে নিয়ামা দ্বীপে দারুণ সময় উপভোগ করছেন অভিষেক ও ঐশ্বরিয়া।
সালমান-ঐশ্বরিয়ার পুরোনো প্রেমের ক্ষত কি টিকে আছে আজও?
সালমান খান ও ঐশ্বরিয়া রাই এর বিখ্যাত প্রেম কাহিনীর সূচনা হয় সঞ্জয় লীলা বনসালির ‘হাম দিল দে চুকিহে সানাম’ সিনেমার শুটিং স্পট থেকে। ১৯৯৯-২০০১ সাল পর্যন্ত সালমানকে বিভিন্ন স্থানে দেখা যায় সাবেক এই বিশ্ব সুন্দরীর সঙ্গে। তাদের এই কঠিন প্রেমের পরিনতিও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
সম্পর্কটি ভেঙ্গে যাওয়ার ক্ষেত্রে সালমানের নানা অভিযোগ আর সন্দেহপ্রবন মনোভাবকেই দায়ী করেন ঐশ্বরিয়া। সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার পর সালমানের প্রচন্ড ক্ষোভের মুখে পতিত হন অ্যাশ। এমনকি শাহরুখের সঙ্গে ‘চলতে চলতে’ সিনেমায় অভিনয় করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সালমানের কারনেই তিনি সিনেসাটি কাজ করেননি। সিনেমাটিতে অভিনয় করেন রানী মুখার্জী। অবশ্য ঐশ্বরিয়ার বাবা-মাও এ সম্পর্কের ঘোর বিরোধী ছিলেন।
২০০২ সালে টাইমস অব ইন্ডিায়াকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ঐশ্বরিয়া বলেন, ‘গত মার্চ মাসে আমাদের ব্রেক আপ হয়েছে। ব্রেক আপের পর সালমান আমাকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। আমার সঙ্গে সহঅভিনেতাদের সম্পর্ক আছে বলে দাবী করেছে। তবে আমি অভিষেক থেকে শাহরুখ সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই।’
এর কিছুদিন পর ঐশ্বরিয়াকে দেখা যায় ভিবেক অবেরয়ের সঙ্গে ডেটিং করতে। এতে আবারও ক্ষিপ্ত হয়ে ভিবেককে খুন করার হুমকি দেয়। এর কিছুদিনের মধ্যেই অ্যাশ আবার প্রেমে পড়েন অভিষেক বচ্চনের এবং বিয়ে করে নেন তড়িঘড়ি করে। সালমানের জন্য এটি ছিল সত্যিই অনেক কষ্টের।
ঐশ্বরিয়ার জন্য হীনমন্যতায় ভোগেন অভিষেক!
অসম্ভব রূপবতী স্ত্রীর সামনে নিজের চেহারা নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন বলেই সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী এ তারকা অভিনেতা। করণ জোহরের উপস্থাপনায় কফি উইথ করণ অনুষ্ঠানে একসময় জানিয়েছিলেন অভিষেক বচ্চন।
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটিকে বিয়ে করার পর তাঁর রূপের সামনে নিজের রূপ নিয়ে কোনো রকম হীনমন্যতা কাজ করে কি না জানতে চাইলে অভিষেক সরাসরি কিছু না বলে একটু ঘুরিয়ে-পেঁচিয়েই উত্তর দেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি সে। আমি রোজ আয়নায় নিজেকে দেখি। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখার বিষয়টি আমার কাছে রীতিমতো ভয়ংকর একটি দৃশ্য বলেই মনে হয়।’
অভিষেক আরও বলেন, ‘কাজেই ঐশ্বরিয়ার রূপের সঙ্গে কোনোভাবেই নিজের তুলনা আমি করতে পারি না। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, বাহ্যিক সৌন্দর্যের কারণে আমরা একে অন্যকে জীবনসঙ্গী নির্বাচন করিনি। ব্যক্তিজীবনে সে একেবারেই মাটির মানুষ। তাঁর মতো বন্ধুসুলভ ও বিনয়ী মানুষ খুব কমই আছে।’
অভিষেক-ঐশ্বরিয়ার ভালোবাসার গল্প
তাদের প্রেমের শুরুটা হয়েছিল ২০০৬ সালে। ‘উমরাও জান’ ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন অভিষেক-ঐশ্বরিয়া। এই জুটির বাস্তব জীবনের ভালোবাসার গল্পের শুরুটা হয়েছিল ‘উমরাও জান’ ছবির সেটে। একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সাবেক বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়ায় মুগ্ধ হয়েছিলেন অভিষেক।
অভিষেক জানিয়েছেন, ‘উমরাও জান’ ছবির শুটিং শেষ করে আরেকটি ছবির শুটিং করতে নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে যে হোটেলে তিনি উঠেছিলেন তার বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রায়ই তিনি ঐশ্বরিয়ার কথা ভাবতেন। মনের ক্যানভাসে অ্যাশকে নিয়ে নানা ছবি আঁকতেন। বারান্দায় দাঁড়িয়ে মনের চোখ দিয়ে ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে নিজের বিয়ের দৃশ্যও কল্পনা করতেন অভিষেক।
২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে মুক্তি পায় অভিষেক-ঐশ্বরিয়া জুটির ‘গুরু’ ছবিটি। এর উদ্বোধনী প্রদর্শনীর পর একদিন ঐশ্বরিয়াকে নিয়ে নিউইয়র্কের সেই হোটেল বারান্দায় যান অভিষেক যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি অ্যাশকে নিয়ে নানা স্বপ্ন বুনেছিলেন। সেখানেই প্রিয়তমাকে সারা জীবনের সঙ্গী হওয়ার প্রস্তাব দেন অভিষেক। তাঁর বিয়ের প্রস্তাবে সানন্দেই ইতিবাচক সাড়া দেন ঐশ্বরিয়া। সম্প্রতি এক খবরে এ তথ্য জানিয়েছে ওয়ান ইন্ডিয়া।
২০০৭ সালের ২০ এপ্রিল হিন্দু রীতি অনুযায়ী অভিষেক-ঐশ্বরিয়ার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। তারা ঝলমলে সেই বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল জুহুতে বচ্চনদের প্রতীক্ষা বাসভবনে। ২০১১ সালের ১৬ নভেম্বর একমাত্র মেয়ে আরাধ্য বচ্চনের জন্ম দেন ৪০ বছর বয়সী এ তারকা অভিনেত্রী।
বলিউডের অন্যতম সুখী তারকা দম্পতি হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছেন অভিষেক ও ঐশ্বরিয়া। বলিউডের তারকাদের মধ্যে সুখী দাম্পত্যের উদাহরণ খুব কমই আছে। পরকীয়া, মনের অমিল কিংবা আরও নানা তুচ্ছ কারণে তারকাদের বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। কিন্তু এক্ষেত্রে বিরল দৃষ্টান্তই স্থাপন করেছেন অভিষেক-ঐশ্বরিয়া। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস আর ভালোবাসায় ভর করে এগিয়ে চলেছে তাঁদের সুখী দাম্পত্য জীবন।
নির্দ্বিধায় বলা যায়, এই জুটি প্রমাণ করে দিয়েছেন, তারকারাও সুখে ঘর করতে পারেন।
সুখের ঘরের চাবি কোথায়?
অভিষেক বলেন, সংসার উখের হয় ভালোবাসার চাদরে। অন্যদিকে ঐশ্বরিয়া বলেন, সংসার সুখের হয় বোঝাপড়ায়, আদরে আর বিশ্বাসে। এর সবই আছে এই তারকা দম্পতির ঘরে।
পিবিডি/ ইকা