সাক্ষাৎকার
‘অভিনয় একটা শিল্প, এখানে আসতে হলে প্রস্তুতি জরুরি’
দর্শকপ্রিয় অভিনেতা আজিজুল হাকিম। ছাত্রাবস্থা থেকেই অভিনয় শুরু তার। শুরুতেই আরণ্যক নাট্য দলের সদস্য ছিলেন। মঞ্চ বা টেলিভিশন, চলচ্চিত্র সব মাধ্যমেই ছিল তার দাপুটে পদাচারণা। যায় যায় দিন (১৯৯৪),সাংস্কৃতিক পরিচালক সমিতি (২০০১, ২০০২, ২০০৩), বাংলাদেশ টেলিভিশন সাংবাদিক সমিতি (২০০২), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সাংবাদিক ফোরাম (২০০৩) সহ আরও অসংখ্য পুরস্কার রয়েছে তার ঝুলিতে। সম্প্রতি র্প্বূপশ্চিমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তার অভিনয় জীবনের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
সম্পর্কিত খবর
অভিনয়ের শুরু-
আজিজুল হাকিম: ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করতাম। স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নিতাম। এরপর আরণ্যক নাট্য দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মঞ্চে কাজ শুরু করি। এভাবেই অভিনয় জীবনের শুরু হয়।
মজার স্মৃতি-
আজিজুল হাকিম: আমার প্রথম মঞ্চ নাটকটাই ছিল আমার জন্য খুবই মজার। ওই নাটকটার নাম ছিল ‘ওরা কদম আলি’। যেহেতু এটাই আমার প্রথম সুযোগ ছিল তাই এই স্মৃতিটা আমাকে এখনও আনন্দ দেই। মজার ব্যাপার হলো নাটকে আমার চরিত্রটা ছিল একটু অন্যরকম। আমার বয়সের তুলনায় বেশি বয়সের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছিল। আমার বয়স কম ছিল কিন্তু আমাকে একজন বৃদ্ধেও চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। এই চরিত্রটার কথা আমার এখনও খুব মনে পড়ে। এছাড়া আমার প্রথম টেলিভিশন নাটক ‘এখানে নোঙর’ এ আমি মোতাব্বির চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। এই চরিত্রটার কথাও আমার প্রায় মনে পড়ে।
অভিনয়ের টার্নিং পয়েন্ট
আজিজুল হাকিম: আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ‘ কোন কাননের ফুল’ নাটকের চরিত্রটি। এতে আমার চরিত্রের নাম ছিল ‘ওলি’। নাটকটি দর্শকদের কাছে এতটাই প্রিয় হয়েছিল যে মানুষ আমাকে ওই নামেই ডাকতে শুরু করে। অনেকে আমাকে ওলি নামেই চিনতো।
অভিনেতা না হলে-
আজিজুল হাকিম: একজীবনে তো মানুষের অনেক স্বপ্ন থাকে। আমার স্বপ্ন ছিল ফুটবল নিয়ে। আমি ফুটবলার ছিলাম। ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের প্রথম বিভাগ ফুটবলও খেলেছি। তাই অভিনয়ে না এলে হয়তো ফুটবলারই হতাম। এখনও ফুটবল দেখি। আমার প্রিয় দল জার্মানি এবং প্রিয় খেলোয়াড় পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
অবসর...
আজিজুল হাকিম: বই আমার প্রিয় সঙ্গী। আমি প্রচুর বই পড়ি। যে কোনো ধরনের লেখায় আমার পড়তে ভালো লাগে। এছাড়া গানও শুনি। আর এখন যেটা বেশি করি তা হলো পরিবারকে সময় দেই। ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে সময় কাটানোটা বেশ উপভোগ করি।
প্রিয় লেখক
আজিজুল হাকিম: আমি কিন্তু সব ধরনের লেখায় পড়ি। ভ্রমণ, প্রবন্ধ, উপন্যাস, গল্প, কবিতা সব ধরনেই লেখা আমার ভালো লাগে। আমি আসলে জানার জন্য পড়ি। তাই আমার প্রিয় লেখকদের তালিকা বেশ বড়। তবে এই মুহূর্তে আমি হরিশংকর জলদাসের লেখা বেশি পড়ছি। এছাড়া হাসান আজিজুল হক, সৈয়দ শামসুল হক, শাহাদুজ্জামানের লেখাও আমার খুব প্রিয়।
নতুনদের জন্য পরামর্শ
আজিজুল হাকিম: যে কোনো কাজ শুরুর আগে প্রয়োজন প্রস্তুতি। হঠাৎ করে কিছু করা সম্ভব নয় বা সেটা দীর্ঘস্থায়ীও হয় না। অভিনয়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাই নতুন যারা অভিনয় শুরু করতে চান তাদের জন্য আমার পরামর্শ- অভিনয় একটা শিল্প, এই শিল্পে কাজ করতে হলে প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হবে। কারণ অভিনয়েরও কিছু ব্যাকরণ আছে, যেগুলো জানা এবং শেখ খুব জরুরি। এছাড়া একটি চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে কিছু কৌশলও জানতে হয়। সেজন্য অভিনয় শুরুর আগে বা যার অভিনয় করছেন সবাইকেই এসব বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে।
প্রিয় মানুষ-
আজিজুল হাকিম: আমার পরিবারের লোকরাই আমার সবচেয়ে প্রিয়। আমার বাবা-মা, স্ত্রী, ছেলে, কন্যা এরাই তো আমার সবচেয়ে পছন্দের মানুষ। আমার স্ত্রীর পরিবারের মানুষরাও আমার পরিবারের অংশ। তারাও আমার প্রিয় মানুষ।
কাজের অনুপ্রেরণা
আজিজুল হাকিম: আমার বাবা আমাকে বেশি অনুপ্রাণিত করেছেন। আমার বাবা সবসময় আমাকে বলত, তুমি যে কাজটা করছ সেটা খুব মনোযোগ দিয়ে কর। পরবর্তীতে আমার স্ত্রী আমাকে অনুপ্রেরণা দিত। সে নিজে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত ছিল। তার অনুপ্রেরণা আমাকে আমাকে খুব সাহায্য করত।
কোনো রিউমার-
আজিজুল হাকিম: আমাকে নিয়ে কোনো রিউমার ছিল বলে মনে পড়ে না।
অপ্রাপ্তি...
আজিজুল হাকিম: সৃজনশীল কাজ যারা করেন তাদের সবার কিন্তু কিছু না কিছু অপ্রাপ্তি থাকেই। এই যেমন একটা কাজ শেষ করার পরে মনে হয় ওটা হয়তো আরেকটু ভালো করতে পারতাম। সৃজনশীল জগতের মানুষদের এই অপ্রাপ্তি সবসময় থাকে, আমারও ছিল, এখনও আছে।