• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

হতাশ মওদুদের ফোনালাপ ফাঁস, বিএনপিতে বিভক্তি (অডিও)

প্রকাশ:  ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:৩৩ | আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:২০
নিজস্ব প্রতিবেদক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র একদিন। এরই মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বে টালমাটাল হয়ে পড়েছে সরকারবিরোধী দল বিএনপি।

শুক্রবার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলুর একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। আর তাতেই প্রকাশ পেয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে চলমান মতবিরোধ। ১০ মিনিটের ফোনালাপে মওদুদ আহমদ অভিযোগ করেছেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার ফোন ধরছেন না। একই কাজ করছেন দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুও। আর সব জেনে চুপ রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি সব সিদ্ধান্ত দলের সিনিয়র নেতাদের হাতেই ছেড়ে দিয়েছেন। এতে দলের শীর্ষ নেতাদের অন্তর্দ্বন্দ্বে আরও প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে।

মওদুদ আহমদ ও বরকতউল্লাহ বুলুর একটি ফোনালাপ তুলে ধরা হলো:

বুলু: মওদুদ ভাই, আসসালামু আলাইকুম।

মওদুদ: হ্যা, বুলু, বলো ভাই। বুলু: এখন কি করবেন? আমার তো মনে হয় ২৮ তারিখে টাকা খরচ করে আর বসে থেকে লাভ কী? ৩০০ আসনে আমরা ইয়া করে দিই।

মওদুদ: এটা নিয়ে অনেক। বুলু, তুমি তো জানো। আমি গত ১৫ দিন পাবৎ বলে আসছি। আামার কথা শোনেই না। এখন তোমার মহাসচিব আমার টেলিফোন ধরে না। বুলু: ও। মহাসচিব আর টেলিফোন ধরে না? মহাসচিব কি সাপের ঠ্যাং দেখছেনি?

মওদুদ: সারাদিন আমার টেলিফোন ধরেনি কালকে। তারপরে শোনো। রাত্রে তারেক রহমান আমাকে ফোন করলো। আমি তাকে বললাম, ওই মহাসচিব কেন ফোন ধরে না সে নিশ্চয় জানে। লাস্ট টাইমে মহাসিচবকে আমি যখন ফোন করেছি, খুব কড়া ভাষায় কথা বলেছি। আমি খুব কড়া ভাবে বলছিলাম। তো যাই হোক। গতকাল না বোধহয় পরশুদিন স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং ডাকছিলো। মিটিংয়ে বলেছি আমি যাব না। আমার মতামত তো আমি দিয়েই দিয়েছি। স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে মহাসচিব তারেক রহমানকে বলেছে, এইখানে মাত্র কয়েকজন এসেছে। সবাই আসেনি। এইসব বলেছে। যাই হোক, তারেক রহমানকে আমি এটা পুরাটা বলেছি। দেখেন, ইলেকশন করার কথা ছিল আন্দোলন করার জন্য। তা আপনাদের আন্দোলনের ইস্যুটা কী? আন্দোলনের ইস্যু কোনটা তৈরি করেছেন আপনারা। আমরা বারবার বলেছি, যদি ৩০০ ক্যান্ডিডেটকে ঢাকায় ডাকা হতো, আর ঢাকায় যদি আমরা ৩০০ ক্যান্ডিডেট যেখানে ইচ্ছা বসে যেতাম, এটা দুনিয়া কাঁপায় দিতো। আমরা বলতাম যে, আমরা এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন করবো না। ফিনিশ। বলতাম, নির্বাচন পিছায় দাও। এখনও টাইম আছে। এবং নির্বাচনের পরিবেশে সৃষ্টি করো। এই যে গত ৮-১০ দিনে আমাদের যত মামলা হয়েছে সব প্রত্যাহার করতে হবে এবং সবাইকে যারা জেলে নিয়ে গেছে তাদের মুক্তি দিতে হবে। জেনুইন তো, এগুলো জেনুইন ডিমান্ড। কিন্তু করে না তো। কী করবো বলো। তারেক রহমান বললো, আপনারা সিনিয়ররা বসে আপনারা বলেন। আমি বলি, এখানে সিনিয়রদের করার কী আছে? একটা মিটিং পর্যন্ত সে করলো না, মহাসিচব। সে ওই সংবাদ সম্মেলন করে। ড. কারাশ হোসেনের সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের আন্দোলন হবে নাকি? তুমি যদি এই নির্বাচন…

বুলু: না না, আমাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার আমরা ৩০০ লোক যাই, নির্বাচন কমিশনের সামনে বসে যেতাম যে এইগুলা ই করো নাহলে আমরা ভোট করবো না।

মওদুদ: হ্যা। বলতাম যে পদত্যাগ করেন। এইটাই তো আন্দোলন। এইটাই তো বিরাট আন্দোলন হতো। তারপরে যদি ৩০ তারিখে নির্বাচন করতো তারপরে তো আমাদের আন্দোলন কন্টিনিউ করতো। বুলু: হ্যা হ্যা।

মওদুদ: এখন নির্বাচন যদি একবার হয়ে যায় আমি বললাম তারেক রহমানকে, ৩০ তারিখ তারা ঘোষণঅ দিয়ে দিবে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, নির্বাচনে কোনো অসুবিধা হয় নাই এবং নির্বাচন সুষ্ঠিু হয়েছে। নির্বাচনে নৌকার জয়জয়কার হয়েছে এবং দেশেরে মানুষ আমাদের উপর কনফিডেন্স আছে। এইসব বইলা টইলা আমাদের আন্দোলন করার আর কোনো সুযোগ থাকবে না। বুলু: উনি কি বললো?

মওদুদ: উনি বললেন, হ্যা এইটা ঠিক বলেছেন, ইত্যাদি। এইটা তো আপনারাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নির্বাচনে যাবেন। হ্যা, আমরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নির্বাচনে যাব। বুলু: আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি করলাম আর কি। কিন্তু বাকিটা তো কার্যকর করতে হবে।

মওদুদ: এগজ্যাক্টলি, এগজ্যাক্টলি। তো এইটা বলেছি যাই হোক। অনেকক্ষণ কথা বলে আমারও যা ছিল বলার বলে দিছি। বুঝছো? আজকে তো দেখো কালকে আমার গাড়ি ভাঙলো, আমি তো বের হইনাই। বুলু: না, আমিও তো বাইর হই নাই। আমার এখানেও তো, জমিদারহাটে, আমি ছিলাম, অ্যাডভোকেট রহিম সাহেব সব ছিলাম। এমন গুলি, বোম, ইট.. মানে এই লাঠিপেটা। এই জঘন্য ভাবে।

মওদুদ: তারপরে সেনাবাহিনী আসার পরে অবস্থা আরও অবনতি হইছে। আমার এখানে তো সেনাবাহিনী কালকে নামছে কালকেই আমার গাড়ি ভাঙছে। হা হা হা। আমি ওনাদের অফিসে ফোন করেছিলাম। ফোন করে সব বলেছি। কর্নেল মনির হলো তোমাদের ইনচার্জ, নোয়াখালীর ইনচার্জে আছেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল। ভালো মানুষ। ওনাকে বললাম। উনি সব শুনলেন। বললেন যে, ঠিক আছে আমি দেখবো। রিটার্নিং অফিসারকে ফোন করলাম। বললাম, আমার জীবনের নিরাপত্তা নাই। আমি কি নির্বাচন.. ভোটারদের নিরাপত্তা নাই। যেখানে প্রার্থীর নিরাপত্তা নাই সেখানে ভোটারদের নিরাপত্তা কোথ থেকে আসবে? এগুলা বাদকাবাদ বইলা ওরাও বলে, অ্যা.. স্যার আমি দেখছি। আমি আপনার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবো। আমি বলেছি যে, আমার নিরাপত্তার ব্যবস্থা যতদিন না করতে পারবেন ততক্ষণ আমি নির্বাচনের প্রচারণায় বেরোবো না। আমার আগে আমার… my life has to be secured first. কিন্তু কি আসে যাই এইগুলো বইলা। কোনো লাভ আছে? বুলু: কোনো ই নাই, কোনো ই নাই।

মওদুদ: রিটার্নিং অফিসার বলো, পুলিশ বলো সবই একই। বুলু: আমাদের তো ওই সিদ্ধান্তটাই নেওয়া উচিৎ ছিলো, আ,রা ঢাকায় গিয়ে বসে যেতাম। তাহেলে তো অনেকটা আমরা কার্যকর করতে পারতাম।

মওদুদ: এখন তো, মহাসচিব, আমি বললাম তো। কালকে আমি সারাদিন.. এবং তার পিএস ইউনুস.. বুলু: সেও ফোন ধরে না।

মওদুদ: ফোন ধরে না। বুলু: না না। আমাদেরও ফোন ধরে না।

মওদুদ: ফোন ধরে না। সে ফোন ধরে না। কালকে মিন্টু সাহেবও আমার ফোন ধরে নাই। রাত্রে নাকি ফোন করছিলো আমাকে। বুলু: না। আমিও পাইনি। কালকে থেকে ট্রাই করতেছি।

মওদুদ: মিন্টুকে তুমি পাইবা না। মহাসচিবকে দেখো পাও কি না দেখো। মহাসচিব তিনি ফোন ধরেন না।

বুলু: না না। ফোন ধরে না। এরা কেউ ফোন ধরতেছে না।

মওদুদ: তো তারা কি স্বপ্ন দেখতেছে আমি জানি না। তারা কি একটা ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছে কি না জানি না।

সম্পূর্ণ ফোনালাপ

/পিবিডি/আরাফাত

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ,মির্জা ফখরুল ইসলাম আমলগীর,তারেক রহমান,বিএনপি,ফোনালাপ ফাঁস
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close