• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর সাফল্য

প্রকাশ:  ০৬ আগস্ট ২০১৮, ২১:২১
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী সম্প্রতি পেয়েছেন চমকজাগানিয়া সাফল্য। এই তিন শিক্ষার্থী হলেন- তানিয়াহ্ মাহমুদা তিন্নি, নবনীতা চক্রবর্তী ও প্রিয়াঙ্কা সরকার। আসুন তাদের সাফল্যের গল্প শুনি।

তানিয়াহ্ মাহমুদা তিন্নি

আবেদনের শেষ দিন ছিল ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর। একদিন আগে জানতে পারেন, ভারত সরকার প্রদত্ত ২০১৭-১৮ বর্ষের (আইসিসিআর) শিক্ষাবৃত্তির বিষয়টি। ই-মেইলে আবেদন করেন। বেসিক ইংরেজি টেস্টেও অংশ নেন। সাক্ষাৎকার-পর্বের জন্য উত্তীর্ণ হলেন। সবশেষ নির্বাচিতও হন। স্কলারশিপ পাওয়ার গল্পটা এভাবেই বললেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের তানিয়াহ্ মাহমুদা তিন্নি।

তিন্নি ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর করার সুযোগ পেয়েছেন। পছন্দের বিষয় আর স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ হয়েছে বলেও হাসিমুখে জানালেন। গত বছর বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে অর্জন করেছেন প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান। তিন্নির বাড়ি রাজশাহীর মোহনপুরে। ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি আগ্রহ ছিল। স্কুল-কলেজ পেরিয়ে ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম বর্ষ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। বিতর্কের সঙ্গেও সখ্য গড়ে ওঠে। যুক্ত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক সংগঠন ‘গোল্ড বাংলাদেশ’-এ। ২০১৫ সালে সংগঠনটির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। হল পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় তিনবার সেরা বিতার্কিকের স্থান অর্জন করেন। বিভাগ থেকেও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। বিতর্ক কিংবা একাডেমিক ব্যস্ততার বাইরে বই পড়তে, সিনেমা দেখতে ও গান শুনতে ভালোবাসেন।

শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে বলেন, ভারতে পড়াশোনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেকে পরিচিত করে তুলতে চাই। দেশের জন্য ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে কাজ করতে চাই।

প্রিয়াঙ্কা সরকার

পাঁচ বছর বয়সে নাচের সঙ্গে পরিচয়। টানা দুবছর আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। সাধারণ নৃত্য থেকে শুরু করে ভারত নাট্যম, কত্থক ও লোকনৃত্যে পারদর্শী। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশন ‘রেঞ্জার’-এর বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে ভারতের পুনেতে কর্মশালায় অংশ নেন। তিনি ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভারত সরকার প্রদত্ত শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে স্নাতকোত্তর (নৃত্য) বিভাগে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মনোনীত হন।

পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগে। তার বাড়ি রাজবাড়ী জেলা শহরে। পরিবার আর বড় চাচার সহযোগিতায় নাচের জগতে নিজেকে গড়ে তোলেন প্রিয়াঙ্কা। প্রতি বছর বিভাগের নবীনবরণ ও পয়লা বৈশাখের সব আয়োজনে মঞ্চে থাকতেন প্রিয়াঙ্কা। হলের সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্যমণি ছিলেন। বর্তমানে যুক্ত রাজশাহীর নিক্কণ শিল্পীগোষ্ঠীর সঙ্গে। নাচের তালিম নিয়েছেন নিক্কণের পরিচালক হাসিব পান্না, দীপ্তি গুহ ও আবদুস সাত্তারের কাছ থেকে। ২০১১ সালে ‘ম্যাংগলী নাচ বাংলাদেশ নাচো’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তৃতীয় রাউন্ডে পৌঁছেছিলেন। অংশ নিয়েছিলেন চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে’র আসরেও। অবসর সময় পান না বলে তেমন কিছু করেন না বলেও জানান। তবে নতুন নাচের কোরিওগ্রাফি ও রান্না করতে ভালোবাসেন।

প্রিয়াঙ্কা ভবিষ্যতে দক্ষ নৃত্যশিল্পীর পরিচয় অর্জন করতে চান। তিনি বলেন, দেশীয় সংস্কৃতিকে বিকশিত করতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো করার চেষ্টা থাকবে। পাশাপাশি ভালো নৃত্যশিল্পী তৈরির কাজটাও চালিয়ে যাব।

নবনীতা চক্রবর্তী মায়ের ইচ্ছা আর ভালোবাসায় নাচে হাতেখড়ি। তিন বছর বয়স থেকে নাচের সঙ্গে বসবাস। এরপর স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে নাচের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া। অর্জন করেছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় শিশু সপ্তাহ পুরস্কার, জাতীয় শিশু সপ্তাহ পুরস্কার ও শাপলা কুঁড়ি জাতীয় পুরস্কার। চলতি বছর ভারত সরকার প্রদত্ত ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষাবৃত্তির স্নাতকোত্তর (নাট্য) বিভাগে মনোনীত হয়েছেন। স্নাতকের পাঠ সম্পন্ন করে দ্বিধায় ছিলেন; তবে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগে আনন্দের মাত্রাটা অনেক বেশি বলে জানালেন নবনীতা চক্রবর্তী।

নবনীতার বাড়ি নীলফামারী জেলা শহরে। নৃত্যকে ভালোবেসে ২০১২ সালে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে। ভর্তি হওয়ার পর শাস্ত্রীয় নৃত্যের তালিম নেন। ২০১৫ সালে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় নাচ প্রতিযোগিতায় ক্লাসিক্যাল একক ও দলীয় নৃত্যে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। নৃত্যে হাতেখড়ি দেন গুরু অনিমেষ ঘোষ। বর্তমানে যুক্ত আছেন ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার, ইন্ডিয়া হাইকমিশন ও ঢাকায় অবস্থিত বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদে। কাজ করছেন নৃত্যগুরু লায়লা হাসান ও ওয়ার্দা রিহাবের সঙ্গে। অভিনয় করেছেন শকুন্তলা, জিনিয়াস অ্যান্ড কালচার, মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং ও রক্তকরবী নাটকে। অবসর সময় বই পড়তে ভালো লাগে নবনীতার। ভবিষ্যতে নৃত্যকে নতুনরূপে দেখতে চান। পাশাপাশি নৃত্যকলা নিয়ে সৃষ্টিশীল গবেষণার অগ্রহ প্রকাশ করেন। আর ছুটি কিংবা অবসরে নতুন বই পড়তে ভালো লাগে তার।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close