• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

যে গোপন কারণে বিএনপির ওপর ক্ষেপেছে জামায়াত

প্রকাশ:  ০৬ জানুয়ারি ২০১৮, ০০:৩০
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) উপনির্বাচনে মেয়র পদে ২০-দলীয় জোটপ্রধান বিএনপিকে ছাড় দিচ্ছে না অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের ঢাকা উত্তরের আমির ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনকে মেয়র পদে প্রার্থী করা হয়েছে। দলের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে বিএনপি জোটগতভাবে আলোচনা না করায় ক্ষুব্ধ জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। ঢাকা মহানগর উত্তরে প্রার্থী ঘোষণা করায় এখন বিএনপি আলোচনার জন্য ডাকবে।

পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দরকষাকষি করতেই আগাম প্রার্থিতা ঘোষণা করতে যাচ্ছে জামায়াত। এদিকে তফসিল ঘোষণার আগে জোটের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া নিবন্ধনহীন জামায়াতের একক প্রার্থী ঘোষণায় চমকে গেছে জোটের শরিক দলগুলো। জামায়াতের আগেভাগে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ একজন নেতা জানান, নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে এখনো নিশ্চয়তা তৈরি হয়নি। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মাঠে লড়বেন। তিনি বলেন, জোটের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে কি না তা তফসিল ঘোষণার পর বোঝা যাবে।

সম্পর্কিত খবর

    জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রভাবশালী একজন সদস্য ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য বলেন, ‘প্রার্থী জিতবে না হারবে তা বিবেচ্য নয়। বিএনপি তো জিজ্ঞেসও করে না প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে। আমরা মনে করি, জামায়াতের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। তাই মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হলো। নির্বাচনে বিএনপিকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ জানা যায়, গত বছর ডিসেম্বরে মেয়র প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তরে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাভুটি হয়। শাখার নেতা-কর্মীরা ভোট দিয়ে কয়েকজনের নাম কেন্দ্রে পাঠানোর পর ভোটপ্রাপ্তির ফলে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এগিয়ে থাকেন। এর সূত্র ধরে বুধবার বিকালে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ। বুধবার বিকালে অনানুষ্ঠানিকভাবে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি দলের নীতিনির্ধারণী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।

    সূত্র জানায়, মনোনীত মেয়র প্রার্থী মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। ছাত্ররাজনীতি শেষ করে জামায়াতের রমনা থানার দায়িত্বশীল হিসেবে যোগ দেন তিনি। পরবর্তী সময়ে এই থানার সভাপতি, এরপর অবিভক্ত ঢাকা মহানগর কমিটির সহকারী সেক্রেটারি পদে দেখা গেছে তাকে। পরে গত বছরের শুরুর দিকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে ঢাকা ভাগ হলে তিনি উত্তরের আমির নির্বাচিত হন। তার গ্রামের বাড়ি সিলেটে। সূত্রটির ভাষ্য, মেয়র প্রার্থী দেওয়া হলো, এখন বিএনপি আলোচনা করবে। এমনকি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করা হলে মেয়র বাদ গেলেও ১৮টি নতুন ওয়ার্ডে নির্বাচন হবে। সেগুলোতে কাউন্সিলর চাওয়া হবে বিএনপির কাছে। সে ক্ষেত্রে ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে কমপক্ষে আটটি ওয়ার্ডে জোটের সমর্থন চাওয়া হবে। সূত্র জানিয়েছে, প্রথমত দলের জনশক্তিকে কাজে লাগানো ও ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যেই ডিএনসিসিতে মেয়র প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রায় ২৫ লাখ ভোটারের মধ্যে দলীয় ভোটারসংখ্যা অনেক কম হলেও দলের ভাবমূর্তি কেমন তা দেখতে চান দলটির নীতিনির্ধারকরা। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জোটবদ্ধতার নজির একেবারে কম। এ কারণেও দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা মনে করছেন, মেয়র পদে প্রার্থী দেওয়া উচিত। নেতা-কর্মীরা জানান, নির্বাচনী প্রচারণা করা হবে অনানুষ্ঠানিকভাবেই। দলের প্রার্থীর তথ্য দেওয়া হবে গণমাধ্যমে। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংবাদ সম্মেলনের সুযোগ না থাকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

    ভারপ্রাপ্ত আমিরের ঘনিষ্ঠ একজন নেতা বলেন, ‘অনানুষ্ঠানিকভাবে আমাদের প্রার্থীর প্রচার হয়ে যাবে। দ্রুতই নির্বাচন পরিচালনা ও গণসংযোগসহ সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সমন্বয় কমিটি গঠন ও পোস্টার করা হবে।’ যতটা সম্ভব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে গণসংযোগের প্রস্তুতিও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে বলে দাবি ওই সূত্রের। গোপনে থেকে কতটা নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে এমন প্রশ্নে ঢাকা মহানগর জামায়াতের এক নেতা বলেন, ‘তুরস্কে একে পার্টিও ভিতরে ভিতরে কাজ করে ক্ষমতায় গিয়েছিল। জামায়াত প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে সমানভাবেই কাজ করে। আমাদের প্রতি মানুষ আগের চেয়ে বেশি সহানুভূতিশীল বলে মনে করি।’ বর্তমানে জামায়াতের মনোনীত দুজন ঢাকা মহানগর উত্তরে নারী কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্বরত বলে জানা গেছে।

    সূত্রের ভাষ্য, নতুনভাবে ঢাকা উত্তর সিটিতে আরও ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত হয়েছে। এগুলোতে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে দরকষাকষি করতে চায় জামায়াত। এ বিষয়টি জোটের সঙ্গে আলোচনার পর দেখা যাবে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলছেন ভিন্ন কথা। তার ভাষ্য, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে জানি না জামায়াত মনোনয়ন দিয়েছে কি না।’ জামায়াতের প্রার্থীর কারণে বিএনপির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না এমন প্রশ্নে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আমি নীতিগতভাবে মনে করি, যত বেশি প্রার্থী হবে তত ভালো। তাহলেই না নির্বাচন বলা যাবে। আর অফিশিয়ালি বলার আগে এ বিষয়ে কিছু মন্তব্য করতে চাই না।’

    সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close