• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

নাটকে পেশাদারিত্ব কবে গড়ে উঠবে?

অভিনেতা ম ম মোর্শেদের জীবনে ঘটে যাওয়া বাস্তব গল্প

প্রকাশ:  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:৩০ | আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২৩:৫৭
ম ম মোর্শেদ

সারাদিন শুটিং-বাড়িতে স্ক্রিপ্ট পড়ে, খবর শুনে, গান শুনে আড্ডা দিয়ে স্বাভাবিক-আনন্দে কাটানোর চেষ্টা করলাম। মাঝে একবার বাসায় একা থাকা ছোট বাচ্চাকে দর্শনও দিয়ে এলাম- মা তার অসুস্থ আত্মীয় দর্শনে।

আমার শুটিং না হওয়া, তিন দফায় মেকাপ রুমে শুটিং হবে বলে বাইরে অতিথিদের ভিড়ে বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা- এসব বিরক্তি চলছিল। রাত সাড়ে সাতটার দিকে নিচের প্রধান ফটকের পাশে দাঁড়িয়ে রেডিওর খবর শুনছি- একজন অতিথি বেশ বিরক্ত করল যা সহকারীদের মারফতে পরিচালক জেনেছেন।

রাত নয়টার কিছু আগে ডিরেক্টর (আড়ালে) আমাকে বললেন, সময়ে কুলিয়ে উঠতে পারলাম না, যেভাবে ভেবেছিলাম সেভাবে হল না, আপনার শুটিং করতে পারলাম না।

একবার মনে হচ্ছিল সে বিব্রত আবার মনে হচ্ছিল সে অন্য চিন্তা করছে।

যাই হোক আমিও তাকে পাল্টা শান্তনা দিয়ে এবং সহকারীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রেরিয়ে এলাম। সিঁড়িতে ভাবলাম, পরিচালক তো সম্মানী দিল না বা ঐ ব্যাপারে কোন আলাপ করল না। বেদনা হল। মন বলল- তাঁর সম্মানী দেয়ার ইচ্ছা থাকলে দিত বা একটা কিছু বলত।

ফিরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, সম্মানী? সে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকল, বলল- পরে দিব - কালকে।

মন খারাপ হল আবার।

আমি বললাম, সমস্যা আছে, অল্প হলেও আমার লাগবে।

তিনি বললেন, টাকা আসতে দেরি হবে।

আমি বললাম, অপেক্ষা করি।

আড্ডা দিচ্ছি আরও কয়েকজনের সাথে। যাদের মধ্যে কমপক্ষে চারজন টাকার অপেক্ষায় আছেন রাত ৮টা থেকে, এদের মধ্যে দুইজন স্কুল-শিশু।

কিছু সময় পরে প্রধান সহকারী বললেন, ভাই ৭৮ এবং ৮০ দৃশ্য দু'টি করব নিচে রাস্তায়। আপনি কাইন্ডলি ফরমাল প্যান্ট-শার্ট এবং জুতা পরেন। ডিরেক্টরও একই কথা বললেন।

আমি বললাম, সারাদিন অপেক্ষা করার পরে এখন কি আর অভিনয় হবে! হলেও তা ভাল হবে না। তারচেয়ে সামান্য কিছু দিয়ে দেন চলে যাই।

উভয়ে একই কথা বললেন, আপনি যে মানের অভিনেতা সমস্যা হবে না। চলেন অল্লাহর নামে শুরু করি।

শুটিং শেষ হল রাত সোয়া ১১টার দিকে।

দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। ডিরেক্টরকে আর দেখা গেল না। সহকারীর নিকট টাকা চাইলাম। সে বলল, টাকা নিয়ে ফিন্যান্সার (প্রোডিউসার) আসতেছে।

আমি ক্ষেপে গেলাম, গলা উঁচু হয়ে গেল, বললাম, আমার তো তোমাদের সাথে চুক্তি ছিল রাত ৯টা পর্যন্ত। এখন রাত সাড়ে-এগারটা। এখনও কেন টাকা পথে? প্রোডিউসারের গুষ্টি...।

তারা আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করল, আমি কিছুটা শান্ত হলাম, কিছুটা হলাম না।

কিছুক্ষণ পরে আমার নাম্বারে একটা ফোন এল। আমি 'হ্যালো' বললাম।

ওপাশ থেকে বললেন, হ্যালো... কে?

আমি বললাম, আপনি ফোন দিয়েছেন।

পরে বোঝা গেল তিনি প্রোডিউসার এবং রেগে আছেন। আমার কাছে জানতে চাইলেন, কী হয়েছে?

আমি বললাম, ডিরেক্টর টাকা না দিয়ে বসিযে রেখেছেন।

তিনি বললেন, ডিরেক্টর টাকা পাবে কোথায়? টাকা তো দেয় প্রোডিউসার। অপেক্ষা করেন আমি আসতেছি, টাকা নিয়ে টেনশন কইরেন না। রাত বেশি হলে আপনার বাসায় টাকা পৌঁছে দেব।

আমি বললাম, বেশি রাতে তো আমি টাকা নিতে পারব না।

প্রোডিউসার বললেন, আরে ভাই ঢাকার শহরে জ্যাম ঠেলে আসতে সময লাগে... ইত্যাদি।

পানি খাই, অড্ডা দেই, বাসা থেকে বাচ্চার ফোন, কেয়ার-টেকারের ফোন।

অপেক্ষা... আড্ডা... আবার প্রোডিউসারের ফোন, ভাই আসতেছি, কাছাকাছি চলে আসছি।

আমি বলি, ভাই বদনাম হয়ে গেল তো।

প্রোডিউসার বলেন, এ লাইনে এভাবে বদনাম-সুনাম অনেক হয়। এটা ব্যাপার না... ইত্যাদি।

অত:পর ব্যাজার এবং চিন্তিতমুখে প্রোডিউসারের প্রবেশ। টাকা দেয়া শুরু। আমাকে একটা কাগজে-প্যাঁচানো 'অংক' দিয়ে গেল সহকারী, সম্মানীর অর্ধেকের একটু বেশি ছিল অঙ্কটা।

লেখক: অভিনেতা।

(অভিনেতা ম ম মোর্শেদের ফেসবুক থেকে)।

পিবিডি/ হাসনাত

জীবনের গল্প,ম ম মোর্শেদ,নাটক
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close