কারাগারে কেমন আছেন ‘সেই’ মিতু
স্বামীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার দায় নিয়ে তানজিলা হক চৌধুরী মিতু গত দুই মাস ধরে কারাগারে রয়েছেন। মিতুর একাধিক অনৈতিক সম্পর্ক সইতে নাা পেরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন তার স্বামী চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশ। গ্রেফতারের পর রিমাণ্ড শেষে মিতুকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত রোববার তার পক্ষে তার আইনজীবীরা জামিনের জন্য আবেদন জানান। কিন্তু আদালত তা না মঞ্জুর করেছেন। কাজেই কারাগারের প্রকোষ্ঠেই বন্দি থাকতে হচ্ছে একসময়ের উচ্ছল-প্রাণবন্ত ওই তরুণীকে।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধার আদালতে রোববার তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন তার আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষ এতে বিরোধিতা করে। পরে শুনানি শেষে আদালত মিতুর জামিন না মঞ্জুর করেন।
সম্পর্কিত খবর
নিজ শরীরে বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে গত ৩১ জানুয়ারি আত্মহত্যা করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশ। আত্মহননের আগে আকাশ নিজের ফেসবুক ওয়ালে স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর একাধিক পরকিয়ায় জড়িত থাকার প্রমাণ হিসেবে বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেন। আত্মহত্যার জন্য তিনি স্ত্রী মিতুকে দায়ী করে যান।
ওইদিনই গভীর রাতে নগরের নন্দনকানন এলাকা থেকে মিতুকে তার খালাতো ভাইয়ের বাসা থেকে গ্রেফতার করে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। পরে আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে মিতুসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। সেই থেকে কারাগারে রয়েছেন মিতু।
কারাগারে পাঠানোর আগে আদালতের অনুমতিতেতিন দিনের রিমাণ্ডে মিতুকে নিয়ে জিজ্ঞাসবাদ করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে বিয়ের আগে ও পরে একাধিক বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়টি স্বীকার করেন নেন তিনি। এদের মধ্যে তিনি শারীরীক সম্পর্ক গড়ে তোলেন দেশে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ডা. মাহাবুবুল আলম ও চুয়েটের শিক্ষার্থী শোভন আহমেদের সঙ্গে, আর পড়াশোনার জন্য আমেরিকায় অবস্থানকালে উত্তম প্যাটেল নামে ভারতীয় এক বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে দৈহিক বিনোদেনে মেতে ওঠেন বলে জানান তানজিলা হক চৌধুরী মিতু। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চান্দগাঁও থানার এসআই আবদুল কাদের জিজ্ঞাসাবাদে মিতুর সব কিছু স্বীকার করে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় আসামী ছয়জন। এদের মধ্যে মিতুকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার অপর ৫ আসামির মধ্যে দেশে অবস্থান করা মিতুর বাবা আনিসুল হক চৌধুরী অসুস্থ থাকায় উচ্চ আদালাত থেকে জামিন পেয়েছেন, আর মিতুর বয়ফ্রেন্ড ডা. মাহাবুবুল আলম দেশেই গা ঢাকা দিয়ে আছেন। তাকে গ্রেফতারে রচেষ্টা চলছে। মামলার অপর তিন আসামী মিতুর মা শামীমা শেলী, ছোট বোন সানজিলা হক চৌধুরী আলিশা এবং উত্তম প্যাটেল আমেরিকায় অবস্থান করছেন বলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রিমাণ্ডে জিজ্ঞাসবাদ শেষে তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে আদালতের নির্দেশে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি ওই কারাগারের মহিলা ওয়ার্ডে বন্দি আছেন। কারাগারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বহুপুরুষে আসক্ত মিতু ওয়ার্ডের অন্যসব নারী বন্দিদের সঙ্গে খুববেশি কথাবার্তা ও মেলামেশা করেন না। গত দুইমাস ধরে তিনি তাদের কারো সঙ্গে সহজ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেননি। একসময়ের ফুর্তিবাজ মিতু কারাগারে বেশিরভাগ সময় চুপচাপ একা একা থাকেন। তিনি এখন নিয়মিত নামাজ পড়েন। কারাকৃর্তপক্ষের অনুমতিক্রমে তাকে বই পড়ারও সুযোগও দেওয়াা হয়েছে। মিতুর বিত্তশালী আত্মীয়স্বজনরা নিয়মিত তার খোঁজখবর নেয় বলে কারাগার সূত্রে জানা গেছে।
তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর জামিন চেয়ে গত রোববার আদালতে আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। মিতু খুব আশাবাদী ছিলে, তিনি জামিন পাচ্ছেন। তার আইনজীবী তাকে বলেছিল, প্ররোচনার মামলায় আসামীদের দুইমাসের বেশি কারাগারে রাখা হয় না। কারাগার সূত্রে জানা গেছে, আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করে দেওয়ার খবর পাওয়ার পর মিতু খুব বিমর্ষ হয়ে পড়েন। তাকে কান্নাকাটি দেখেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন কারারক্ষিরা।
পিবিডি-এনই