• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন আনোয়ার ইব্রাহিম

প্রকাশ:  ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:১৪
আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন দেশটির ক্ষমতাসীন জোটের নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম। পার্লামেন্টে বসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য নিজ দলের একজন এমপি পদত্যাগ করার পর দলের পক্ষ থেকে তার মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে গত দু’দিন ধরে দেশটির কয়েকটি গণমাধ্যমে ধারা বাহিক প্রতিবেদন করে আসছে। নিজ দল জয়লাভ ও কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ারপর আনোয়ার ইব্রাহিম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন কয়েকমাস তিনি রাজনীতির বাইরে থাকবেন। কিন্তু নিজ দলের নীতি-নির্ধারকদের চাপে শেষ পর্যন্ত পার্লামেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে সক্রিয় হচ্ছেন আনোয়ার ইব্রাহিম।

অতি সম্প্রতি মালয়েশিয়ার পাহাং রাজ্যের পোহ তং একটি চীনা মন্দির কর্তৃক আয়োজিত হাঙ্গেরি গোষ্ট ফেষ্টিভালে বক্তব্য তিনি বলেছিলেন, ‘আমিই আনোয়ার ইব্রাহীম এবং আমি এখনো দৃঢ়চেতা। আমি এখনো সংগ্রাম করতে পারি। ৬১ বছরের পুরনো একটি সরকারকে পরিবর্তন করা অতটা সহজ কাজ নয় কিন্তু আমি এই সংগ্রামে আপনাদের সাথে থাকবো।’

পাহাং-এর বালাকাং সাংসদ এডি নং তিয়েন চী চলতি বছরের ২০শে জুলাইতে মৃত্যুবরণ করায় সেখানকার সংসদীয় আসনটি খালি হয়ে পড়ে। রাজ্যটির উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য উং সো কি কে মালয়েশিয়া চাইনিজ এসোসিয়েশন এর প্রার্থী তান চী তেওং এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে হবে। আনোয়ার ইব্রাহীম শনিবার রাজ্যটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে পাকাতান হারপানের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য ভোটারদের প্রতি ও আহ্বান জানান।

এদিকে চলতি বছরের ৯ মে অনুষ্টেয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে মালয়েশিয়ার সাবেক ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বে আনোয়ার ইব্রাহিমের দল জয়লাভ করে। নির্বাচনে জোট গঠনের প্রধান শর্ত ছিল, বিজয়ী হলে মাহাথির আনোয়ার ইব্রাহিমকে কারাগার থেকে মুক্ত করবেন আর দুই বছর পর তাকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে নিজে অবসর নেবেন। ওই প্রতিশ্রুতির আইনগত বৈধতা দেওয়ার জন্য আনোয়ার ইব্রাহিমের পার্লামেন্টের সদস্য পদ দরকার। তাই তাকে উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে নিজ দলের একজন এমপি পদত্যাগ করেন।

আনোয়ার মালয়েশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নেগরি সেমবিলান রাজ্যের পোর্ট ডিকসন আসন থেকে নির্বাচন করবেন। তার দল পিপলস জাস্টিস পার্টি-পিকেআর এখন সরকারি জোট পাকাতান হারাপানের নেতৃত্ব দিচ্ছে ও তাকে সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার জন্য সব বন্দোবস্ত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। পিকেআর’র মহাসচিব সাইফুদ্দিন নাসুশন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, একজন পার্লামেন্ট মেম্বার হিসেবে তিনি পাকাতান হারাপান জোটের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।’ স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ওই সংবাদ সম্মেলনটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তবে সম্মেলনে আনোয়ার উপস্থিত ছিলেন না।

’৯০ এর দশকে মাহাথির মোহাম্মদের শেষ আমলে সমকামীতা ও দুর্নীতির অভিযোগে আনোয়ারকে কারাগারে পাঠানো হয়। তারপর থেকেই তিনি মালয়েশিয়ার সংস্কারপন্থী রাজনীতি শুরু করেন। আনোয়ার ওই সময় মাহাথিরের প্রধান সহকারী ছিলেন। তবে ১৯৯৭-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত চলা অর্থনৈতিক সংকটের সময় দুই নেতার সম্পর্কে ফাটল ধরে। ২০০৪ সালে কারামুক্ত হলেও ২০১৫ সালে সমকামীর অভিযোগে তাকে আবারও কারাগারে পাঠানো হয়। দুই সময়ই তিনি ও তার সমর্থকরা এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন।

মে মাসের নির্বাচনে জয়লাভের পর মাহাথির মোহাম্মদ আনোয়ারের রাজকীয় ক্ষমা মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে তার হাতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব হস্তান্তর করার প্রতিশ্রুতিও দেন। এর মাধ্যমে এক সময় বন্ধু থেকে শত্রুতে পরিণত হওয়া দুই নেতা আবারও বন্ধুত্ব গড়েন।

একজন আনোয়ার ইব্রাহিম ও নতুন সম্ভাবনায় মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত নাম আনোয়ার ইব্রাহিম। এক সময় মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা আনোয়ার ইব্রাহিম তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নানা উত্থান-পতনের সম্মুখীন হয়েছেন।

এই আনোয়ার ইব্রাহিম ইস্যুতেই মাহাথিরকে পশ্চিমা গণমাধ্যম সাফল্যের সঙ্গে চিত্রিত করতে পেরেছিল যে, মাহাথির আধুনিক মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজেকে আসীন করতে পারলেও তার উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি সংকটাপন্ন। তৃতীয় বিশ্বের গড়পড়তা কর্তৃত্বপরায়ণ শাসকের কাতারেই তার স্থান। উন্নত গণতান্ত্রিক বিশ্বের কোনো কুলীন নেতার মর্যাদা তার জন্য নৈবনৈবচ।

কিন্তু মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে এক অনন্যসাধারণ নজির সৃষ্টি করেছেন মাহাথির। উন্নয়ন দর্শন ছাড়াও ভুল স্বীকার, ক্ষমা প্রদর্শন, এবং শত্রুকে মিত্র হিসেবে মেনে নেওয়ার মতো কয়েকটি বিষয় মাহাথিরের কাছ থেকে শেখার আছে বিশ্ব নেতাদের। তবে এত দিন যারা বলে আসছিলেন যে, মাহাথির উন্নয়নের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, সদাশয় স্বৈরাচার এবং বিরোধীদলীয় মতামত কম গ্রাহ্য করেছেন, এবারের অনন্য পর্বে তাকে সেই অভিধায় ফেলা যাবে না। শত্রুকে মিত্র হিসেবে মেনে নিয়ে যে অনন্য নজীর স্থাপন করেছে তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।

দেশটির প্রভাবশালীগ গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনধিক দুই বছর তিনি ক্ষমতায় থাকবেন। এরপর সম্ভবত আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে ক্ষমতা ছাড়বেন। আসলে ‘সম্ভবত’ নয়, আনোয়ার ও তার স্ত্রীর (নবনিযুক্ত উপপ্রধানমন্ত্রী ওয়ান আজিজা) সঙ্গে তার পরিষ্কার সমঝোতার ফল হলো, তার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে সক্ষম হওয়া। এটাও এক পরিহাস যে, তিনি একদা তথাকথিত সমকামিতার অভিযোগে মিত্র থেকে শত্রুতে রূপান্তরিত হওয়া যে আনোয়ার ইব্রাহিমকে কারাগারে পুরেছিলেন, সেই আনোয়ারের আশীর্বাদ ও তার দলের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবেই মাহাথির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। ইব্রাহিমের মর্যাদাপূর্ণ শর্তে মাহাথির প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এটাই শেখার যে, যোগ্যতা থাকলে কারাগারে আটকানো কোনো ব্যাপার তো নয়, বরং কখনো সেটাই হতে পারে নিজের ও জাতির পরিত্রাণের উৎস।

মালয়েশিয়া তার রাজনীতির ইতিহাসের একটা অশ্রুতপূর্ব পালাবদল দেখছে। মূলত সাধারণ মানুষ ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’ মামলায় দন্ডিত ইব্রাহিমকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। তিনি দন্ডিত, তাই নির্বাচনে অযোগ্য। মাহাথির অবশ্য নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে ইব্রাহিমকেই দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। মাহাথিরের পরের পথপরিক্রমাটা কী হতে পারে, রাজনীতি পর্যবেক্ষকের মতে- মাহাথিরের পরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি থাকছেন ইব্রাহিমপত্নী। কোনো একটি উপনির্বাচনে জয়ী করে এনে আনোয়ারের হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেবেন মাহাথির।

সাম্প্রতিক দেশটির রাজনীতিতে পট পরিবর্তনে পর্দার আড়ালের বাস্তবতা হলো, ইব্রাহিমই গেম চেঞ্জার। মাহাথির পুষ্পবৃষ্টির মধ্য দিয়ে শপথ নিয়েছেন। সাধারণ মানুষ তার ভুল স্বীকার করা, ঔদার্য ও মহত্তম উদাহরণ তৈরির জন্যই তাকে এভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে মাহাথির ও ইব্রাহিমের এই বিরল সমঝোতা বা রিকনসিলিয়েশন সত্যিই এক বিস্ময়। গণতন্ত্রকে যে ‘আর্ট অব কম্প্রোমাইজ’ বলা হয়, মালয়েশিয়া তা বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।

সমঝোতার একটি নব্য ধ্রুপদি নজির স্থাপন করেছেন মাহাথির ও ইব্রাহিম। তারা প্রমাণ করেছেন, ‘সমঝোতা’ কোনো ফ্যান্টাসি নয়। বিদেশি শক্তির দয়াদাক্ষিণ্যের চেয়ে জনতায় ভরসা রাখাই শ্রেষ্ঠতম বিকল্প।

এছাড়া মাহাথির অকপটে স্বীকার করেছেন, তিনি ইব্রাহিমকে ফেলে দিয়ে ভুল করেছিলেন। সেটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছিল। সেই রাজনৈতিক ভুলের খেসারত দিয়েছেন তিনি। তবে সেটা মধুর। আনোয়ার বন্ধুবর মাহাথিরকে তার ও তার স্ত্রীর শর্তে প্রধানমন্ত্রী করে মধুর প্রতিশোধ নিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তার স্ত্রীর যোগ্যতা ও নেতৃত্বের প্রশংসা করতেই হবে। ইব্রাহিমের ব্যক্তিগত জীবনেই নয়, ইব্রাহিমের স্ত্রী গোটা জাতীয় রাজনীতিতে একটি আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছেন। তিনি সেই ‘বিজয়লক্ষ্মী নারী’। আনোয়ারের স্ত্রী প্রমাণ করেছেন, উত্তরাধিকারের রাজনীতি মানেই হিংসার চাষাবাদ নয়, তিনি প্রমাণ রেখেছেন কীভাবে শুধু জনগণের শক্তির ওপর আস্থা রেখে কারারুদ্ধ স্বামীকে কাছে না পেয়েও পরিস্থিতিকে নিজের অনুকূলে আনা যায়। অবশ্যই মাহাথিরের ক্যারিশমাকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। তবে মালয়েশিয়ায় চলমান রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে মাহাথির নায়ক, সার্বিক দিকে বিবেচনায় ইব্রাহিমই মহানায়ক।

আনোয়ার ইব্রাহীম ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন বা ইউএমএনও এর সদস্য থাকাকালীন সময়ে ১৯৯৩-১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং ১৯৯১-১৯৯৮ সাল পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু পরে তিনি প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ কর্তৃক বরখাস্ত হন এবং দুর্নীতি ও সমকামিতার দায়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

আনোয়ার ইব্রাহীম ১৯৪৭ সালে মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় পেনাং রাজ্যের চিরোক তক্কুন গ্রামে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ইব্রাহীম আব্দুল রহমান একজন হাসপাতালের কর্মচারী ছিলেন এবং পরবর্তীকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তার মা চে ইয়েন হুসেন একজন গৃহিণী ছিলেন।

আনোয়ার ইব্রাহীম তার শিক্ষাজীবন তার নিজ গ্রামে শুরু করেন। তিনি মালয় কলেজ কুয়ালা কানজার থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। ইউনিভার্সিটি অফ মালয় থেকে মালয় স্টাডিজ এ অনার্স এবং ১৯৭৪-৭৫ সালে জেলে থাকা অবস্থায় মাস্টার্স সমাপ্ত করেন।

প্রাথমিক জীবন (১৯৬৮-১৯৮২)

আনোয়ার ইব্রাহীম তার ছাত্রজীবনে ১৯৬৮-১৯৭১ সাল পর্যন্ত ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মালয়েশিয়ান মুসলিম স্টুডেন্টস এর সভাপতি ছিলেন। একই সময়ে তিনি ইউনিভার্সিটি অব মালয়া মালয় ল্যাংগুয়েজ সোসাইটির সভাপতি ছিলেন।

১৯৭১ সালে মুসলিম ইয়ুথ মুভমেন্ট অব মালয়েশিয়া সংগঠিত হলে এর সহযোগী প্রতিষ্ঠাতা ও প্রো কমিটির সদস্য ছিলেন এবং একই বছর তিনি মালয়েশিয়ান ইয়ুথ কাউন্সিল এর ২য় সভাপতি নির্বাচিত হন।

রাজনৈতিক জীবন (১৯৮২-১৯৯৮)

আনোয়ার ইব্রাহীম একজন ইসলামপন্থী নেতা (যিনি মুসলিম ইয়ুথ মুভমেন্ট অব মালয়েশিয়ার সহযোগী প্রতিষ্ঠাতা ও ২য় সভাপতি) হওয়ার পরেও ১৯৮২ সালে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের উদারপন্থী দল ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অরগনাইজেশন এ যোগ দেন এবং সংস্কৃতি মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। ১৯৮৩ সালে যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী, ১৯৮৪ সালে কৃষি মন্ত্রী এবং ১৯৮৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রী হন। শিক্ষা মন্ত্রীর পদ তার মালয়েশিয়ার ভবিষ্যৎ উপ-প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দ্বার খুলে দেয়। শিক্ষা মন্ত্রী হওয়ার পর আনোয়ার ‘ন্যাশনাল স্কুল কারিকুলাম’ প্রনয়ণ করেন। মালয়েশিয়ার জাতীয় ভাষার নাম ‘বাহাসা মালয়েশিয়া’ থেকে বাহাসা মেলায়ু এ পরিবর্তন করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান এবং ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তাতে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৮৯ সালে ইউনেস্কো সাধারণ অধিবেশন এর ২৫তম সভাপতি নির্বাচিত হন।

সংস্কার আন্দোলন ও পার্টি গঠন

প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বিন মোহাম্মদ আনোয়ারকে উপ -প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করলে, আনোয়ার ও তার সমর্থকরা ‘সংস্কার আন্দোলন’ শুরু করে। এ আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা বারিসন ন্যাশনাল সরকারের নীতি বহির্ভূত কর্মকান্ড বিলোপ করা। ১৯৯৮ সালে কুয়ালালামপুরে অ্যাপেক সম্মেলনে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ও অন্যান্য অ্যাপেক প্রতিনিধিদের সামনে আনোয়ার ও তার সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে ভাষণ দেন।

সংস্কার আন্দোলনের নেতা কর্মীদের নিয়ে ১৯৯৯ সালে আনোয়ার ন্যাশনাল জাস্টিস পার্টি গঠন করেন এবং একই বছরের সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্যে পার্টি ইসলাম সি মালয়েশিয়া ডেমোক্রেটিক এ্যাকশন পার্টি ও নব গঠিত ন্যাশনাল জাস্টিস পার্টি নিয়ে ‘বারিসন অল্টারনেটিভ’ নামে বিরোধী জোট গঠন করেন।

২০০৩ সালের আগস্টে আনোয়ারের পরামর্শে তার স্ত্রী ওয়ান আজিজাহ ন্যাশনাল জাস্টিস পার্টি ও মালয়েশিয়ান পিপলস্ পার্টি একীভূত করে পিপলস্ জাস্টিস পার্টি গঠন করে। ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে পিকে আর,পাস এবং ড্যাপ মিলে পাকাতান রাকাত নামে জোট গঠন করেন। যা ২০০৮ এর সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং ৩১টি আসন জয়লাভ করে বিরোধী দলে পরিণত হয়।

এরপর চলতি বছরের ৯ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন পাকাতান হারাপান জোট ২২২ আসনের পার্লামেন্টে ১১২ আসনে বিজয়ী হয়। এর মধ্যে আনোয়ারের পিকেআর পায় ৪৮ আসন।

রাজকীয় ক্ষমা

নির্বাচনে আনোয়ারের জোট বিজয়ী পর মাহাথির মোহাম্মদ তাকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্তি দেয়ার কথা বলেছিলেন। ১৬ মে তাকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ফলে তিনি আবারো রাজনীতিতে ফিরতে পারবেন। বুধবার রাজকীয় ক্ষমার বিষয়ে আলোচনার পর তাকে মুক্ত ঘোষণা করে ক্ষমা প্রশ্নে গঠিত কমিটি।

মালয়েশিয়ার রাজা ইয়াং দি পারতুয়ান এগংয়ের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, আনোয়ারের মুক্তি নিয়ে চলমান প্রক্রিয়ার অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্ট রাজা।

বিরোধী জোটের নেতৃত্ব নেওয়ার সময় মাহাথির চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন, জোট ক্ষমতায় এলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন। তবে এর দুই বছরের মধ্যে আনোয়ার ইব্রাহিমের মুক্তি নিশ্চিত করে তার কাছে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন তিনি। শপথ নিয়ে মাহাথিরও বলেছিলেন, দ্রুতই আনোয়ারের মুক্তি নিশ্চিত করবেন তিনি।

বন্ধু থেকে শত্রু, শত্রু থেকে ফের বন্ধু

মাহাথির মোহাম্মদ এবং আনোয়ার ইব্রাহিম দুজন প্রথমে বন্ধু, তারপর শত্রু ও পরে জোটের মিত্র হয়েছেন। তাদের এমন পরিবর্তনশীল সম্পর্কই গত তিন দশক ধরে মালয়েশিয়ার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এমনকি জোটের ভবিষ্যৎও এই দুজনের সম্পর্কের ওপরই নির্ভর করছে।

আনোয়ার ইব্রাহিম ও মাহাথির মোহাম্মদ একসময় ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। কিন্তু মতপার্থক্যের জেরে ১৯৯৮ সালে উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আনোয়ার ইব্রাহিমকে সরিয়ে দেন মাহাথির। এরপর সমকামিতার অভিযোগে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে রাজনৈতিক পালাবদলের ধারাবাহিকতায় সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে হটাতে তারা আবার মিত্রে পরিণত হন।

-একে

আনোয়ার ইব্রাহিম,মালয়েশিয়া
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close