• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ভাগ্যিস মৃত বন্ধু দেখছে না মমত্বহীন মানুষের নির্লজ্জ ফটো উৎসব: শাহনাজ খুশি

প্রকাশ:  ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:১৪ | আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:১৮
শাহনাজ খুশি

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর মানুষের চেয়ে, সেলফি তোলার মানুষই এখন বেশী। প্রতিবার গেলে, আগের বারের তিক্ত অভিজ্ঞতাকে ছাড়িয়ে যায়। একটা প্রানহীন দেহ সামনে রেখে কিভাবে এ ইচ্ছা হয় তা আমার মাথায় আসে না। খুবই বিব্রতকর এবং সেই সাথে বেদনারও আমার কাছে। শহীদমিনারে যাদের নেয়া হয় তারা কোন না কোন ভাবে শ্রেষ্ঠা স্থানের দাবীদার। কিছু বন্ধু-স্বজন ছাড়া আগত সব মানুষ মোবাইল হাতে নিয়ে একই আবদার। কে মারা গেছে, কেন, কত বয়স, কি হয়েছিল, বিষয়টা তার পরিবারের জন্য কত বেদনার কোনদিক ভ্রুক্ষেপ নাই! শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে বিব্রত আমি তখন চাতক পাখির মত অন্তত একটা মানবিক, শোকাতুর চোখ খুঁজি! শহীদ মিনারে আনা মৃত শ্রেষ্ঠ মানুষটা তখন শুধুই একটা সেলফি ফটোর তোলার আনন্দ ছাড়া কিচ্ছু না!

গত সেপ্টেম্বরে বৃন্দাবনের মা মারা গেলেন, বাবা একই ভাবে তার ৩ বছর আগে। গ্রামে যেহেতু কেউ থাকে না, তাই এলাকার বন্ধুজনদের একটা ফোন করে আমরা রওনা হই। আমার প্রানের গ্রাম চাটমোহরের সব মানুষ কোথায় কি করতে হবে তা নিজ জ্ঞানে করে রাখে, এমনকি মাইকিংসহ সব করে নির্ভার করেছে। অনেক রাত অবধি জংগলের ভেতর সামাধিস্থলে, অন্ধকারে, কুপির আলো হাতে শত শত মানুষ সামাহিত না করা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকেছে। বসার জন্য চেয়ার, হাত পাখা, কলসে করে কলের পানি দিয়েছে। আমাদের চোখের পানির ধারায় শিক্ত হয়েছে তাদের চোখ। আমাদের সৌভাগ্য, আমরা দুজনই দর্শকের অনেক ভালবাসার, নিজ এলাকায় সেটা আরও বেগবান হয়। সেই সাথে আমাদের সাথে ছিল আয়নাবাজীর তুমুল জনপ্রিয়তার পর পরই চঞ্চল চৌধুরী। তিনি সমব্যাথী হয়ে দুইবারই আমাদের সাথে ছিলেন সর্বক্ষণ। পুরা সময়, এমনকি পরদিনও কেউ ফোন নিয়ে কাছে আসেনি। এসেছে সমবেদনা জানাতে, সুবিধা অসুবিধার খোঁজ করতে। এটাই আমার গৌরব করা জন্মস্থান, আমার গ্রাম চাটমোহর।

নাগরিক জীবন কি মানুষের মানবিক জায়গাটাকে কার্পেটে মুড়ে দিয়েছে? বলবার-করবার অথবা যন্ত্রের স্বাধীনতা কি মানুষের সহজাত মমত্ববোধকে গ্রাস করেছে? একটা মোবাইল ফোন কি এতো অচেনা করে ফেলে মানবিক আচরনেণ? তা কেমন করে হয়? এই সব মানুষগুলোর শেঁকড় তো গ্রামেই!

এলোমেলো ভাবনাগুলো (নিয়ে) ব্যথিত আমি খুব সংগোপনে শহীদ মিনার থেকে চলে আসি। বাইরে এসে লম্বা শ্বাস ফেলি এই ভেবে যে, ভাগ্যিস্ মৃত বন্ধুজন কিছু বলতে পারছে না, দেখতে পারছে না এই মমত্বহীন মানুষ গুলো এবং তাদের নির্লজ্জ ফটো উৎসব!!

(শাহনাজ খুশির ফেসবুক থেকে)

পিবিডি/ হাসনাত

শাহনাজ খুশি,আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল,সেলফি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close