• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ড. কামাল কেন পাপের বিষ ধানের শীষ নিলেন

প্রকাশ:  ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০১:৫২ | আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:০৫
পীর হাবিবুর রহমান

গণরায়ের কাউন্টডাউন এখন শেষ পর্বে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক শক্তিনির্ভর গণফোরাম সভাপতি সংবিধান প্রণেতা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভোটযুদ্ধের ফলাফল দেখার অপেক্ষায় দেশ। একদিকে শেখ হাসিনার হাতে এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক নৌকা এবং মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টির ২৭টি লাঙ্গল শোভা পাচ্ছে।

ভোটের ময়দানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইমেজ ও তার প্রতি রাজনৈতিক জনসমর্থন ঘিরে নৌকা যেমন ভাসছে গণজোয়ারে, তেমনি নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়া ড. কামাল হোসেনের হাতে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াত ও সর্বশেষ শাসনামলের পাপের ভারে নিমজ্জিত নেতৃত্বহীন ভঙ্গুর বিএনপির ধানের শীষ ভোটারদের কাছে আকর্ষণ হতে পারেনি।

সম্পর্কিত খবর

    শেখ হাসিনার বিগত ১০ বছরের শাসনামলের টানা উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ এবং প্রজ্ঞা, মেধা ও দক্ষতায় উপমহাদেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বনেতৃত্বের মাঝে নিজের সুসংহত অবস্থান তাকে দেশবাসীর সমানে এতটাই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়েছে যে, এবার মহাজোট নেতাকর্মীরা তার নেতৃত্বের ইমেজকেই কাজে লাগিয়ে ভোটের ময়দানে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। উপমহাদেশের ভোট রাজনীতির সংস্কৃতির মতো এবারের নির্বাচনেও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় বিচ্ছিন্ন হামলা এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও সব দলের অংশগ্রহণে ভোটের দামামা বেজে ওঠায় দেশজুড়ে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষ ভোটের উৎসবে মেতেছে।

    ভারতের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির ইমেজ, ক্যারিশমা ও ভোটযুদ্ধের প্রচারণা কৌশলে এতটাই সফল হয়েছিলেন যে, বিজেপির নাম ভুলে স্লোগান উঠেছিল ‘আব কি বার, মোদিকা সরকার’ মানে ‘এইবার মোদির সরকার’। সেই স্লোগানের সামনে সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস জোট ভোটের ময়দানে নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছিল। ড. মনমোহন সিংয়ের ১০ বছরের শাসনামল সেই ভোটযুদ্ধে কোনো প্রভাব ফেলা দূরে থাক, নির্বাচনী ফলাফলে অসার প্রমাণিত হয়েছিল। সেই ভোটের ফলাফলে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে কংগ্রেসকে শোচনীয় পরাজয়বরণ করতে হয়েছিল।

    বিএনপির একটি শক্তিশালী সরকারবিরোধী বিরোধী দল হিসেবে জনপ্রিয়তা থাকলেও এই ভোটযুদ্ধে ভোটারদের মধ্যে প্রভাব ফেলতে পারেনি। তাদের নির্বাচনী ইশতেহার মানুষের মনে আলোড়ন তৈরি করতে পারেনি। বিএনপির প্রাণ তাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অযোগ্যই হননি, কারাগারে রয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে নির্বাসিত জীবনযাপনই করছেন না একুশের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাসহ নানা মামলায় যাবজ্জীবন থেকে বিভিন্ন মেয়াদে দন্ডেদন্ডিত। নেতৃত্বহীন বিএনপি নেতাকর্মীরা হতাশা, বিষাদ ও মানসিক দুর্বলতা নিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন।

    ১০ বছর পর নির্বাচনে এলেও প্রস্তুতি যে কতটা দুর্বল ছিল সেটি প্রমাণ হয়েছে তাদের অনেক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের মধ্য দিয়ে। মাঝখানে মনোনয়ন বাণিজ্যের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ শুধু মানুষের মধ্যেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি, দলের কর্মীদের বিভক্তিকে মাঠপর্যায়ে শক্তিশালী করেনি, নির্বাচনকেও নিষ্প্রাণ করে দিয়েছে।

    অন্যদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে জেদ্দাভিত্তিক পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কর্মকর্তা মেহমুদের টেলিফোন কথোপকথন ফাঁস, তাদের পরামর্শে লন্ডন থেকে তারেক রহমান অনুমোদিত প্রার্থীদের মনোনয়ন এবং ঢাকায় বসে এক একটি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন নিলামে তুলে প্রমাণ করেছে বিএনপি নিজেদের বদলাতে পারেনি। মানুষের আবেগ-অনুভূতি এবং আড়াই কোটি নতুন ভোটার যারা মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারিত্ব বহন করে তাদের মনের চাহিদাকে অবজ্ঞা করে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতকে নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পরও ২২টি আসনে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে নতুন করে বিতর্কিত হয়েছে। প্রমাণ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর সঙ্গে বিএনপি আর যাই হোক সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারবে না।

    এদিকে, শেখ হাসিনার ১০ বছরের শাসনামলে সুশাসন প্রশ্নবিদ্ধ হলেও তার নেতৃত্বের ক্যারিশমায় দেশের অর্থনৈতিক খাতের বিশাল অর্জন সারা দেশের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ এমনকি ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয়দান তার ইমেজকে দেশে-বিদেশে বিশ্বাস ও আস্থার জায়গায় নিয়েছে। সবাই বলছেন, শেখ হাসিনা পারেন, শেখ হাসিনাই পারবেন। তাই এবার আওয়ামী লীগের সরকার বা মহাজোটের সরকার দরকার বলে স্লোগান ওঠেনি-সারা দেশে স্লোগান উঠেছে, ‘শেখ হাসিনার সরকার, বার বার দরকার’।

    শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট যেভাবে ব্যাপক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়ে ভোটের ময়দানে নেমেছে, যেভাবে প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করেছেন এমনকি যেভাবে দেশের বিভিন্ন পেশার মানুষ ডিজিটাল প্রচারণায় যুক্ত হয়ে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন, সেখানে ধানের শীষ দেশজুড়ে ভোটের ময়দান সরব করতে পারেনি। মনোনয়ন দান থেকে নির্বাচনী প্রচারণা এবং নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণায় শেখ হাসিনার মহাজোট কতটা পরিকল্পিত ও গোছানো সেটি দেশের মানুষ দেখতে পাচ্ছে।

    অন্যদিকে, সরকারবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি একদিকে অতীত শাসনামলের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অপবাদ যেমন মুছে ফেলতে পারেনি, তেমনি অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আত্মসংশোধনের পথে দেশকে নতুন কিছু দিতে পারবে এই আশা জাগাতে পারেনি। নিজেদের ইমেজ সংকট, প্রশ্নবিদ্ধ ভাবমূর্তি ও নেতৃত্বশূন্যতার মুখে ড. কামাল হোসেনকে নেতা মেনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে। কিন্তু ধানের শীষে মানুষ ভোট দিলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী, কে ধরবেন রাষ্ট্রের হাল, সেই নেতৃত্ব সামনে আনতে পারেনি। শেখ হাসিনার ইমেজের সামনে শক্তিশালী নেতৃত্ব দাঁড় করানো দূরে থাক মানুষকে সম্মোহন করতে পারে এমন নেতা সামনে আনা দূরে থাক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো তাদের জোটে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বকে সামনে আনতে পারেনি।

    মাঝখানে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিএনপির অঘোষিত প্রধানমন্ত্রী হবেন লন্ডন নির্বাসিত ও একুশের গ্রেনেড হামলায় যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তারেক রহমান, যা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন নির্বাচন করছেন না, তাকে বড়জোর রাষ্ট্রপতি দিতে পারে ক্ষমতায় এলে বিএনপি। এমন হতাশাগ্রস্ত রাজনীতি থেকে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের নজির অতীতে কোনো দলের ভাগ্যে যেমন ঘটেনি, এবারও যে ঘটবে না, সেটি মানুষের মধ্যে আলোচনায় ঠাঁই পেয়েছে।

    শেখ হাসিনার টানা ১০ বছরের শাসনামলে তার দল, মহাজোট সমর্থকরাই সংগঠিত হয়নি, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও হরতাল-অবরোধমুক্ত মহাউন্নয়ন কর্মযজ্ঞের বাংলাদেশ প্রশ্নে ভোটারদেরও নিজেদের পক্ষে জাগিয়েছে। মনোনয়ন দান থেকে ভোটের লড়াই করছে পরিকল্পিত গোছানোভাবে। অন্যদিকে বিএনপি ২০ দল, ঐক্যফ্রন্ট সব মিলিয়ে ছেঁড়াবেড়া অবস্থা।

    ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগের ১৯৯২-এর কাউন্সিলের পর গণফোরাম গঠনকালে তার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ থেকে শেখ হাসিনাকে যে পদত্যাগপত্র দিয়েছিলেন সেখানে বলেছিলেন, এই দল আওয়ামী লীগের সহযাত্রী হবে, পরিপূরক শক্তি হবে। তার সঙ্গে যারা যোগ দিয়েছিলেন, তাদের নিয়ে তিনি গণফোরামকে শক্তিশালী করতে পারেননি। এতে আবুল মাল আবদুল মুহিত ও নুরুল ইসলাম নাহিদরা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। শাজাহান সিরাজরা বিএনপিতে গিয়ে এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক এই দল করে মৃত্যুবরণ করেছেন। পঙ্কজ ভট্টাচার্যরা দূরে সরে গেছেন। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে ড. কামাল হোসেন তাদের পাপাচার, অনাচার ও হাওয়া ভবনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, এমনকি একুশে আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার গণতদন্ত কমিশনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ১৪ দলেও এসেছিলেন।

    ড. কামাল হোসেন আমার কাছে একজন শ্রদ্ধার মানুষ। বঙ্গবন্ধু তাকে রাজনীতিতে এনেছিলেন। ৩৪ বছর বয়সে তিনি জাতির জনকের আইনমন্ত্রী ও ৩৬ বছর বয়সে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন। গণফোরাম শক্তিশালী না হলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির একজন হিসেবে ড. কামাল হোসেন অনেকের কাছে শ্রদ্ধার মানুষ। সংবিধান ও আইনের শাসন এবং শক্তিশালী গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি নিরন্তর কথা বলেছেন। সৎ মানুষের রাজনীতির স্লোগান ছড়িয়েছেন।

    অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ ও কমরেড মণি সিংহরা ক্ষমতার রাজনীতি করেননি। আদর্শের রাজনীতি করেছেন। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেন জাতির বিবেক হয়ে দিকনির্দেশনামূলক কথা বলে বাকি জীবন কাটাতে পারতেন, নতুন প্রজন্মকে আদর্শিক রাজনীতির পরামর্শ দিয়ে ভূমিকা রাখতে পারতেন, রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা ও সামাজিক অসঙ্গতি নিয়ে তার মতামত দিয়ে যেতে পারতেন, এমনকি তিনি আদর্শিক জায়গা থেকে এই নির্বাচনে সব বাম গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিয়ে নতুন ভোটারদের সম্পৃক্ত করে ক্ষমতায় আসুন না আসুন ভোটের লড়াইয়ে অংশ নিয়ে আদর্শ ও সততার রাজনীতির স্লোগান ছড়িয়ে দিতে পারতেন। এমনকি দেশের মানুষের শ্রদ্ধা ও সম্মান নিয়ে রাজনীতি থেকে অবসর নিতে পারতেন। কিন্তু অবসর না নিয়ে ড. কামাল হোসেন কেন বিএনপি-জামায়াতের অভিশপ্ত শাসনামলের পাপের বিষ ধানের শীষ কাঁধে তুলে নিলেন।

    একজন সংবাদকর্মীর প্রশ্নে তিনি বিরক্ত হয়েছেন, এ নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই, কিন্তু যে বিএনপির নেতৃত্বে ও মনোনয়ন দানে তারেক রহমানের হাত প্রসারিত, যেখানে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দোসর জামায়াতে ইসলামীও ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করছে এবং এই দলটিকে এখনো বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে রেখে ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব গ্রহণ করে ড. কামাল হোসেন কার্যত জামায়াতকেই কবুল করেছেন। সেনাশাসক এরশাদের সঙ্গেও এই ড. কামাল হোসেন যেখানে একমঞ্চে বসেননি, কখনো হাত মেলাননি, সেই মানুষটি জীবন সায়াহ্নে এসে সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের দল বিএনপিকে রক্ষার দায়িত্বই নেননি, জামায়াতকেও সঙ্গী করেছেন-ভাবলে অসংখ্য মানুষের মন বিষাদগ্রস্ত হয়। এর কোনো হিসাব মেলে না।

    পর্যবেক্ষকরা বলেন, যে শক্তি যেনতেন উপায়ে যেভাবেই হোক আগে ক্ষমতা থেকে মুজিব-কন্যা শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবেন, ড. কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর আপনজন হয়েও আজ সেই অবস্থান নিয়েছেন। রাজনীতির জন্য এটি যতটা না বেদনাদায়ক, তার চেয়ে বেশি ড. কামাল হোসেনের সারা জীবনের অর্জনকে মোটাদাগে প্রশ্নবিদ্ধ করা। ড. কামাল হোসেনের এই রাজনীতি এই ঐক্য যেখানে তার শক্তির উৎস ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সারা দেশকে প্রতিহিংসা, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের মদদ ও অসংখ্য রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের রক্তমাখা বিএনপি ও মুক্তিযুদ্ধের অভিশপ্ত দল জামায়াতে ইসলামী রয়েছে, সেখানে নির্বাচনী ফলাফল ঘরে তোলা দূরে থাক, নিজের সারা জীবনের অর্জনকে ধুলোয় লুটিয়ে দেওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা রয়েছে।

    এ জায়গায় দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা যেখানে বলছেন, এবার ক্ষমতায় এলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি কঠোর অবস্থান নেবেন, সুশাসন নিশ্চিত করবেন এবং দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবেন, সেখানে জনগণ সুমহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের ঠিকানায় দাঁড়িয়ে পাপের বিষ ধানের শীষকে প্রত্যাখ্যান করে নৌকাকেই ব্যালট বিপ্লবে ভাসাবে। জামায়াত যেখানে চিহ্নিত, বিএনপি যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ ও অতীত শাসনামলের পাপে ক্ষতবিক্ষত, সেখানে এই দলকে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষার একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ও সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ড. কামাল হোসেন করবেন সেটি আর যাই হোক মানুষ বিশ্বাস করে না।

    এখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর অদৃশ্য কর্তৃত্ব থাকলেও তার একটি ক্লিন ইমেজ রয়েছে, সেখানে ভোট ময়দানে দলের ওপর তার নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব না থাকলেও মানুষ বড়জোর তাকে নিয়ে সংসদের বিরোধী দলের নেতার স্বপ্ন দেখতে পারে। অনেকের বিবেচনায় কোনো যুক্তি আসছে না, ড. কামাল হোসেনের মতো একজন পরিচ্ছন্ন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও আইনজ্ঞ কেন এই ভোট লড়াইয়ে বিএনপি-জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে পাপের বিষ ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চাইছেন? ড. কামাল হোসেনই পারেন এর ব্যাখ্যা দিতে। যদিও এই শক্তিকে নিয়ে নেতৃত্বের জায়গায় থেকে যে ব্যাখ্যাই দিন না কেন, তার যুক্তি হবে অতিশয় দুর্বল এবং তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। ড. কামাল হোসেন রাজনীতি থেকে অবসর নিতে পারতেন-এর বাইরে আমি তার সামনে নিজের সম্মান রক্ষার আর কোনো পথ দেখছি না।

    লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

    সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close