ফের ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডেঙ্গুজ্বর; ৮ মাসে ১০ জনের মৃত্যু
ডেঙ্গুজ্বর ফের ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৭ জন। গত আগস্ট মাসেই গড়ে প্রতিদিন ৪৪ জন করে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সরকারি হিসাবে জানুয়ারি থেকে ৩০শে আগস্ট পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১০ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে গেছে। আর জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে বংশবৃদ্ধি করছে এডিস মশা। সেই সাথে মশক নিধন কর্মসূচি না থাকা এবং সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রচারণার অভাবে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
সম্পর্কিত খবর
বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৩২ জন। এর মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭৩ জন এবং সরকারি হাসপাতালে ৫৯ জন। বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে ধানমন্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৩০ জন, ইবনে সিনায় ১৩ জন, স্কায়ার হাসপাতালে ১১জন, পুরান ঢাকার সালাউদ্দিন মেডিকেলে ৯ জন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (মিটফোর্ড) ২০ জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জন ভর্তি রয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ জানান, ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর। অন্য সব জ্বর যেমন, টাইফয়েড, সাধারণ জ্বর প্রভৃতির সঙ্গে ডেঙ্গুজ্বরের মূল পার্থক্য হলো প্রথম দিন থেকেই প্রচণ্ড জ্বর অনুভূত হবে, সাথে তীব্র শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনের অংশে ব্যথা, দেহের পেছনের অংশে ব্যথা প্রভৃতি থাকবে। বমি হওয়া, খেতে না পারা এমনকি ক্লান্তি ভাবও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শরীরে র্যাশও উঠতে পারে, দাঁত মাজার সময় রক্তও পড়তে পারে, কালো পায়খানা হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেটে ব্যথা হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়। তিনি বলেন, ডেঙ্গু মাঝেমধ্যে শরীরের অন্যান্য সিস্টেমকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি চেতনা হ্রাস মাত্রা তীব্র ক্ষেত্রে শতকরা শূন্য দশমিক ৫-৬ ভাগ হয়, যা মস্তিষ্কের ভাইরাস সংক্রমণ দ্বারা বিশেষণীয় হয় বা পরোক্ষভাবে লিভারসহ বিভিন্ন অঙ্গহানি হতে পারে। এ রোগের জন্য তিনি অসচেতনতাকেই দায়ী করেন।
তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা কেবল উপসর্গভিত্তিক। জ্বর হলে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে। স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে বারবার শরীর মুছে দিতে পারেন। জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়া যাবে। তবে কোনো অবস্থায়ই অ্যাসপিরিন খাওয়া যাবে না। এ সময় আক্রান্ত রোগীকে প্রচুর তরল খাবার দিতে হবে। দৈনন্দিন খাবারের সাথে পানি, খাওয়ার স্যালাইন, স্যুপ, দুধ, তাজা ফলের রস ইত্যাদি রোগীর জন্য সহায়ক। মায়ের দুধ পানকারী শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়ানো যাবে। এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের ডেঙ্গু হলে অন্যান্য রোগীর মতোই যতœ নিতে হবে। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
আর এ কারণেই এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। জুন-জুলাই-আগস্ট মাসে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব বাড়ে। বাড়ি বা বাড়ির আঙিনার কোথাও যেন পরিষ্কার পানি জমে না থাকে সে ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তদের সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে। এ ছাড়া যথেষ্ট পরিমাণে পানি, শরবত ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যথার ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তবে অ্যাসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ব্যথার ওষুধ খাওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ৪ থেকে ৫ দিন জ্বর থাকলে ঘরে বসে না থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।