• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব হারাচ্ছে সৌদি আরব!

প্রকাশ:  ০৪ জানুয়ারি ২০১৮, ১৪:৪৩ | আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০১৮, ১৪:৪৬
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নাইন ইলেভেনের হামলার পর থেকে গোটা বিশ্বের মুসলিম নেতৃত্ব বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই চাপ কিছুটা সামলাতে পারলেও ইসলামিক স্টেট ইস্যুসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনায় আবারো নেতৃত্ব ঝুঁকিতে মুসলিম বিশ্ব। সৌদি আরব, ইরান নাকি তুরস্কের দিকে ঝুঁকবে আগামী নেতৃত্ব তাই নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা।

মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষকদের মতে, মুসলিম বিশ্বে ঐক্য খুব সহজ বিষয় না। কারণ নিজেদের মধ্যকার জাতিগত দাঙ্গা, হানাহানি এবং রাজনৈতিক-মতাদর্শিক কারণে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই দ্বন্দ্ব চলে আসছে। সর্বশেষ আমরা কাতার ইস্যুতে মুসলিম বিশ্বকে আবারো দ্বিধাগ্রস্ত দেখতে পাই। সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা রাষ্ট্র কাতার, এমন এক অভিযোগ এনে দেশটির সঙ্গে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মুসলিম দেশ সম্পর্ক ছিন্ন করে।

সম্পর্কিত খবর

    মূলত কাতার পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব প্রশ্নটি নতুন করে সামনে চলে আসে। আর এই প্রশ্ন নতুন এক নেতার মুখ সামনে এনে দেয়, তিনি হলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। যদিও কাতার ইস্যুতে এরদোয়ান তেমন উচ্চবাচ্য না করলেও ঘটনা প্রবাহে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এদিকে নেতৃত্ব প্রশ্নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী মুসলিম দেশ সৌদি আরবের আভ্যন্তরীন রাজনীতিতেও আসে পরিবর্তন।

    গত ২০১৭ সালে সৌদি আরব বেশকিছু সংস্কার পদক্ষেপ নেয়। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার পট পরিবর্তনের অংশ হিসেবে ক্রাউন প্রিন্স সালমানকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়। নতুন যুবরাজ ক্ষমতায় বসার পরই দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারে হাত দেন। অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবেই দেশের সর্ববৃহৎ তেল কোম্পানি আরামকোর শেয়ারের উল্লেখযোগ্য অংশ বিক্রি করে দেয়া হয় এবং তেলকেন্দ্রিক অর্থনীতি পরিবর্তন করে অর্থনীতির ভিন্ন খাত তৈরির পদক্ষেপও নেন তিনি।

    এছাড়াও সৌদি ওই যুবরাজ আরো বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে। এনিয়ে অবশ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি যুবরাজ যতই চেষ্টা করুন না কেন সৌদিকে নতুন ইকোনোমিক অর্ডারে নিয়ে আসার জন্য, আদতে ক্রমশ সৌদি আরব তার কর্তৃত্ব হারাচ্ছে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর ওপর থেকে। বিশ্লেষকদের দাবির এই প্রতিফলন দেখতে পাই, সম্প্রতি জেরুজালেম ইস্যুতে সৌদি আরবের নেয়া পদক্ষেপ লঙ্ঘিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। ট্রাম্পের বোতাম আরো বড় গত বছরের শেষের দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক ঘোষণায় জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। ওই স্বীকৃতির পর মুসলিম বিশ্বে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এই ইস্যুতে সৌদি আরব কিছু পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করলেও আরব বিশ্বকে একত্রিত করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ঠিক এই সময়েই জেরুজালেম ইস্যুতে পদক্ষেপ নেন এরদোয়ান।

    এরদোয়ানের ডাকে আরব বিশ্ব আলোচনায় বসে জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া প্রসঙ্গে। এখানে উল্লেখ্য যে, মুসলিম বিশ্বের দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরেই জেরুজালেম ইস্যু সম্পর্কে সচেতন হলেও কোনো দেশ উদ্যোগী হয়ে জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। এমন পরিস্থিতিতে এরদোয়ানের চেষ্টায় যখন আরব বিশ্ব ঐক্যবদ্ধভাবে জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানীর স্বীকৃতি দেয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই নেতৃত্বের মঞ্চে আবির্ভাব ঘটে এরদোয়ানের।

    মুসলিম বিশ্বের অপর শক্তিশালী দেশ ইরানও ক্ষমতার লড়াইয়ে এগিয়ে থাকার চেষ্টা করেছিল। যে কারণে ২০১১ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যে জ্বলে ওঠা আগুনে বিভিন্ন কায়দায় ঘি ঢেলেছে ইরান। সুন্নী দ্বন্দ্বে ইরান অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিলেও, নিজের দেশের ভেতরে বেড়ে ওঠা অসন্তোষের ব্যাপারে অথটা সতর্ক ছিল না দেশটি। যে কারণে বর্তমানে ইরানে ব্যাপক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। ইতোমধ্যেই দেশটিতে কয়েকজন নিহত হওয়ার সংবাদও বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এমতাবস্থায় দেশটির নেতা রুহানি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে এবং বিদেশি শক্তিকে প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

    থেমে নেই জর্ডানও। মধ্যপ্রাচ্যে নিজের অবস্থান শক্ত করতে সৌদি আরবের সঙ্গে আতাত পূর্ণ না হওয়ায় শেষমেষ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত চুক্তির দিকে এগিয়েছে দেশটি। যদিও এখানেও আছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। জর্ডানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এরদোয়ান। ফলত, কূটনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে জর্ডান পররাষ্ট্রনীতির প্রশ্নে তুরস্কের প্রতি মুখাপেক্ষি।

    মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো ক্ষমতার দৌড়ে অতটা এগিয়ে নেই। অধিকাংশই ইউরোপ কিংবা সৌদি-তুরস্কের সহাযোগিতা নিয়ে চলে। যেহেতু তুরস্ক ইউরোপ প্রশ্নেও অনেকটা এগিয়ে তাই মুসলিম বিশ্বের আগামীর নেতৃত্ব সৌদি আরব থেকে সরে গিয়ে তুরস্কের কাছে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এরদোয়ান শুধু নিজ দেশের সুলতান হতে চান না; তার লক্ষ্য আরও বড়। তিনি মুসলিম বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে চান। এই লক্ষ্য থেকেই ইসলামি সহযোগিতা সংস্থাসহ (ওআইসি) বিভিন্ন ফোরাম ও উপলক্ষে এরদোয়ান নিজের যোগ্যতা তুলে ধরছেন। এই যেমন ২০১৬ সালের এপ্রিলে তুরস্কে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে এরদোয়ান দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, ‘আমি সুন্নি বা শিয়া নই, আমার ধর্ম ইসলাম।’

    কেকে সিরিয়ার আবারো বিমানহামলা, নিহত ২৩

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close