ওবায়দুল কাদের দেশে ফিরছেন শিগগিরই
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শিগগিরই দেশে ফিরছেন ।বর্তমানে তার অবস্থা অনেকটাই ভাল বলে জানা গেছে ।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে এমনটাই জানালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক।
সম্পর্কিত খবর
বিএসএমএমইউ'র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য অধ্যাপক ডা. হারিসুল হককে সেখানে পাঠান। অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক গত ১০ এপ্রিল সিঙ্গাপুরে যান এবং দেশে ফিরে আসেন ১৪ এপ্রিল।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক জানান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বর্তমানে হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা ভালো। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। তিনি নিয়মিত (দুইবেলা) হাঁটাচলা করছেন। ১৬ এপ্রিল তার চিকিৎসার বিষয়ে একটি ফলোআপ রয়েছে। তারপরই সিদ্ধান্ত হবে তিনি কবে দেশে ফিরবেন। বর্তমানে তার দেশে ফেরার মতো অবস্থা রয়েছে। তবে তার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের ডোজের অ্যাডজাসমেন্ট বা ওষুধের সঠিক ডোজ নিরূপণের জন্য আরো কিছুদিন সিঙ্গাপুরে থাকা প্রয়োজন এবং সে কারণেই বর্তমানে মন্ত্রী সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ও নিউরো মেডিসিনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী বিএসএমএমইউ'র পক্ষ থেকে মন্ত্রীর সঙ্গেই সিঙ্গাপুরে যান এবং বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুরেই অবস্থান করছেন। প্রয়োজন হলে তিনিও আবার সিঙ্গাপুরে যাবেন।
দেশবাসীকে ওবায়দুল কাদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুভ নববর্ষ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি নিজেই এ বিষয়ে একটি শুভেচ্ছা বাণী লেখেন। তার হাতের লেখা খুবই সুন্দর। ভাষাগত দক্ষতাও মুগ্ধ করার মতো। অবাক করার মতো বিষয় হলো বাংলাদেশ থেকে কেউ গেলে উল্টো তিনিই তাদের খোজ-খবর রাখছেন। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া হলো কিনা, কোনো সমস্যা আছে কিনা, পছন্দের খাবার কি কি ইত্যাদি ইত্যাদি।
অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক বলেন, আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করলাম, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কথা-বার্তায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অবিচল আস্থা, অকৃত্রিম ও অসীম ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার প্রকাশ ঘটেছে। আওয়ামী লীগের জন্য এমন নিবেদিত প্রাণ নেতা সত্যিই বিরল।
মন্ত্রণালয়ের কাজের ব্যাপারেও তার নজর রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে সিঙ্গুপরে অবস্থান করলেও দেশের মাটিতেই তার মন পড়ে আছে। কোন সড়কের উন্নয়ন কাজ কবে শেষ করতে হবে, কোন কোন ব্রিজের কাজ কবে শেষ হবে এসবই তার মুখস্ত। তিনি অসম্ভব মেধাবী ও শক্তিশালী মনোভাবের অধিকারী। একইসঙ্গে তিনি বিরাট মন ও হৃদয়েরও অধিকারী। সিঙ্গাপুরে যেনো সব মানুষই তার আপনজন। আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মীই তার বড় প্রিয় আপন মানুষ।
তিনি আরও জানান, দেশের সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়েও খোঁজ-খবর রাখছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। সাম্প্রতিক একটি ঘটনার বিষয়ে তিনি উল্লেখ করে বলেন, অপরাধীদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না। বর্তমান সরকার অপরাধীদের বিষয়ে কোনো ছাড় দেবে না। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
উল্লেখ্য,গত ৩ মার্চ ভোররাতে ঢাকায় নিজ বাড়িতে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ওবায়দুল কাদের। সেখানে দ্রুত এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীতে তিনটি বড় ব্লক ধরা পড়ে। এরমধ্যে একটি ব্লক স্টেন্টিংয়ের (রিং পরানো) মাধ্যমে দ্রুত অপসারণ করেন চিকিৎসকরা। তাকে দেখতে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ডেকে পাঠানোয় পরের দিন ঢাকায় উড়ে আসেন ভারতের প্রখ্যাত চিকিৎসক দেবী শেঠী। তারই পরামর্শে ও অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে ৪ মার্চ বিকেলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
সে রাতেই একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসা শুরু করেন মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
গত ২০ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ওবায়দুল কাদেরের বাইপাস সার্জারি সম্পন্ন হয়। সার্জারি করবেন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিনিয়র সদস্য কার্ডিওথোরাসিক সার্জন ডা. সিবাস্টিন কুমার সামি। ডা. ফিলিপ কোহে এই চিকিৎসা বোর্ডের নেতৃত্বে ছিলেন। এখনো ওই চিকিৎসকের কাছে নিয়মিত যাওয়া আসা করছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ।
পিবিডি/জিএম