• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

অন্ধকার শেষে সূর্যোদয় দেখতে চায় মানুষ

প্রকাশ:  ০৩ জানুয়ারি ২০১৮, ০০:৪৬ | আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০১৮, ০০:৪৯
পীর হাবিবুর রহমান

অশান্ত বিশ্ব রাজনীতির চিত্রপট পেছনে রেখে বাইরের দুনিয়া আতশবাজির উল্লাসে ইংরেজি নববর্ষকে বরণ করেছে। বাংলাদেশেও বিদায়ী বছর ছিল সরকারের নিরঙ্কুশ রাজনৈতিক কর্তৃত্ব বহাল রাখার বছর। সরকারকে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তির গণআন্দোলন দূরে থাক, মৃদুমন্দ ঝড়-বাতাসের মুখেও পড়তে হয়নি। তবে জনগণকে পোহাতে হয়েছে লাগামহীন চালের অগ্নিমূল্য। পিয়াজের দামের ঝাঁজে মানুষের চোখে পানি এসে গেছে। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষিতার আর্তনাদ বাতাসে ভেসে বেড়িয়েছে। ঘরে না ফিরে আসা পর্যন্ত নিখোঁজ নাগরিকদের পরিবারের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। রোবটমানবী সোফিয়া আলোচনায় এসেছে।

দ্রব্যমূল্য নিয়ে তোপখানা থেকে পল্টনের বাম দলগুলো আধাবেলার হরতাল করেছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এতে কান দেয়নি। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রগতির চিত্র দেখে বাইরের দুনিয়া বিস্ময়ভরা চোখ নিয়ে প্রশংসা করেছে। পদ্মা সেতুর উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাপক হয়েছে। তাই বলে থেমে থাকেনি দুর্নীতি। ব্যাংকপাড়ায় অস্থিরতার দেউলিয়াত্ব চরম আকারে দেখা গেছে।

সম্পর্কিত খবর

    একে একে সব ব্যাংক এক ব্যক্তির হাতে চলে যেতে দেখা গেছে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিদায় ঘিরে রাজনীতিতে বিতর্কের ঝড় ছিল। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের আলামতও কম দেখা যায়নি। বার্মার সামরিক জান্তার গণহত্যা, উচ্ছেদ, অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপকহারে গণধর্ষণের মুখে ৮ লাখ শরণার্থী আমাদের মানবিক হৃদয়ে আশ্রয় নিয়েছে, রাষ্ট্রীয় বোঝা হয়ে। ব্যাংকপাড়া অশান্ত হলেও শেয়ারবাজার ঘিরে বড় ধরনের অঘটন ঘটেনি। নতুন বছরে শেয়ারবাজার যেন লুটেরাদের হাতে না চলে যায়, এটাই মানুষের আকুতি।

    একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতে সংস্কার, অনিয়ম দূর ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা মানুষের চাওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় গভর্নর ভদ্র-বিনয়ী ও সত্মানুষ ড. আতিউর রহমানের পদত্যাগ ছাড়া জাতির জীবনে কোনো প্রাপ্তি যোগ হয়নি। ভিতরের এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের মুখোশ উন্মোচন হয়নি। দুদক অনেক সক্রিয় ও বড় বড় ব্যাংক লুটেরাকে তলব করলেও এখনো ঘাড় ধরতে পারেনি। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মানবসৃষ্ট দুর্বলতার সুযোগে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টি হাওরের বিস্তীর্ণ ফসল ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কৃষকের বুক ভেঙে দিয়েছে। বন্যার কারণেও কৃষকের ঘরবাড়ি ও ফসল গেছে। বিদায়ী বছরের মতো নতুন বছরেও শেয়ারবাজার ঘিরে উৎকণ্ঠা থেকেই গেল। কারণ শেয়ার লুটেরাদের শেয়ারবাজারে নিষিদ্ধ দূরে থাক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। বিদায়ী বছরও ছিল প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য জাতির জীবনে লজ্জা ও বেদনার। প্রাথমিক পর্যায়েও প্রশ্নপত্র ফাঁস শিক্ষাব্যবস্থার দেউলিয়াত্ব দৃশ্যমান করেছে।

    এককালের গণবিচ্ছিন্ন কমিউনিস্ট ও গণফোরাম করে আসা আওয়ামী লীগের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বছরের শেষে এসে অফিসারদের সহনীয় ঘুষ খাওয়ার পরামর্শই দেননি, অফিসার ও মন্ত্রীদের চোর বলেছেন। ক্ষমতার মোহ এতটাই বেশি যে, ব্যর্থতার বোঝা ও গ্লানি মাথায় নিয়ে এত বড় বেফাঁস মন্তব্য করেও পদত্যাগ করতে পারেননি। একেকজন অপদার্থ ও ব্যক্তিত্বহীন বিতর্কিত মন্ত্রী-এমপি ও নেতা দলের জনপ্রিয়তা তলানিতে নিয়ে যাচ্ছেন। আর আওয়ামী লীগ স্বপ্ন দেখছে শেখ হাসিনার ব্যক্তি ইমেজ ও তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ওপর ভর করে গণরায়ে আবার ক্ষমতায় ফিরবে। রাজনীতি-অর্থনীতি ও সমাজের নানা চালচিত্র একটি ক্যানভাসে যুক্ত করলে মনে হয়, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলের এই বোঝা কীভাবে টানবেন? রাষ্ট্র পরিচালনাই শুধু তার দায়িত্ব নয়, দলের ব্যর্থ ও বিতর্কিতদের পাপের বোঝাও যেন তাকেই টানতে হবে। কারও কারও ভাব দেখলে এমনটাই মনে হয়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার টিম নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করছেন দলের জন্য। বিতর্কিত নেতা-কর্মীদের আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে হামেশাই আকুতি জানাচ্ছেন।

    তবু যেন চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। নতুন বছর ২০১৮ সাল বিশ্বরাজনীতিকে অশান্ত রেখে আমাদের রাজনৈতিক জীবনে সমঝোতার দরজা বন্ধ রেখে ভোট রাজনীতির স্বপ্ন নিয়ে এসেছে। বিদায়ী বছরের শেষ ছিল রংপুরের গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ সিটি করপোরেশনের ভোট উৎসব। নতুন বছর ২০১৮ সাল দেশবাসীর সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর্দা উন্মোচন করে এসেছে। বছরের শুরুতেই ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে উপনির্বাচন হতে যাচ্ছে। সরকারি দলের সবুজ সংকেত নিয়ে বিজিএমইএর সাবেক প্রেসিডেন্ট আতিকুল ইসলাম ব্যাপক জনসংযোগে নেমেছেন। বিএনপির জনপ্রিয় প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ভোট করবেন এটিই চূড়ান্ত। তবে তিনি এখনো মাঠে নামেননি। অকালপ্রয়াত আনিসুল হকের শূন্য আসনের উপনির্বাচনে কে হাসবেন শেষ হাসি— তা দেখতে এখনো অনেক বাকি।

    নতুন বছরের মাঝামাঝি দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকেও থাকবে সবার দৃষ্টি। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হবে এ বছর। সব মহলে আস্থা ও মানুষের ভালোবাসা নিয়ে তৃণমূল রাজনীতি থেকে উঠে আসা এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ সাফল্যের সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকেই আবার রাষ্ট্রপতি করা হবে, নাকি নতুন কাউকে নির্বাচিত করা হবে সেদিকেই সবার দৃষ্টি। প্রধান বিচারপতির পদটিও এখন শূন্য। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দিয়ে বিচার বিভাগ চালানো সঠিক নয় বলে অনেকেই মনে করেন। এ ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগদানও এ বছর ঘটবে বলে আলোচনা রয়েছে। সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থীদের বিপুল ভোটে পরাজিত করে বিএনপির আনকোরা প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন। বিজয়ী হয়ে নানা মামলায় দীর্ঘদিন তারা জেল খেটেছেন।

    উচ্চ আদালতের নির্দেশে তারা তাদের দায়িত্বই ফিরে পাননি, সঙ্গে পেয়েছেন তাদের ভোটারদের সহানুভূতি। এসব সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির অনিবার্য লড়াইয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে জনমত কোন দিকে, তা দৃশ্যমান হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সব সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো শেখ হাসিনা এগুলোও সুষুম-নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করবেন। অংশগ্রহণমূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এসব নির্বাচনের পথ ধরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরে হতে যাচ্ছে। বছরের শুরুতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষিত হওয়ার কথা। পর্যবেক্ষকরাই নন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরাই নন, সরকার ও বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে তাতে এমন আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে, এ রায়ে খালেদা জিয়া দণ্ডিত হয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হতে পারেন।

    এমনটি হলে তার দল বিএনপি তাকে ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা— এ প্রশ্নও যুক্ত হচ্ছে। এতদিন বিদায়ী বছরে সরকার যেমন বলছে, সংবিধান থেকে একচুল নড়বে না। শেখ হাসিনার অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন হবে। তেমনি বিএনপিও বলেছে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না। গ্রহণযোগ্য বা নির্দলীয় অথবা সহায়ক সরকারের অধীনে তারা নির্বাচন চায়। বিএনপি মহাসচিব যেমন বলেছেন, নতুন বছর হবে খালেদা জিয়া ও বিএনপির। তেমনি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তারা যত কথাই বলুন তা শুধু চাপ সৃষ্টির জন্য বলবেন। কিন্তু এবার বিএনপি নির্বাচন থেকে বাইরে থাকবে না। জাতীয় নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ ও সেই নির্বাচনে গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের আকুতি রয়েছে। কিন্তু ইংরেজি নববর্ষের শুরুতেও এই জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আশা-নিরাশা রয়েছে। স্বপ্ন আছে, স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনার আশঙ্কাও আছে। এ বছর হবে ঘটনাবহুল ও তাৎপর্যপূর্ণ। বিগত নয় বছরে আওয়ামী লীগের জন্য যে সুসময় বিরাজ করছে তার জন্মের ৬৭ বছরের ইতিহাসে এমন সুদিন আসেনি। তেমনি সেনা শাসননির্ভর ক্ষমতা থেকে জন্ম নেওয়া বিএনপি ও তাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবনেও এমন দুঃসময় আসেনি। আওয়ামী লীগ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা, জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ পালন ও স্বাধীনতার হাফ সেঞ্চুরি উৎসব পালনের জন্য আরেক দফা ক্ষমতায় আসতে চায় এই নির্বাচনে। তেমনি ক্ষমতার বাইরে থেকে প্রথমে ওয়ান-ইলেভেনের সেনা সমর্থিত সরকার ও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ জোট সরকারের দমন-পীড়নের মুখে পতিত ১১ বছরের যাতনা বিএনপির জন্য দুঃসহ হয়ে উঠেছে। তারা মোটা দাগে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশটুকু চায়।

    বিএনপি মনে করে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলেই তারা ক্ষমতায় ফিরবে। কারণ জনমত তাদের অনুকূলে। সরকারপক্ষ মনে করে, গণরায় নিয়ে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসতে না পারলে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে তাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অর্জনই শেষ হবে না, দেশে ভয়ঙ্কর প্রতিহিংসার রাজনীতির পুনরুত্থান ঘটবে। অতএব বিএনপি নয়, তাদেরই আবার ক্ষমতায় ফিরতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন রক্ষার জন্যই নয়, রাজনীতির অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে দরকষাকষির পথে ভোটযুদ্ধে বিএনপিকে আসতে হবে এমনটা সরকারি মহলই নয়, পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, বেগম খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ। নিজের ও দলের নেতা-কর্মীদের মামলা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং নির্বাসিত পুত্র তারেক রহমানকে নিয়ে উৎকণ্ঠিত থাকলেও তিনি তার আপসহীন ইমেজ রক্ষায় অটল থাকবেন। অর্থাৎ শেখ হাসিনার অধীনে তিনি নির্বাচনে যাবেন না। তিনি মনে করেন সময় যত ঘনিয়ে আসবে পরিবেশ তত তাদের অনুকূলে যাবে। রাজনীতিতে হরেকরকম কথাবার্তা বাতাসে ওড়ে। এমন একটি কথাও বাজারে রয়েছে যে, সরকার বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের অসংখ্য নেতা মামলায় জর্জরিত ও নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হলে বিএনপি যখন নির্বাচন বর্জনের ডাক দেবে তখন খণ্ডিত বিএনপির একটি অংশকে নির্বাচনমুখী করে দেবে। এ ক্ষেত্রে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ ও তার জাতীয় পার্টিকে মাঝখানে রাখা হয়েছে। কৌশলগত কারণে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে তখন বিরোধী দলে ঠেলে দেওয়া হবে।

    বিএনপির একটি অংশকে এনে তিন নম্বর দল হিসেবে সংসদে যেমন ঠাঁই দেবে তেমনি সরকারিভাবে বিএনপির শক্তিক্ষয় ঘটাবে। জেল-দণ্ড, হতাশা অবসাদে বিএনপি হয়ে উঠবে আরও বেশি ভঙ্গুর বিপর্যয়-বিপর্যস্ত। আন্দোলন দূরে থাক কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না। কেউ কেউ মনে করেন, বিএনপি অতীতে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হলেও এবার নির্বাচনের বাইরে রাখতে গেলে তারাও প্রতিরোধের মরণ কামড় দেবে। নেপথ্যে তাদের সঙ্গে শক্তি জোগাবে জামায়াত। তখন রাজনীতিতে সংঘাত দৃশ্যমান হয়ে উঠবে নির্বাচন ঘিরে। নতুন বছরের শুরুতেও রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় থাকা বিএনপি যতটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ঠিক তার বিপরীতে দলীয় ইতিহাসে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ প্রবল আত্মবিশ্বাসী নয়, আত্মঅংহকারে তুলছে তৃপ্তির ঢেঁকুর। এমনি অবস্থায় জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সব দলের অংশগ্রহণে ভোটের রাজনীতি উৎসবমুখর হয়ে উঠবে, নাকি অনিবার্য সংঘাতের পরিণতির দিকে যাবে— সে প্রশ্ন থেকেই যায়। সব মানুষের নববর্ষ ঘিরে যে প্রত্যাশা তা হচ্ছে, রাজনৈতিক সমঝোতা ঘটার জাদুকরী সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত দেখা না গেলেও সবাই চান, সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।

    শুধু আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব— এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতা বদলের গণতান্ত্রিক ভোটই নয়, কার্যকর সংসদই চান তারা। সুমহান মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারিত্ব বহন করা সরকার ও বিরোধী দল চান যারা, তারা ইতিহাসের মীমাংসিত অধ্যায়কে আর বিতর্কের চোরাবালিতে ডুবতে দেবেন না। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সব দল পেশিশক্তি, অর্থশক্তি ও করুণা-আশ্রিত প্রার্থীদের বিকল্প হিসেবে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন সৎ, আদর্শবান, গণমুখী রাজনৈতিক চরিত্রের অধিকারী কর্মীদেরই মনোনয়নে অগ্রাধিকার দেবেন। জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থাই নন, সুশাসনও নিশ্চিত করবেন। ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংবিধান ও আইনে কার্যত প্রয়োগ ঘটাবেন। রাজপথের হরতাল-অবরোধের, সংঘাত-সহিংস কর্মসূচি ছেড়ে রাজনীতি ঠাঁই পাবে সংসদে। জাতীয় ইস্যু ও চলমান ইস্যু নিয়ে উঠবে বিতর্কের ঝড়।

    অর্থাৎ সংসদ হয়ে উঠবে প্রাণবন্ত বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। নতুন বছরে টানেলের শেষ প্রান্তে আলোর রেখা দেখতে চান সবাই। দেখতে চান রাতের অন্ধকার শেষে সূর্য উদিত হতে। নতুন বছরে স্বপ্নের রাজনৈতিক সূর্যোদয় হবে। গণতন্ত্রের অন্তরায় সব অশুভ শক্তি, অপতৎপরতা পরাস্ত হোক। সুমহান মুক্তিযুদ্ধে উদ্ভাসিত বাংলাদেশ হয়ে উঠুক একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ।

    লেখক : প্রধান সম্পাদক, পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close