• বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

যে কারণে চাকরিতে কোটা, কেনো সংস্কারের দাবি?

প্রকাশ:  ১১ এপ্রিল ২০১৮, ০২:০৩ | আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০১৮, ০২:৪৩
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা নিয়ে শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীদের ক্ষোভ দীর্ঘ দিনের। যোগ্যতার মানদণ্ডে উপরের সারিতে থেকেও কোটার মারপ্যাঁচে ছিটকে পড়ছেন অনেক মেধাবী তরুণ-তরুণী, সেখানে স্থান করে নিচ্ছেন অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা- এই আলোচনা অনেকদিন ধরেই চলছে।

সরকারি চাকরির ১০০টি পদের ৫৫টি বিভিন্ন কোটায় সংরক্ষিত। এর মধ্যে ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ ভাগ জেলা, ১০ ভাগ নারী এবং ৫ ভাগ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত। মেধাভিত্তিক নিয়োগের সুযোগ মাত্র পাচ্ছে ৪৫ ভাগ সাধারণ চাকরি প্রার্থী।

সম্পর্কিত খবর

    সম্প্রতি সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন, বিক্ষোভ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এ আন্দোলন।

    এ অবস্থায় চলুন ফিরে দেখা যাক যেভাবে ও যে কারণে সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা যুক্ত হয়েছিল।

    যেভাবে চাকরিতে কোটা

    ব্রিটিশের হাত ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে কোটার প্রচলন শুরু হয় ১৯১৮ সালে। সিভিল সার্ভিসে ব্রিটিশদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারায় ভারতীয়দের জন্য আলাদা কোটার ব্যবস্থা করা হয় তখন থেকে। পরবর্তী সময়ে শিক্ষায় অনগ্রসর মুসলমানদের জন্যও আলাদা কোটা রাখা হয়। পাকিস্তান আমলে পিছিয়ে পড়া পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) মানুষদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে চালু করা হয় প্রদেশ ভিত্তিক কোটা। স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন সংস্থাপন সচিবের এক নির্বাহী আদেশে কোটা পদ্ধতি প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে বাংলাদেশে।

    ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছিলেন, তাদের এবং তাদের সন্তানদের সুবিধা দেবার জন্য দেশে প্রথমে এ কোটা চালু করা হয়েছিল। ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উপহার হিসেবে কোটা চালু করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন সরকারি কর্মচারী নিয়োগে মেধা কোটা ছিল মাত্র ২০ শতাংশ। এছাড়া ৪০ শতাংশ জেলা কোটা, ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা আর ১০ শতাংশ ছিল যুদ্ধাহত নারী কোটা। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর পরিবর্তন আসে কোটায়। ১৯৭৬ সালে মেধা কোটায় বরাদ্দ হয় ৪০ শতাংশ, জেলা কোটায় ২০ শতাংশ ও আগের মতোই মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা হয় ৩০ শতাংশ।

    ১৯৭৬ সালে এই কোটা ব্যবস্থার পরিবর্তন করে মেধা কোটায় আগের মতই ৩০ ভাগ রাখা হয়।

    ১৯৮৫ সালে আবারও পরিবর্তন আনা হয় কোটা ব্যবস্থায়। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৪৫ ভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০ ভাগ, নারী কোটায় ১০ ভাগ এবং প্রথমবারের মত উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ ভাগ পদ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়। ১৭ মার্চ ১৯৯৭ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এর আওতাভুক্ত করে পরিপত্র জারি করা হয়। আর সর্বশেষ ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি অন্য এক পরিপত্র জারির মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ ভাগ কোটা বরাদ্দ করা হয়। এছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগে ৬০ শতাংশ নারী কোটা এবং ২০ শতাংশ রয়েছে পোষ্যসহ অন্যান্য কোটা।।

    ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য আবার কোটা চালু করেন। আর সমাজের পিছিয়ে পড়াদের জন্য কোটা পদ্ধতি তো চালু আছেই। সবশেষ ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলা ভিত্তিক কোটা নির্ধারণ করা হয়।

    বাংলাদেশের সরকারি চাকরীতে এখন ২৫৮ ধরনের কোটা আছে। বাংলাদেশের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সূত্রমতে প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে মোট পাঁচটা ক্যাটাগরিতে কোটার ব্যবস্থা রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটায়।

    যেসব দাবিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন:

    ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদ’এর ব্যানারে যে পাঁচটি বিষয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলছে সেগুলো হল-

    •কোটা-ব্যবস্থা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা (আন্দোলনকারীরা বলছেন ৫৬% কোটার মধ্যে ৩০ শতাংশই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ। সেটিকে ১০% এ নামিয়ে আনতে হবে)।

    কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া।

    সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়স-সীমা- ( মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে চাকরীর বয়স-সীমা ৩২ কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০। সেখানে অভিন্ন বয়স-সীমার দাবি আন্দোলনরতদের।)

    কোটায় কোনও ধরনের বিশেষ পরীক্ষা নেয়া যাবে না ( কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাকরি আবেদনই করতে পারেন না কেবল কোটায় অন্তর্ভুক্তরা পারে)।

    চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় একাধিকবার কোটার সুবিধা ব্যবহার করা যাবে না।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close