ডাকসু নির্বাচন: যারা ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন
দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১১ই নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করেছে৷ এরই মধ্যে ডাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র সংশোধন এবং আচরণবিধি প্রণয়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷ ফলে ছাত্র শিক্ষক থেকে শুরু করে জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে ডাকসু নির্বাচনের হাওয়া বইছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রাণের সঞ্চার দেখা যাচ্ছে৷
উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ২১ জানুয়ারি সোমবার ১৩টি ছাত্র সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে দ্বিতীয় দফা পরিবেশ পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে৷বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আবসিক হলগুলোর প্রাধ্যক্ষ ও ডাকসু নির্বাচনের জন্য গঠিত বিভিন্ন কমিটির সদস্যরা৷
সম্পর্কিত খবর
বৈঠকে সব ছাত্র সংগঠনের নেতারা প্রশাসনের উদ্যোগে তারা নির্বাচন হওয়ার বিষয়ে আস্থা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন৷ তবে সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর সুষ্ঠ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে৷
২১ জানুয়ারি পরিবেশ পরিষদের সর্বশেষ বৈঠকে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে কোনও প্রকার হামলা করবে না এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমে কোনো ধরনের বাধা দিবে না বলে আশ্বস্ত করেছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগ।
বৈঠক শেষে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ডাকসু নির্বাচনের জন্য মধুর ক্যান্টিনসহ ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে৷
সংবাদ মাধ্যমে গোলাম রাব্বানি বলেন, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মাঝে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী তারা হলে থাকতে পারবেন এবং তাদের একাডোমিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে কোনও ধরনের বাধা প্রদান করা হবে না৷
ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন যারা:
২৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয় ৷সভায় ডাকসু নির্বাচনের গঠনতন্ত্র সংশোধনী, আচরণবিধি প্রণয়ন, ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার শর্তসহ নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়৷ সভা শেষে বিশ্বিদ্যালয়ের রেজিস্টার এনামুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ে গণমাধ্যমকে অবহিত করেন৷
তিনি বলেন, বিশ্বলিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে অনার্স, মাস্টার্স ও এমফিলে অধ্যয়নরত যেসব শিক্ষার্থীর বয়স ৩০ এর বেশি নয় তারা ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন৷ ৩০ বছরের উর্ধ্বে নিয়মিত শিক্ষার্থী হলেও ভোটার বা প্রার্থী কোনোটাই হতে পারবেন না৷ ঢাবির বিভিন্ন সান্ধ্যকালীন কোর্স, প্রোগ্রাম, ডিপ্লোমা, পিএইচডি, প্রফেশনাল, এমএড, এক্সিকিউটিভ, স্পেশাল মাস্টার্স ও ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্সসহ অন্যান্ন কোর্সের কেউ ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন না৷ দেশে বিদেশে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনও শিক্ষার্থী ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন না৷ অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজের কোনও শিক্ষার্থী ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবে না৷ সকল ভোটারই প্রার্থী হতে পারবেন৷
ডাবল মাস্টার্স করা শিক্ষার্থীও ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন:
সিন্ডিকেট সভা শেষে রেজিস্টার এনামুজ্জামান এ বিষয়ে কিছু বলেননি৷ পরে সিন্ডিকেট সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে রেগুলার কোর্সে ডাবল মাস্টার্স করা শিক্ষার্থীরা ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন৷ তবে সান্ধ্যকালীন কোর্সে ডাবল মাস্টার্স করা কোনও শিক্ষার্থী ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন না৷
এছাড়া সিন্ডিকেট সভায় ভোটকেন্দ্র আবাসিক হলেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়৷ সিন্ডিকেটের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ছাত্রলীগ। তবে হলে ভোটকেন্দ্র করার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছেন ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও ছাত্র ফেডারেশনের নেতারা। এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে করবে বলে জানিয়েছেন বামপন্থী প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতারা৷ এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য এস এম মাহফুজুর রহমানকে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন৷ পরে ১৯ জানুয়ারি শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেন উপাচার্য আখতারুজ্জামান।
তারা হলেন: মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান দিদার-উল-আলম, গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অমল কৃষ্ণ হালদার, ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের পরিচালক মাহবুবা নাসরীন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল বাছির এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান।
পিবিডি/আরিফ