• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

অবৈধ ও নকল মোবাইল হ্যান্ডসেটের শনাক্তে অভিযান ফেব্রুয়ারিতে

প্রকাশ:  ১০ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:৫৬
আরিফুল ইসলাম

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি অবৈধ ও নকল হ্যান্ডসেট ঢুকছে বাংলাদেশের বাজারে। এর বড় একটি অংশ রয়েছে অপরাধে যুক্ত ব্যক্তিদের হাতে। একটি মোবাইল সিম দিয়ে অপরাধ করে তা ফেলে দেয়া হলে অপরাধীকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু যে হ্যান্ডসেট দিয়ে অপরাধী সিম ব্যবহার করে তা তারা ফেলে না। ওই হ্যান্ডসেটে অন্য সিম ব্যবহার করে। কিন্তু প্রতিটি হ্যান্ডসেটেরই রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুপমেন্ট আইডেনটিটি (আইএমইআই) নম্বর। এটা হলো ১৫ ডিজিটের একটি স্বতন্ত্র সংখ্যা যা বৈধ মোবাইল ফোনে থাকে। একটি মোবাইল ফোনের কি-প্যাডে *#০৬# পরপর চাপলে ওই মোবাইল ফোনের বিশেষ এই শনাক্তকরণ নম্বরটি পর্দায় ভেসে ওঠে। নকল হ্যান্ডসেটে ওই নম্বর থাকে না। তাই নির্বিঘ্নে অপরাধীরা নকল হ্যান্ডসেট ব্যবহার করছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রতিনিয়ত গলদঘর্ম হতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

সম্প্রতি একটি অপরাধী চক্রকে ধরতে হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বর ট্র্যাক করে সিম্ফনি হ্যান্ডসেটের তথ্য পাওয়া যায়। পরে বিটিআরসির যন্ত্র ব্যবহার করে দেখা যায় ওই একটি আইএমইআই নম্বরের বিপরীতে সাড়ে ৬ হাজার মোবাইল হ্যান্ডসেট রয়েছে। এতে থমকে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

আর তাই এবার অবৈধ ও নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহার বন্ধের কার্যকরী উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। হ্যান্ডসেট শনাক্তকরণ ব্যবস্থা স্থাপনে লাইসেন্সিং নীতিমালা আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে চালু হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এর ফলে নকল ও অবৈধ হ্যান্ডসেটের ব্যবহার বন্ধে হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।

বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, জনস্বার্থে ও সরকারের রাজস্ব নিশ্চিতকরণে (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) আইএমইআই ডাটাবেস চালু করছে বিটিআরসি। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চালু হতে পারে এই কার্যক্রম।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) উদ্যোগ ও বিটিআরসির তত্বাবধায়নে মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বরে ডাটাবেস করার কার্যক্রম প্রায় সম্পন্ন করেছে বিটিআরসি।

আর এই ডাটাবেস চালু হলে সাধারণ মানুষ মোবাইল কেনার সময় চেক করে দেখতে পারবেন। এক্ষেত্রে অটোমেটেড সিস্টেমের মতো এসএমএস সার্ভিস চালু থাকবে। যার মাধ্যমে গ্রাহক বুঝতে পারবে সেটটি বৈধ নাকি অবৈধ। এছাড়াও বাংলাদেশে উৎপাদিত ও বিদেশ থেকে আমদানি সেটে আইএমইআই নম্বর সবসময় হালনাগাদ করবে বিটিআরসি।

উল্লেখ্য, প্রতিটি হ্যান্ডসেটে ১৫ সংখ্যার একটি অনন্য নম্বর থাকে, যা আইএমইআই নামে পরিচিত। হ্যান্ডসেটে *#০৬# এ নম্বরগুলো পরপর চাপলে আইএমইআই নম্বর জানা যায়। হ্যান্ডসেটের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, মডেল ও ক্রমিকের সমন্বয়ে গঠন করা হয় আইএমইআই নম্বর। এনইআইআর স্থাপনের মাধ্যমে দেশে ব্যবহৃত প্রতিটি হ্যান্ডসেটে থাকা আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

বিটিআরসির সূত্রে আরও জানা গেছে, হ্যান্ডসেট শনাক্তকরণে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) বাস্তবায়নে তৃতীয় পক্ষের প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিচ্ছে। এজন্য লাইসেন্সিং নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়াও এর মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। তবে এক্ষেত্রে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হতে পারে।

তবে এই কার্যক্রম মনিটারিং করবে বিটিআরসি। আর আইএমইআই এর পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেস থাকবে বিটিআরসিতে।

দেশের সব হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বর দিয়ে ডাটাবেজ তৈরির নির্দেশনা দেবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। নিয়মিতভাবে হালনাগাদও করতে হবে এই ডাটাবেজ। আর এটি করতে হবে সেলফোন অপারেটরদের নিজ উদ্যোগেই।

জানা গেছে, বর্তমানে আইএমইআই নম্বর নিবন্ধনের ব্যবস্থা না থাকায় চুরি হওয়া হ্যান্ডসেটের প্রকৃত মালিক শনাক্ত ও উদ্ধার অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। এছাড়া প্রকৃত আইএমইআই নম্বরবিহীন নকল হ্যান্ডসেট ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি এ ধরনের হ্যান্ডসেট উদ্ধারেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ ব্যাপারে বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, আমরা আশা করছি গ্রাহকের নিরাপত্তার স্বার্থে ও সরকারের টেলিকম খাতে রাজস্ব নিশ্চিতকরণে এই ডাটাবেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আর এটা টেলিকম খাতে সরকারের একটি বড় অর্জন বলে পরিগণিত হবে।

এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিটিআরসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ডাটাবেজ তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। এখন পরীক্ষামূলক কাজের মাধ্যমে দেখা হচ্ছে এখানে কোনো ক্রটি রয়েছে কিনা। সব ধরনের ক্রটি ঠিক করে এর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পাইলট প্রজেক্ট’ শুরু করা হবে।

পদ্ধতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমদানিকারকরা বৈধভাবে যে হ্যান্ডসেট নিয়ে আসবে সেই আইএমইআই নম্বর ‘ইনপুট’ করবে এরপর তা বিটিআরসি যাচাই করে লক করে দেবে, যাতে পুনরায় কোনো আইএমইআই সংযুক্ত করা না যায়।

এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এক সময় দেশে নকল বা অবৈধ হ্যান্ডসেট থাকবে না জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, “সহসাই এইসব নকল হ্যান্ডসেট বন্ধ করা সম্ভব হবে না। এখানে গ্রাহক স্বার্থের বিষয় রয়েছে। অবৈধ ও নকল হ্যান্ডসেটগুলোর ‘লাইফ টাইম’ এক বা দুই বছরে শেষ হয়ে যায়। তাই একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর ওইসব হ্যান্ডসেট আর থাকবে না। নকল সেটে আইএমইআই নম্বর দেয়ার একটি পরিকল্পনা (জেনুইন আইএমইআই ইমপ্ল্যান্ট প্রোগ্রাম) বাস্তবায়নেও বিটিআরসি অগ্রসর হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে যেসব মোবাইল হ্যান্ডসেট আছে সেগুলোর প্রতি তিনটিতে একটিই নকল বা অবৈধ। ২০১২ সালে নকল সেটে আইএমইআই নম্বর দেয়ার একটি পরিকল্পনা (জেনুইন আইএমইআই ইমপ্ল্যান্ট প্রোগ্রাম) নিয়েছিল বিটিআরসি। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এখন অগ্রসর হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এ প্রসঙ্গে বিএমপিআইএ এর সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বলেন, মোবাইল হ্যান্ডসেট যাচাই প্রক্রিয়া শুরু হলে গ্রাহকরা আইএমইআই নম্বর দিয়ে বিএমপিআইএ ওয়েবসাইট থেকে যাচাই করতে পারবেন তার হ্যান্ডসেটটি বৈধভাবে এসেছে কিনা বা নকল কিনা। আসল বা বৈধপথে আসা মোবাইল হ্যান্ডসেট হলে তা যাচাইয়ে বলবে ‘সঠিক’ আর অবৈধ হলে ওয়েবসাইটে উঠে আসবে ‘নকল’। সঠিকভাবে এ কাজ করা সম্ভব হলে হ্যান্ডসেট ব্যবহার করে অপরাধের মাত্রা কমবে বলে মনে করি।

পিবিডি/আরিফ

ফোন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close