• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সেই কোটিপতি শিবির নেতাকে খুঁজছে প্রশাসন

প্রকাশ:  ১৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:৪০
সাইফুল আলম বাদশা, কক্সবাজার

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডোল ইন্টারন্যাশনাল নামে ভুয়া এনজিওর নামে অপতৎপরতা চালানোর অভিযোগে শিবির নেতা সাইদুল ইসলামকে খুঁজছে প্রশাসন। গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে গেছে সাইদ।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপতৎপরতার খবর ছড়িয়ে পড়ায় কিছুটা খোলস পাল্টেছে ডোল ইন্টারন্যাশনাল। তবে এখনও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সাইদের সহযোগীরা।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের আগষ্টের শেষের দিকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল আসার পর থেকে সাইদের মিশন শুরু হয়। অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অর্থায়নের জন্য নিয়ে আসা মানবিক সহায়তার কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বনে গেছেন কোটিপতি। গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিওর নামে শিবিরের অপতৎপরতা, মালিকের শতকোটি টাকার সম্পদ’ শিরোনামে পূর্বপশ্চিমে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের পর গা ঢাকা দিয়েছে ভুয়া এই প্রতিষ্ঠানের মালিক সাইদুল ইসলাম ওরফে রিজভী। কিন্তু কর্মকান্ড বন্ধ করেনি। এখনো ক্যাম্পের বিভিন্ন জায়গায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তারা। সাইদের অবর্তমানে ডোল ইন্টারন্যাশনালের কর্মকান্ডে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তৌহিদ ও তামিম নামে দুই যুবক। তারা আপন সহোদর। বর্তমানে তৌহিদ ও তামিম সহ ডোলের একটি গ্রুপ উখিয়া ও কক্সবাজার শহরে অবস্থান করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৌহিদ তুরস্কে পড়াশোনা করে। তৌহিদ ও তামিমের বাবা হলেন ঢাকার তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার মহিলা শাখার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল বহুল আলোচিত শফিকুল্লাহ মাদানী। তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসাটি সরাসরি বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের প্রতিষ্ঠান। এটি জামায়াতই পরিচালনা করে। তৌহিদ তুর্কিতে পড়াশোনা করে। তুর্কিতে ডোল ইন্টারন্যাশনালের পক্ষে অর্থ সংগ্রহে নেতৃত্ব দেয় সে। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনহীন বিভিন্ন এনজিও নিয়ে এসে সাইদের ডোল ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবৈধভাবে কার্যক্রম করে তারা।

জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপতৎপরতা চালানোর কাজে সাইদকে স্থানীয়ভাবে সহযোগিতা করে সাজ্জাদ হোসেন মিন্টু, রাসেল, সরওয়ার, জিকু, নুরুল আজিমসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। তাদের মাধ্যমে অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালনা ও ক্যাম্পে অপমিশন বাস্তবায়ন করছে সাইদ।

সংবাদ প্রকাশের পর ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লাগে ধুরন্দর সাইদ। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারস্থ হয়ে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করছেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, রোহিঙ্গা শিবিরে ‘বাংলাদেশ-আরকান’ লেখা ব্যানারসহ গেইট গুলোর সন্ধানে নেমেছে তারা। ইতোমধ্যে বেশকিছু প্রমাণ পেয়েছে সরকারী একটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এতিম খানায় বড় হওয়ায় সাইদের একাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়েও গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে তারা। একই সাথে সাইদকে নজরদারীতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, সাইদের পড়াশোনা, বেড়ে উঠা সবকিছুই রোহিঙ্গা ভিত্তিক সংগঠন আরএসও’র অর্থায়নে। ছোটবেলায় যে এতিমখানা তথা মাদ্রাসায় সাইদ পড়াশোনা করেছে সেটি চলে আরএসও’র অর্থায়নে। সেখানে থেকে প্রায় পড়াশোনা শেষ করে সাইদ। তখন থেকেই আরএসও’র সাথে সখ্যতা সাইদের। এরপর সাইদ এবং তার বন্ধু মিলে একটি এনজিও চালু করে। ওই এনজিও’র হয়ে উত্তরবঙ্গে কাজ করেছিল সাইদ। এক পর্যায়ে সাইদ ওই এনজিও’র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। পরে সাইদ এবং তার বন্ধু মিলে চকরিয়ার সাহারবিল এলাকায় ‘দারুল হিকমাহ’ নামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে। এক পর্যায়ে দুর্নীতির অভিযোগে সাইদকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর নাম স্বর্বস্ব সংস্থার অর্থায়ন এনে সাইদ ডোল ইন্টারন্যাশনালের সাইনবোর্ডে উখিয়ার মরিচ্যা স্টেশনের পরে নাপিতপাড়া এলাকায় পাহাড়ের উপর একটি মাদ্রাসা গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে ওই মাদ্রাসা থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন সাইদ।

জানা গেছে, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করা নেতাদের হাত ধরে তুরস্ক ভিত্তিক বিভিন্ন মানবিক সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে সাইদ। তাদেরকে অবৈধভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অর্থায়নের জন্য এবং নানা অপতৎপরতা চালাতে সহযোগিতা করে সাইদ হয়ে যান কোটি কোটি টাকার মালিক। তবে তার বেশির ভাগ আয়ের উৎস আরএসও।

নাইক্ষ্যংছড়ির এক রাজনৈতিক নেতার সাথে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে আটক হয়েছিলেন মাওলানা ছালামতুল্লাহ নামে এক হুজুর। ওই হুজুরের সাথে সাইদের গভীর সখ্যতা আছে। মাওলানা ছালামতুল্লাহ’র সাথে শহরের একটি এলাকায় এক সাথে জায়গায় কিনেছেন সাইদ। যদিও জায়গাটি এখন সাইদের হাতছাড়া।

রিভাত, এসকেটি, উইকেয়ার, ইলিকদারসহ বেশ কয়েকটি বিদেশি এনজিও’র অর্থায়ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবৈধভাবে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। রিভাতের সবচেয়ে বেশি কর্মকান্ড চলে পাকিস্তানে। সাইদের মূল কর্মকান্ড রোহিঙ্গাদের ফেরত না যেতে উদ্ধুব্ধ করা।

ডোল ইন্টারন্যাশনালের লোগো সম্বলিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পেইজ রয়েছে। সেখানে লগু সম্বলিত ভিডিও প্রতিবেদন প্রচার করে। তুর্কি ভাষায় এসব প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের পরিচয়ের ক্ষেত্রে ‘আরকান’ উল্লেখ করা হয়।

ডোল ইন্টারন্যাশনালের মালিক সাইদুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘তুরস্কের লোকজন রোহিঙ্গাদের আরাকানের নাগরিক বলে। তাই এ শব্দটা ব্যবহার করি।’

সাইদুল ইসলাম দাবি করেছেন ডোল ইন্টারন্যাশনাল এনজিও নয়। এটি একটি সাপ্লাই প্রতিষ্ঠান। ব্যাখ্যায় সাপ্লাই প্রতিষ্ঠান দাবি করলেও এই প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবহৃত ব্যানার, সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন প্রমাণ এখনো রোহিঙ্গা শিবিরে দৃশ্যমান। বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে রোহিঙ্গা শিবিরে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ভাই আমার ক্ষতি করে আপনার কি লাভ।’

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান বলেন, ‘ডোল ইন্টারন্যাশনাল সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ক্যাম্প ইনচার্জদেরকে তাদের সম্পর্কে এলার্ট করা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারিও করা হচ্ছে। ক্যাম্পে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

/পিবিডি/আরাফাত

রোহিঙ্গা,শিবির
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close