• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নতুন মন্ত্রীরা বেশি কথা বলছেন!

প্রকাশ:  ০৬ জানুয়ারি ২০১৮, ২৩:৪৭ | আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০১৮, ২৩:৪৯
পীর হাবিবুর রহমান

নতুন মন্ত্রীরা কথা বলছেন বেশি। বেশি কথা কারো ভালো লাগে না। অতিকথন নিজেদের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা হয়ে উঠে আকাশছোঁয়া। পরে আশার আকাশে ঘুড়ি উড়াতে না পারলে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক কাটা পরে। সমালোচনার তীরে ক্ষত-বিক্ষত হতে হয়। হামেশা ব্যর্থতার অপবাদ বইতে হয়। কথা কম, কাজ বেশি করে মানুষের হৃদয় জয় করলে দু’হাতে তালি বাজে, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

বছরের শুরুতে মন্ত্রিসভা রদবদল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগের মতোই তৃণমূল রাজনীতি থেকে উঠে আসা নেতাদের পদোন্নতি দিয়েছেন। কাউকে পূর্ণ মন্ত্রী করে অনেক দায়িত্বশীল জায়গায় বসিয়েছেন। নারায়ণ চন্দ চন্দ্রকে পূর্ণ মন্ত্রী করেছেন। লক্ষীপুরের ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নিবেদিত প্রাণ নেতা একেএম শাহজাহান কামালকে রাশেদ খান মেননের মতো প্রবীণ রাজনীতিবিদকে সরিয়ে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী করেছেন। অনেক সৎ রাজনীতিবিদরাও এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়ে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। বিমান লোকসানের তলানিতেই যায়নি, আকাশপথে প্রধানমন্ত্রীর মতো রাষ্ট্রনায়ককে নিয়ে ঝুঁকিতে পরেছে। বিমান নিয়ে প্রশ্ন আর প্রশ্ন রয়েছে। সেখানে একজন সহজ সরল, গণমূখী রাজনীতিবিদ শাহজাহান কামালকে তার পূর্বসূরী রাশেদ খান মেনন সতর্ক করলেও তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পরেছেন। মানুষ যতটা চাইনি, তার চেয়ে বেশি বলেছেন।

সম্পর্কিত খবর

    ডিসেম্বরে যদি হয় জাতীয় নির্বাচন তাহলে তার আগেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্তর্বতী সরকার গঠিত হবে। যারা কেবল রুটিন ওয়ার্ক করবেন। সেখানে নতুন মন্ত্রীদের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ১০ মাস। ১০ মাসে দুনিয়া কাঁপানো পরিবর্তন তারা এনে দিতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া পুরষ্কার বা সম্মান মাথায় তুলে নিয়ে যতটা পারেন ইবাদতের মতো কাজ করেন। দক্ষতা দেখান, সাফল্য দেখান। সাফল্য দেখাতে না পারেন, ব্যর্থতা না দেখালেই মানুষ খুশি। সেখানে এ কে এম শাহজাহান কামাল বলে বসলেন, বিমানকে লাভজনক করতে বুকের রক্ত দিয়ে দেবেন। এমনকি এশিয়ার মধ্যে অন্যতম এয়ারলাইন্সে পরিণত করবেন। আরো বলেছেন, অনেকে বলেন- এই মন্ত্রণালয় আগুন ‘আমার কাছে আগুন নয়, পানি।’

    আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে কোনোদিন জড়িত ছিলেন না। বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনা করা মোস্তফা জাব্বার মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, জাসদ রাজনীত করেছেন। বঙ্গবন্ধু পরিবার ও আওয়ামী লীগ বিরোধী অপপ্রচারের মুখপাত্র খ্যাত গণকণ্ঠে কাজ করেছেন। তবুও তিনি একজন ভদ্র, স্বজন মানুষ। বেসিসের সভাপতি ছিলেন। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের টেবিলের সামনে বসতেন। বাংলা বিজয় ফন্ট চালু করে আমাদের প্রজন্মকে তিনি জয় করেছিলেন। এটি তার জন্য গর্বের। তিনিও স্বপ্ন দেখাতে পারেন। একালের ডা. মেহদী হাসান খানও ‘অভ্র’ বাংলা ফন্ট দিয়ে ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে টেনেছেন। তার সমর্থকরা তার জন্য রাষ্ট্রীয় পদক চাইছেন। মোস্তফা জাব্বারের সমর্থকরাও তার জন্য একুশে পদক চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে পলকের ওপরেই ঠাঁই দিয়েছেন। এমনকি তারানার মতো সৎ সাহসী প্রতিমন্ত্রীকে সরিয়ে মোস্তফা জাব্বার ডাক, টেলি যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী করেছেন।

    তিনিও তারানাকে কেন সরানো হয়েছে-এটি যেখানে কেবল মাত্র সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীই বলতে পারেন, সেখানে তিনিই তার ব্যাখা দিচ্ছেন। বলেছেন, তারানাকে কেন সরানো হয়েছে, সেটি ওপেন বলা যাবে না। তার সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক বড়। কারণ প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে শেখ হাসিনার সরকার তথ্য প্রযুক্তিতে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে দেশে। সেখানে মোস্তফা জাব্বারের জন্য চ্যালেঞ্জ আকাশছোঁয়া। অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট শক্তিটি যে মহা ক্ষমতাশালী সেটি জেনেই তাকে রুখতে হবে। ইন্টারনেটের দাম কমিয়ে আনতে হবে। মোবাইল অপারেটরদের আকাশছোঁয়া কলরেট গরিবের নাগালে আনতে হবে। কাজগুলো আগে করুন, ভাষণটা পরে দিন।

    রাজবাড়ীর তৃণমূল নেতা কেরামত আলীকেও নানা ব্যর্থতার অভিযোগে সমালোচিত শিক্ষামন্ত্রী নরুল ইসলাম নাহিদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দিয়েছেন। পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু দু’জনই হরি হরি আত্মা বন্ধু। মঞ্জুকে এনেছেন পানিতে, আনিসকে পাঠিয়েছেন বনে। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, ‘প্রতিক্রিয়া কিসের? মন্ত্রী ছিলাম, মন্ত্রী আছি।’ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু তার সঙ্গে একমত। বলেছেন, সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীই সব। তিনি যেটি ভালো মনে করেছেন সেটিই করেছেন। আরো বলেছেন, আনিস ও আমি বন্ধু। আমি যা করেছি, আনিস তাতে হাত দিবেন না। আনিস যা করেছেন আমি সেখানে হাত দেবো না। দু’জনেই অনেকবার মন্ত্রী হয়েছেন। অভিজ্ঞতা তাদের কথাবার্তাতেই ফুটে উঠে।

    নতুন মন্ত্রীরা গোধুলী লগ্নে যে দায়িত্ব পেয়েছেন, কম সময়ে জনগণকে খুশি করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন। অতিকথন বন্ধ করুন।

    লেখক: প্রধান সম্পাদক, পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close