• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

শবে বরাত: গুনাহ থেকে পরিত্রাণের রাত্রি

প্রকাশ:  ২০ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:০৬ | আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:১৩
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক:

আরবিতে শবে বরাতকে বলা হয় ‘লাইলাতুল বারাআত’। যার অর্থ মুক্তির রাত, ক্ষমার রাত বা পাপমোচনের রাত। বিশ্বের মুসলিম ধর্মপ্রাণ মানুষেরা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এই রাতে ইবাদত বন্দেগি করে কাটিয়ে দেন। মুসলমানদের অন্যতম অনুসরণীয় ধর্মগ্রন্থ হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, এই রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসলমানদের গুনাহ থেকে পরিত্রাণ দেন।

হিজরি বর্ষ অনুযায়ী শাবান মাসের ১৪ তারিখে দিবাগত রাত শবে বরাতের রাত। সেই হিসেবে রোববার (২১ এপ্রিল) দিবাগত রাতে সারা দেশে পবিত্র শবে বরাত পালিত হতে চলেছে।

ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিশ্বাস করে, এই দিবস ও রজনী আল্লাহর পক্ষ থেকে হজরত মোহাম্মদ (স.)-কে দেওয়া বিশেষ উপহার। শবে বরাতের রাতের গুরুত্ব বর্ণনা করে প্রিয় নবী করিম (স.) ইরশাদ করেছেন, “যখন শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত আগমন করবে, তখন তোমরা রাত্রি জাগরণ করো এবং দিনে রোজা পালন করো। কেননা আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পৃথিবীর প্রথম আসমানে নেমে আসেন। কিন্তু শাবানের এ রাতে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই মহান আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে আগমন করে তার বান্দাদের সম্বোধন করে বলতে থাকেন, কে আছো ক্ষমা প্রার্থনাকারী? আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। কে আছো রিজিক অনুসন্ধানকারী? আমি তাকে রিজিক প্রদান করবো। কে আছো বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে বিপদ মুক্ত করে দেবো। এমনিভাবে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদের আহবান করতে থাকেন।” (সুনানে ইবনে মাজাহ)।

শবে বরাতে করণীয়ঃ

যদিও শবে বরাতের নির্দিষ্ট কোনো আমল নেই তবে বিভিন্ন হাদিস থেকে পবিত্র শবে বরাতে আমাদের করণীয় ও ফজিলত সম্পর্কে জানা গেছে। শবে বরাতের এ রাতে গোসল করা মোস্তাহাব, গোসলের পর দুরাকাত তাহিয়াতুল অজুর নামাজ, অতঃপর দুরাকাতের নিয়তে প্রত্যেক রাকাতে আলহামদু (সুরা ফাতিহা) সুরা ইখলাছ সহকারে ৮ রাকাত নামাজ পড়তে হয় বলে বর্ণিত আছে। আরও দুই রাকাত নামাজ আছে, যিনি পড়বেন তাকে আল্লাহ তায়ালা তিনটি পুরস্কার দেবেন। ক. রিজিক বাড়িয়ে দেবেন। খ. দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করবেন। গ. গুনাহ মাফ করবেন। এছাড়া এদিন রোজা রেখে ইবাদত করা উত্তম। এই রাতে যাবতীয় গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। কোরআন তিলাওয়াত করতে হবে। রিজিকের জন্য দোয়া করতে হবে। তওবা করতে হবে। উভয় জাহানের কল্যাণ কামনা করতে হবে। নফল নামাজ পড়তে হবে। কবর জিয়ারত করতে হবে। আল্লাহর রহমত কামনা করতে হবে।

শবে বরাতে বর্জনীয়ঃ

আমাদের দেশে শবে বরাতের রাতে এমন কিছু কর্মকাÐ প্রচলিত আছে, যা সম্পূর্ণ শরিয়তবিরোধী। আতশবাজি, পটকা ফোটানো, অপ্রয়োজনে ঘর-বাড়ি, দোকান, মসজিদ আলোকসজ্জা, হালুয়া রুটি এ রাতেই বানাতে হবে- এমন ধারণা দূর করতে হবে। শরিয়তে এসব কাজের কোনো ভিত্তি নেই। মহিলারা নামাজ, জিকির, তিলাওয়াত ইত্যাদি ছেড়ে দিয়ে হালুয়া-রুটি বানানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে যান। যেন হালুয়া-রুটি ছাড়া শবে বরাতের ইবাদত কবুলই হবে না। এমন চিন্তা-ভাবনা দূর করতে হবে।

মুসলিম হিসেবে শবে বরাতের এই বিশেষ দিনটিকে নিজেদের পাপ মোচনের জন্য কাজে লাগিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। আসুন আমরা সকলে আল্লাহ প্রদত্ত এই বিশেষ দিনটি কাজে লাগাই। নিজেদের যাবতীয় পাপ কাজের জন্য আল্লাহ তা য়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও অপরিসীম দয়ালু। তিনি আমাদের সবাইকে যথাযথভাবে শবে বরাতের রহমত ও বরকত হাসিল করার তাওফিক দিন। আমিন!

শবে বরাত
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close