• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নার্সারির মালি ‘বাউন্ডারি শহীদ’ এখন শত কোটি টাকার মালিক!

প্রকাশ:  ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ১৫:৫৩
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

এক সময় দৈনিক পাঁচ কেজি গমের বিনিময়ে বন বিভাগের নার্সারীতে কাজ করতেন তিনি, এখন শত কোটি টাকার মালিক। নাম শহীদুল ইসলাম শহীদ হলেও লোকমুখে পরিচিতি পেয়েছেন বাউন্ডারি শহীদ নামে। কারণ, বন বিভাগের জমি দখল করতে তিনি সিদ্ধহস্ত। যেখানেই জমি দখলের প্রসঙ্গ, সেখানে প্রথমেই আসে শহীদের নাম।

জন্মসূত্রে গফরগাঁওয়ের বাসিন্দা হলেও পরে বসত গড়েন হবিরবাড়ি মৌজায়, জড়ান রাজনীতিতেও। তিনি ভালুকা উপজেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ।

জানা যায়, নিত্য-নতুন ফন্দিতে বনের জায়গা দখল করেন শহীদ। তার এক ডাকে কয়েকশ লোক নেমে আসে। দখল প্রক্রিয়ায় মাঠে নেতৃত্ব দেন আমতলী গ্রামের ইন্নুস আলীর ছেলে শাহজাহান। শহীদের কথায় যে কারো মাথা ফাটিয়ে দিতে পারেন। এমন অনেক নজির রয়েছে।

নব্বইয়ের দশকে বিএনপি ক্ষমতায় এলে দখল চর্চা শুরু করেছেন শহীদ, তা চলছে এখনও।

স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও ভালুকা চলে বিএনপি নেতা শহীদের আঙ্গুলের ইশারায়। আর টাকা দিয়ে প্রশাসনের লোকের মুখ বন্ধ রেখে অনায়াসে দখল করে নেন বনের জমি। তার কারণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে ময়মনসিংহ বন বিভাগের ভালুকা রেঞ্জ। এরই মধ্যে মল্লিকবাড়ি বন বিটের এক হাজার ৫৯৯ একর জমি পুরোটাই জবরদখলকারিদের ভোগে চলে গেছে। খোদ বিট অফিসার এখন অন্য বিটের আশ্রিত হিসেবে রয়েছেন।

সূত্র জানায়, নার্সারির মালি থেকে শহীদুল ইসলাম শহীদ এখন গাড়ি-বাড়ি, অজস্র বিত্ত-বৈভবের মালিক। ভালুকা রেঞ্জ সংলগ্ন এলাকায় আলিশান বাড়ি তৈরি করেছেন। রয়েছে একাধিক খামার ও শিল্প কারখানা। সিডস্টোর বাজারের পুর্বদিকে ২০ বিঘা জমির উপর রয়েছে সুপ্তি সোয়েটার ও সুপ্তি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং, দক্ষিণ দিকে ১০ বিঘা জমির উপর রয়েছে সুপ্তি ওয়েল লিমিটেড। কোকাকোলার পশ্চিমে সাত বিঘা জমির উপর রয়েছে তার হাজী এন্টারপ্রাইজ নামে আরসিসি পিলারের কারখানা। জনশ্রুতি আছে ঢাকাতেও তার রয়েছে একাধিক বাড়ি। চলেন কোটি টাকা দামের গাড়িতে।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, শহীদের টাকা ও প্রতিপত্তির কাছে বন বিভাগের লোকজনও অসহায়।

এক সাবেক ফরেস্টার বলেন, দিনের বেলা যদি কোনো বনকর্মী শহীদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, রাতে সেই কর্মীর ওপর হামলা হয়। মুখে কালো কাপড় বেঁধে হামলা করে কিলঘুষি দিয়ে চলে যায়। দুই একবার রাতের আধারে অস্ত্র ঠেকিয়ে ভয় দেখানোর ঘটনাও ঘটেছে। যে কারণে শহীদের কথা অনেকেই মুখে আনতে চান না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০০০ সালে ভালুকা থানার শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় উঠেছিলো বাউন্ডারি শহীদের নাম। কিন্তু কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে সব কিছু। বনের জমি দখলের পেছনে প্রায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তিনি যুক্ত থাকলেও সংশ্লিষ্টরা ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে এড়িয়ে গেছে। কোনো মামলায় তার নাম ভুল, কোনো মামলায় তার পিতার নাম ভুল, আবার কোনো মামলায় তার ঠিকানা ভুল দেওয়া হয়েছে। কখনও জমির দাগ নম্বরে ভুল করে তাকে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক ঘটনায় তাকে খলনায়ক মনে করা হলেও বরাবরই তিনি থেকেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

শহীদের নামে প্রথম মামলা হয় ১৯৯৩-৯৪ সালে (১৯হবি/৪০ ভালু)। ঐ সময়ে আরও গোটা তিনেক মামলা হয়। এরপর ধীরে ধীরে দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেন শহীদ। বদলে যেতে থাকে বনের লোকদের ভূমিকা। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিট অফিসার মুস্তাফিজুল হক (ফরেস্টার) নিজের পিঠ বাঁচাতে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করেন। সবগুলো মামলায় তার নামের ক্ষেত্রে নানান রকম ক্রটি রেখে দেন।

এসব মামলার মধ্যে ২২হবি/৩১ ভালু মামলায় শহীদুল ইসলামের বদলে কৌশলে এস. ইসলাম এবং পিতার নাম আলাউদ্দিনের বদলে আঃ উদ্দিন লেখা হয়। এরপর মামলা নম্বর ২৩হবি/৩২ ভালু একই ভুল করা হয়।

২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৮হবি/৮ভালু মামলায় শহীদের নাম ঠিক লিখলেও পিতার নাম অফিমুদ্দিন লেখা হয়। অনেক মামলায় নানা রকম ভুল করে তাকে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বন বিভাগ।

১৯৯৮ সালে কোরবানি ঈদের দিনে নিজের ঘরে খুন হন ভালুকার আকবর মেম্বার। সেই মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাউন্ডারি শহীদকে। ওই মামলায় বেশ কিছুদিন হাজত খাটতে হয় তাকে। পরে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তার প্রভাব বিস্তার করে মামলা থেকে ছাড় পেয়ে যান। আরও কয়েকটি হত্যাকান্ডের জন্য তাকে সন্দেহ করে ভালুকাবাসী।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাউন্ডারি শহীদের এসব অপকর্ম ও দখলদারিত্ব ঠেকানো না গেলে ভালুকার বন রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

/পিবিডি/একে

দুর্নীতি,বন,কোটি টাকা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close