• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বাণিজ্যমন্ত্রীর সহায়তা কামনা

পুঁজিবাজারের স্বার্থে আইনের সংশোধন চায় বিএপিএলসি

প্রকাশ:  ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:৫৩
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

বর্তমানে বিদ্যমান পরস্পর বিরোধী কিছু আইন ও বিধিমালার কারণে বেশ বিপাকে আছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো। এসব আইনে কিছু অবাস্তব ধারা এবং শর্তও রয়েছে, যেগুলো পরিপালন করা বেশ কঠিন। কিন্তু পরিপালন না করার কারণে কোম্পানিগুলো নন-কমপ্লায়েন্ট থেকে যাচ্ছে। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণে এসব আইন ও বিধিমালার সংশোধনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীর সহায়তা চেয়েছে তালিকাভুক্ত কোম্পনিগুলোর ফোরাম বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি)। খবর: অর্থসূচক।

বুধবার বিএপিএলসির একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে এ সহায়তা চেয়েছে। প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেন বিএপিএলসির প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী। প্রতিনিধি দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন সংগঠনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ. খান, বাংলাদেশ ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ফাইনান্স কোম্পানির চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, হামিদ ফেব্রিক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, এ্যাপেক্স ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার আহমেদ এবং বিএপিএলসির সেক্রেটারি জেনারেল মোঃ আমজাদ হোসেন।

সম্পর্কিত খবর

    বিএপিএলসি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

    বাংলাদেশ ব্যাংক বনাম বিএসইসির আইন

    বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীকে বিএপিএলসির প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী বলেন, সংশ্লিষ্ট কিছু আইন ও বিধিমালার পরস্পর বিরোধিতা ও অসঙ্গতি তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে বেশ নাজুক অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। একটি আইনের শর্ত পরিপালন করতে গেলে অন্য আইনের খেলাপ হয়ে যায়।

    তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধি অনুসারে প্রত্যেকটি ব্যাংকে তিনটি কমিটি থাকতে হয়। এগুলো হচ্ছে- নির্বাহী কমিটি, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটি ও অডিট কমিটি। কিন্তু বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (বিএসইসি) প্রণীত করপোরেট গভর্ন্যান্স কোডে অডিট কমিটি এবং নমিনেশন অ্যান্ড রেমুনারেশন কমিটির কথা বলা হয়েছে। ব্যাংকিং বিধিমালা অনুসারে, পরিচালনা পরিষদ শুধু দুই স্তরের কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও বেতন-ভাতা নির্ধারণ করতে পারে; বাকিদের ক্ষেত্রে সে দায়িত্ব পালন করবে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। তাই করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড-এর শর্ত পরিপালন করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিমালার লংঘন হয়। আবার এটি না করলে করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড এর লংঘন ঘটে। তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো কোন দিকে যাবে?

    কোম্পানি আইন বনাম করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড

    কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ অনুসারে একজন ব্যাক্তির একাধিক কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড অনুসারে একটির বেশি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকার সুযোগ নেই। এই শর্ত পরিপালন করতে গেলে অনেক কোম্পানির পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাবে। কারণ বর্তমানে গ্রুপ অব কোম্পানিজের ক্ষেত্রে একই ব্যাক্তি একাধিক কোম্পানিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। আর প্রতিটি কোম্পানিতে একজন করে সিইও (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) থাকেন। করপোরেট গভর্ন্যান্স কোডের শর্ত অনুসারে যদি প্রতিটি কোম্পানিতে আলাদা এমডি রাখতে হয়, তাহলে এই বাবদ ব্যয় বেড়ে যাবে। তাতে কমবে কোম্পানির মুনাফা, যাতে শেষ পর্যন্ত শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

    ওয়ার্কর্স পার্টিসিপেশন ফান্ড

    শ্রম আইনে ওয়ার্কর্স পার্টিসিপেশন ফান্ডের (ডব্লিউপিএফ) যে শর্ত আরোপ করা হয়েছে, তা অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা কঠিন। কারণ তা বাস্তবসম্মত নয়। বিএপিএলসি প্রেসিডেন্ট বলেন, ডব্লিউপিএফ করা হয়েছিল মূলত শ্রমঘন শিল্পের জন্য, শ্রমিকদের কল্যাণে। বিদ্যমান আইনের শর্ত অনুসারে, প্রতিটি কোম্পানিকে তার মুনাফার ৫ শতাংশ ডব্লিউপিএফে রাখতে হয়, যা শ্রমিকদের মধ্যে বন্টন করার কথা। এই শর্তটি নিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ বেকায়দায় আছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এর আওতায় পড়বেন কি-না তা নিয়ে অনেক দ্বিধা, অস্পষ্টতা; কারণ ব্যাংকের স্টাফরা প্রথাগত অর্থে শ্রমিক নয়।

    অন্যদিকে পুঁজিঘন ও উচ্চ প্রযুক্তির কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রেও ওই শর্তটি বাস্তবসম্মত নয়। যেমন তেল-গ্যাস খাতের একটি কোম্পানির বিনিয়োগের পরিমাণ একটি গার্মেন্টস কারখানার ১০/২০ গুণ। কিন্তু জনবল গার্মেন্টস কারখানার শতভাগের এক ভাগ। এসব কোম্পানিতে অটোমেশন থাকায় যন্ত্রের মাধ্যমেই প্রায় সব কাজ হয়। আর হাতে গোনা কয়েকজন অপারেটর ও টেকনিশিয়ান এসব যন্ত্র পরিচালনা করে থাকেন। এমন অবস্থায় কোম্পানির মুনাফা ৫ শতাংশ ওই ১০/১৫ জনের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হলে তারা এত বেশি পরিমাণ অর্থ পাবেন যে, দেখা যাবে পরদিন থেকে তারা আর কাজেই আসছে না।

    এফবিসিসিআইয়ে প্রতিনিধিত্ব

    বিএপিএলসি প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী বলেন, তারা তালিকাভুক্ত ৩২০টি কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করেন। হিসেবে এফবিসিসিআই এর পরিচালনা পর্ষদে বিএপিএলসির বেশ কয়েকটি মনোনীত পরিচালকের পদ সংরক্ষিত থাকার কথা। কিন্তু সেখানে বিএপিএলসির একটি পদও নেই। এফবিসিআই এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তারা জানিয়েছে, এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়। বিষয়টির সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। কারণ অনেক টেকনিক্যাল বিষয় আছে, যেগুলো তাদের প্রতিনিধি না থাকলে সঠিকভাবে তুলে ধরা সম্ভব নয়।

    যোগাযোগ করলে বিএপিএলসির প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী বলেন, ব্যবসা ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে সমস্যাগুলোর সমাধান হওয়া জরুরি। আমরা বিএসইসিসহ অন্যদের কাছেও সমস্যাগুলো তুলে ধরে সমাধানে সহযোগিতা চেয়েছি। কালকের বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রীকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি বেসরকারি খাতের মানুষ। তাই সহজেই বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছেন। ডব্লিউপিএফের বিষয়ে তিনি শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া অন্য বিষয়গুলোও ইতিবাচকভাবে দেখবেন বলে জানিয়েছেন আমাদের।

    /অ-ভি

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close