কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার ও হেফাজতের সংশ্লিষ্টতা নেই: আল্লামা শফী
হেফাজতে ইসলামের আমীর এবং কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাক ও আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, আমার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। রাজনৈতিক কোনো দলের সঙ্গে আমার ও হেফাজতে ইসলামের নীতিগত সংশ্লিষ্টতা নেই। মনে রাখবেন, মুসলমানদের ঈমান-আকীদা ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে রক্ষা করাই হেফাজতে ইসলামের মূল লক্ষ্য। হেফাজতে ইসলামের নীতি ও আদর্শের ওপর আমরা অটল-অবিচল আছি। আমার কর্মকৌশল সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার সুযোগ নেই। আমার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে অপব্যাখ্যা, মিথ্যাচার করার অবকাশ নেই।
রোববার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি মাদরাসা সনদের স্বীকৃতি প্রদান উপলক্ষে আলেম-ওলামাগণ কর্তৃক আয়োজিত শুকরানা মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সম্পর্কিত খবর
আল্লামা শফী বলেন, প্রধানমন্ত্রী দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর সমমান মর্যাদা দিয়েছেন। তার এই স্বীকৃতিতে লাখো কওমী ওলামা ধন্য হয়েছে। এই অসামান্য অবদান ইতিহাসের সোনালী পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, ওলামাদের দাবির প্রতি সম্মান দিয়ে শত আপত্তি ও বাধা উপেক্ষা করে ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে কওমী মাদ্রাসার বিলটি পাস করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকতা ও সাহসিকতার যে ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছেন, নিঃসন্দেহে তা কওমী ওলামাদের প্রতি তার দরদপূর্ণ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক শুকরিয়া ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি। কেন না, মানুষের শুকরিয়া একটি নৈতিক দায়িত্ব।
হেফাজত আমির বলেন, কওমী মাদ্রাসা হচ্ছে জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সূচনালগ্ন থেকে সরকারি প্রভাবমুক্ত থেকে আল্লাহ তা’য়ালার উপর নির্ভরশীল হয়ে দল-মত-নির্বিশেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আর্থিক সহযোগিতায় পরিচালিত হয়ে আসছে। ব্রিটিশ আমল থেকে অত্যন্ত বৈরি পরিবেশ ও হাজারো ঘাত-প্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে আলেম সমাজ কোরআন-সুন্নাহর শিক্ষা বিকশিত করে আসছে।
তিনি বলেন, কওমী মাদ্রাসা মূলত জনগণেরই প্রতিষ্ঠান। জনগণ আতঙ্কিত কিংবা কোনো রকম বিভ্রান্ত হয়, এমন কাজ সঙ্গতভাবে কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক করে না, করতে পারে না। জনগণের নৈতিক ও আত্মিক উন্নতি সাধনই তাদের অন্যতম দায়িত্ব।
শাহ আহমদ শফী বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নানা ফিৎনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে মুসলমানদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও বিভেদ বাড়ছে। আমাকে ও হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলক প্রোপাগান্ডা ও মিথ্যাচার চালাচ্ছে। কোনো ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্যক্তি বিশেষের কথায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। মুসলিম উম্মাহর বর্তমান সঙ্কটকালে আলেম-ওলামাসহ সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের শিশাঢালা প্রচীরের মতো ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকা সময়ের দাবি।
হেফাজতে ইসলামের আমীর বলেন, আমি জীবনের শেষ প্রান্তে পা রেখেছি, বিভিন্ন রোগ-শোক, ব্যাধি-বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা সত্ত্বেও আল্লাহর দরবারে শুকর গুজার করছি, ইসলাম ও মুসল্লিম উম্মাহর কল্যাণের জন্য জীবনের শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত নিঃস্বার্থভাবে দ্বীনের খেদমত করে যাওয়াই হচ্ছে আমার একমাত্র তামান্না। আপনারা অবগত আছেন যে, কওমি সনদ স্বীকৃতির ঐতিহাসিক দাবিটি দীর্ঘদিনের। অতীতে এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দেশের ওলামা-কেরাম বহু আন্দোলন করেছেন। ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে বারবার, কিন্তু এই স্বীকৃতির ন্যায্য দাবিটি পূরণ হয়নি। সম্প্রতি বেফাকসহ অন্যান্য বোর্ড সমূহের যৌথ উদ্যোগ ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে বর্তমান সরকার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্বীকৃতির দাবিটি ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশ, জাতি ও ধর্মের কল্যাণে কওমী ওলামা-কেরামদের ঐতিহাসিক অবদান রয়েছে। তাদের মনের ভাষা, আবেগ, চিন্তা-চেতনা, অনুধাবন ন্যায্য দাবির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে শত আপত্তি ও বাধা উপেক্ষা করে কওমি সনদের বিল পাস করে শেখ হাসিনা আন্তরিকতা ও সাহসিকতার সহিত সেই ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছেন। এটা নিঃসন্দেহে তার কওমি ওলামা-কেরামদের প্রতি দরদপূর্ণ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক শুকরিয়া করছি, মোবারকবাদ জানাচ্ছি। কেননা, মানুষের শুকরিয়া আদায় করা নৈতিক ও দ্বীনই কর্তব্য।
কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, কওমি মাদরাসা জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সূচণালগ্ন থেকে সরকারী প্রভাব মুক্ত থেকে আল্লাহ-তায়ালার প্রতি নির্ভরশীল হয়ে দল-মত নির্বিশেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সহযোগিতায় পরিচালিত হয়ে আসছে। ব্রিটিশ আমল থেকে বৈরী পরিবেশ ও হাজারও ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আলেম সমাজ কোরআন ও সুন্নাহ শিক্ষা বিকশিত করে আসছে। কওমি মাদরাসা মূলত জনগণের প্রতিষ্ঠান। জনগণ আতঙ্কিত হয়, জনমত বিভ্রান্ত হয় এমন কোনো কাজ সংগত কারণে কওমি মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্রগণ করে না, করতে পারে না। জনগণের নৈতিক ও আত্মিক সাধন তাদের অন্যতম দায়িত্ব।
কওমি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, স্বীকৃতির মাধ্যমে আমাদের সামাজিক অবস্থান সুদৃঢ় ও উজ্জ্বল হয়েছে। দ্বীনই খেদমতের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। নিজেদের মেধা ও প্রতিভা কাজে লাগিয়ে সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করায় সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে আহমদ শফী বলেন, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে আপনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। আপনার শাসনামলেও লাখ লাখ কওমি-কেরামের সনদের স্বীকৃতির দ্বারা ধন্য হয়েছে। আপনার এ অসামান্য অবদান ইতিহাসের সোনালি পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আপনার কাছে আমাদের প্রত্যাশা, আল্লাহ, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)ও সাহাবা-কেরামদের বিরুদ্ধে অবমাননা বন্ধ, নবীজীর মহান বৈশিষ্ট্য খতমে নবুয়াতের আকীদা বিশ্বাস পরিপন্থী অপপ্রচার রোধ এবং দ্বীনের দাওয়াতের সঠিক কাজ ওলামা-কেরামদের মাধ্যমে ব্যবস্থা করুন।
আল্লামা শফীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুফতি নুরুল আমীন। বক্তব্য শেষে আল্লামা শফী শুকরিয়া স্মারক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন।
/একে