Most important heading here
Less important heading here
Some additional information here
Emphasized textSome additional information here
Emphasized textমানুষ পৃথিবীতে আসে। কিছুদিন জীবনযাপন করে। এরপর বিদায় নেয় মৃত্যুতে। এরকম কতো মানুষ আসে। কতো মানুষ যায়। আপনজনও একদিন তাকে ভুলে যায়। এটাই দুনিয়ার রীতি। কিন্তু যিনি কীর্তিমান, মানুষের মনে অপার ভালোবাসা যিনি রেখে যান, তাকে কেউ বিস্মৃত হয় না। তিনি থাকেন এবং বার বার ফিরে আসেন আমাদের মধ্যে।
এমনই একজন মানুষ সঞ্জীব চৌধুরী, আমাদের প্রিয় সঞ্জীব দা। একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার এবং সাংবাদিক। আজ তার মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৭ সালের এই দিনে তিনি বাইলেটারেল সেরিব্রাল স্কিমিক স্ট্রোকে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দেখতে দেখতে চলে গেলে ১১ বছর। আজকের এই দিনেেই বড় অসময়ে দুনিয়াকে বিদায় বলেছিলেন সঞ্জীব চৌধুরী। গানের দলছুট সঞ্জীব, সাংবাদিকদের প্রিয় সঞ্জীবদা।এত বছর পরও তাকে মনে পড়ে, গলার কাছে জমাট পাকানো বেদনা বোধ করি।
ভোরের কাগজের মেলাতে আমিও ছিলাম। আহা, দুর্দান্ত সব ফিচারে ঠাসা থাকতো সেটি। সেই মাস্টারপিস মেলাতে কিছুদিন কাজ করলেও আমি সঞ্জীব চৌধুরীকে পাইনি। কাজ করেছিলাম আবিদা নাসরীন কলি আপার সঙ্গে, সরাসরি সঞ্জীবদার সঙ্গে কাজের সৌভাগ্য হয়নি। তবে পরিচয় ছিল, ঘণিষ্ঠতাও গড়ে ওঠেছিল। সঞ্জীব চৌধুরী তখন যায় যায় দিনে, অফিস নিউ ইস্কাটনে। বলেছিলেন, তোর লেখা আমি পছন্দ করি। ডাকবো তোকে শিগগিরই। তৈরি থাকিস। আমি তৈরি ছিলাম। কিন্তু সেই ডাক আর আসেনি, আসবে না কোনোদিনই।
চির বোহেমিয়ান প্রকৃতির সঞ্জীব চৌধুরীকে তার প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।
১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের মাকালকান্দি গ্রামে সঞ্জীব চৌধুরীর জন্ম। বেঁচে ছিলেন মাত্র ৪৮ বছর। এই অল্প সময়ের মধ্যে সাংবাদিকতা, সঙ্গীত ও বোহেমিয়ান জীবনের জন্য প্রায় কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন তরুণ প্রজন্মের কাছে। সাংবাদিকতা জীবনে কাজ করেছেন আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও দৈনিক যায়যায়দিনে। তার হাত ধরেই মূলত দৈনিক পত্রিকায় ফিচার বিভাগের শুরু। তিনি শুধু লেখেননি, লিখিয়েছেন, শিখিয়েছেন। এদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে আছেন অনেক গুণী সাংবাদিক যাদের হাতেখড়ি হয়েছে সঞ্জীব চৌধুরীর কাছে। রীতিমতো হাতে ধরে শিখিয়েছেন তিনি কীভাবে ছোট বাক্যে ফিচার লিখতে হবে, কীভাবে শব্দগঠন করতে হবে, কীভাবে সাক্ষাৎকার নিতে হবে ইত্যাদি।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি সংগীতশিল্পী হিসেবেও ছিল সঞ্জীব চৌধুরীর তুমুল জনপ্রিয়তা। জনপ্রিয় বাংলা ব্যাণ্ডদল ‘দলছুটের’ অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। দলছুটের চারটি অ্যালবামে গান গাওয়ার পাশাপাশি অনেক গান রচনা ও সুরারোপও করেন। তিনি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। তার গাওয়া জনপ্রিয় গানের মধ্যে গাড়ি চলে না, তোমার বাড়ির রঙের মেলায়, আমি তোমাকেই বলে দেবো, আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল চাঁদ, কার ছবি নেই, আমার স্বপ্নেরই কথা বলতে চাই, চোখটা এত পোড়ায় কেন, ধরি মাছ না ছুঁই পানি, এই কান্না ভেজা আকাশ উল্লেখযোগ্য।
সঞ্জীব চৌধুরী ১৯৭৮ সালের মাধ্যমিক এবং ১৯৮০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান অর্জন করেন। তিনি স্কুল জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হন। কলেজ জীবনেও তিনি এ সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নের নিবেদিত প্রাণ ও সক্রিয় সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। গড়ে তোলেন শক্তিশালী সাংস্কৃতিক টিম। তিনি এ সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের একজন কর্মী ও সংগঠক ছিলেন তিনি।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পড়েন সঞ্জীব চৌধুরী। তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে। ১৮ নভেম্বর তিনি সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে যান না-ফেরার দেশে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী খন্দকার আলেমা নাসরীন শিল্পীস্ত্রী এবং চার বছরের কন্যা সন্তান কিংবদন্তিকে রেখে গেছেন।
হাসিখুশি, আনন্দ-উচ্ছল, সৃজনশীল এক প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন সঞ্জীব চৌধুরী। ছিলেন অসম্ভব প্রতিভাবান। 'ছুঁয়ে কান্নার রঙ ছুঁয়ে জোস্নার ছায়া' তিনি চলে গেছেন। তার ক্ষণিক সংস্পর্শ আমরা যারা পেয়েছি, নিজেদের ভাগ্যবান মনে করি।
লেথক: বার্তা সম্পাদক, পূর্বপশ্চিম