• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আবারো ভুলে ভরা সরকারি পাঠ্যবই

প্রকাশ:  ০৬ জানুয়ারি ২০১৮, ১৯:৩৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ছাপানো সরকারী পাঠ্য বইয়ে ভুল থাকা যেন নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে। ২০১৭ সালে ছাগল এবং ওড়না কাণ্ডের পর ২০১৮ সালে বিনামূল্যে বিতরণ করা প্রথম শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’-এ পল্লীকবি জসীম উদ্দীন রচিত মামার বাড়ি কবিতায় ‘পাকা জামের মধুর রসে’র জায়গায় লেখা আছে ‘পাকা জামের শাখায় উঠে’। পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, প্রথম শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’র সূচিতেও বানান ভুল রয়েছে। সূচিপত্র’র জায়গায় লেখা সুচিপত্র।

এছাড়া, জাতীয় পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষাক্রম বোর্ডের বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ে একেকভাবে ছাপা হয়েছে কবি জসীম উদ্দীনের নামের বানান। কোথাও লেখা ‘জসিমউদদিন’, তো কোথাও আবার ‘জসমীউদ্দীন’। শুধু জসীম উদ্দীন নন, তার পাশাপাশি নাম বিকৃত হয়েছে মুস্তাফা মনোয়ার, আবদুল গাফফার চৌধুরী এবং সিকান্দার আবু জাফরেরও।

সম্পর্কিত খবর

    পল্লীকবির নামের প্রকৃত বানান দুই শব্দে। জসীম উদ্দীন। যদিও এ বিষয়টি ২০১৭ সালে তুলে ধরা হয়। কিন্তু তারপরও ২০১৮ সালে একই ভুল। প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘মামার বাড়ি’ কবিতায় কবি জসীম উদ্দীনের নাম লেখা হয়েছে এক শব্দে ‘জসীমউদদীন’। ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বইয়ের ‘আসমানী’ এবং অষ্টম শ্রেণির বইয়ের ‘রূপাই’তে পল্লীকবির নাম এক শব্দে লেখা হয়েছে। আবার সপ্তম শ্রেণির বাংলা বইয়ে কবির নাম লেখা আছে ‘জসীম উদদীন’।

    জাতীয় পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও বিভিন্ন বইয়ে তার নামের বানান বিভিন্নভাবে লেখা আছে। তাই প্রশ্ন জাগতেই পারে, বিখ্যাত এ লেখকের নামের সঠিক বানান আসলে কোনটি। বেশি কষ্ট না করে, কবির জীবদ্দশায় প্রকাশিত বেশ পুরনো অনেক বইয়ের প্রচ্ছদে দেখলে এবং উইকিপিডিয়া ঘাটলেই দেখা যাবে, লেখা আছে, ‘জসীম উদ্ দীন’।

    এছাড়া সপ্তম শ্রেণির সপ্তবর্ণা, অষ্টম শ্রেণির সাহিত্য কনিকা বইয়ের কবি পরিচিতিতে কবির কর্মজীবনের প্রারম্ভ ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে লেখা আছে। অথচ তার কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৩৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সহকারী হিসেবে।

    অষ্টম শ্রেণির সাহিত্য কনিকা এবং সপ্তম শ্রেণির সপ্তবর্ণা বইয়ে ‘শিল্পকলার নানা দিক’র লেখক মুস্তাফা মনোয়ার’র নাম পাল্টে হয়ে গেছে মুসতাফা মনোয়ার। আবদুল গাফফার চৌধুরী হয়েছে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। আর ৭ম শ্রেণির সপ্তবর্ণা বইয়ে সিকান্দার আবু জাফর হয়েছেন সিকানদার আবু জাফর।

    এ ব্যাপারে সেন্ট গ্রেগরি স্কুলের ১ম শ্রেণির ছাত্র মাহিনের বাবা হাজী আসলাম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, যারা শিক্ষক হয়েছেন তাদের মনোযোগ পাঠদানের ক্ষেত্রে খুবই কম। আর মনোযোগও বড় বিষয় না। যারা বইগুলো লিখেছেন, আর যারা প্রকাশ করেছেন তারা তো চেক করতে পারতেন। সবাই কোনো মতে কাজ সারতে পারলেই হলো।

    সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী মারিয়ার মা মিসেস রিতা বলেন, এ তো নতুন কিছু না। কেন না এই ভুল লক্ষ্য করার তো কেউই নেই। কারণ তারা মনে হয় ভাবেন, এই বইগুলো তো ‘মাগনা’ (বিনামূল্যে) দেয়া হবে। ফ্রি বইয়ের চাইতে আর ভালো কি হবে। একটা হইলেই হইলো।

    জুবিলী স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র জিসানের মা মিসেস লায়লা বলেন, এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট অবহেলা আছে। আছে মনিটরিংয়ের অভাব। এছাড়া পরিবর্তন ও পরিমার্জন হতে হতে ছবির মানও অনেক খারাপ হয়ে গেছে।

    শিক্ষার শুরুতেই গলদ: ২০১৩ সালের প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ের সঙ্গে ২০১৮ সালের বইটির তুলনা করলে দেখা যায় বইটির মান নিচের দিকেই গেছে। এক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’র চারটি ছবির কথা আসে ঘুরেফিরে। শিশুদের শেখানোর জন্য অজ’র (ছাগল) ছবি দেওয়া হয়েছে।

    শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘আদর্শলিপি’ থেকে শুরু করে কিছুদিন আগ পর্যন্তও ‘অ’ দিয়ে অজগর সাপ শেখানো হতো। কিন্তু ভয়ঙ্কর বিবেচনায় সাপ বাদ পড়ে। আসে অজ। কিন্তু এই জায়গায় ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য এড়াতে অর্শ (ঘোড়া) বা অখিল বা অবাক এ ধরনের সহজ অর্থবহ শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে।

    এ ধরনের ভুল প্রসঙ্গে অধ্যাপক এমাজউদ্দিন বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শুরুর ভিত হলো প্রথম শ্রেণি। আর প্রথম শ্রেণিতেই যদি বাচ্চারা এই ভুল শেখে তবে ভুলই জানবে। তাছাড়া একজন লেখকের সৃষ্টিকেও এখানে বিকৃত করা হয়েছে। জসীম উদ্দীনের মত বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান কবির নামের বানানের এ ধরনের বিকৃতি কোনো অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না। বিশেষ করে সরকারি পাঠ্যবইয়ে। তার উপর আবার ভিন্ন ভিন্ন ভাবে লেখা। এটা দুঃখজনক। সবকিছুতেই এখন হেয়ালিপনা চলছে। কিন্তু শিক্ষা যেখানে একটি জাতির মেরুদণ্ড, সেখানে এই ভুল কোনোভাবেই মেনে নেয়া যাবে না। প্রশাসনের এ বিষয়ে নজরদারি বাড়িয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

    তিনি আরও বলেন, তিন কারণে এ ধরনের অবস্থা তৈরি হয়। দায়িত্ববোধের অভাব। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ক্ষমতা। তদারকি এবং জবাবদিহিতার অভাব। এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ভুলের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে। কারো দায়িত্বে অবহেলা থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    উল্লেখ্য, এর আগে দেশজুড়ে ২০১৭ সালেও ঝকঝকে মলাটে মোড়া নতুন পাঠ্যবই বিতরণের পর তাতে বিদ্যমান ভুলের কারনে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।

    আরআর

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close