ডাকসু নির্বাচন: পাঁচ নেতাকে ঘিরে মাঠে নামছে ছাত্র ইউনিয়ন
দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে৷ ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১১ই মার্চ ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা৷উপাচার্য ড. মোঃ আখতারুজ্জামান প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ আরও পাঁচজন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন৷ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করেছে ছাত্র ইউনিয়ন।শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের সৃষ্টিশীল কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে, করছে ছাত্র সমাবেশ৷ প্রার্থী চূড়ান্ত না হলেও পাঁচ নেতাকে ঘিরে নির্বাচনী মাঠে চষে বেড়াচ্ছে ক্যাম্পাসে এক সময়ের একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখা বামপন্থী সংগঠনটি।
জানা যায়, পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একচ্ছত্রভাবে ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এই ছাত্র সংগঠনটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচনেও পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হয়। ওই নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ভিপি ও ডা. মাহবুব জামান জিএস নির্বাচিত হন। পরবর্তী ৬টি নির্বাচনে ভিপি-জিএস পদে জয় না পেলেও দলের প্রার্থীরা ধারবাহিকতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল৷
সম্পর্কিত খবর
১৯৮৯ সালের নির্বাচনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্যানেল থেকে দলের আরেক শীর্ষ নেতা নাসির উদ দৌজা এজিএস হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর আরও একটি নির্বাচন হলেও তাতে সুবিধা করতে পারেনি জনপ্রিয় এই ছাত্র সংগঠনটি। তবে দীর্ঘ ২৮ বছর পর এবারের নির্বাচনে জয় পেতে সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছে দলটি। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত গণসংযোগ করছে, তাদের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, গড়ছে জোট, চিন্তা ভাবনায় রাখছে প্রার্থী।
দলের একাধিক কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রার্থী চূড়ান্ত না করা হলেও সম্ভব্য পাঁচজন নেতাকে ঘিরে নির্বাচনী মাঠ সাজাচ্ছে দলটি। তারা হলেন দলটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক রাজীব দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিব মোহাম্মদ আশিক, বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির আরেক নেত্রী কাজী মালিহা।
পাঁচজনের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত মুখ হলেন লিটন নন্দী৷বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে দেশব্যাপী রয়েছে তার আলাদা পরিচিতি৷ ২০১৫ সালে পহেলা বৈশাখে টিএসসিতে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রথম আলোচনায় এসেছিলেন তিনি। তখন দুর্বৃত্তদের হামলায় তার এক হাত ভেঙে গিয়েছিল। এর পরে তিনি সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে কারাবরণও করেছেন। বিভিন্ন সময় তিনি শিক্ষার্থীদের কথা বলতে গিয়ে ক্ষমতাসীনদের মারধরের শিকার হয়েছেন৷ ফলে দলটির নেতাকর্মীরা আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে আইইআর থেকে স্নাতক শেষ করা বাগেরহাটের এই সন্তানকে প্রার্থী করার কথা ভাবছেন৷
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ভন্যান্স স্টাডিজে স্নাতকোত্তর করছেন ২৮ বছর বয়সী এই নেতা। দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হবার আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ হল কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছেন দলটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ। ফেনীতে জন্ম গ্রহণ করা এই নেতা ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধী বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। কার্জন হল শিক্ষার্থীদের মাঝে তার রয়েছে বেশ জনপ্রিয়তা৷ এছাড়া ক্লিন ইমেজ হিসেবেও ক্যাম্পাসে তার আলাদা পরিচিতি রয়েছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি হবার আগে তিনি সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও শহীদুল্লাহ হলের নেতা ছিলেন। ফলে দলটির নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরে জয়ের কথা ভাবছে বলে জানা যায়৷
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেন দলটির আরেক নেতা ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী রাজীব দাস৷ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷ বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে দায়িত্ব পালন করার আগে তিনি সমাজকল্যাণ ও পরিবেশ সম্পাদক ও জগন্নাথ হল কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেট অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মাঝেও তার রয়েছে ব্যপক পরিচিতি।
ঢাকায় জন্ম গ্রহণ করা সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিব মোহম্মদ আশিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের স্নাতকোত্তরে পড়াশোনা করছেন ৷ বিশ্ববিদ্যালয় আসার আগে তিনি পড়াশোনা করেছেন ঢাকা সিটি কলেজ ও মনিপুর স্কুলে। ফলে দলটির হাই কমান্ড ঢাকার স্থানীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে তার যোগাযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছে৷ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক হবার আগে কলা অনুষদের সাধারণ সম্পাদক ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে দায়িত্ব পালন করেছেন। সুন্দরবন রক্ষাসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নির্যাতনের শিকার হয়ে আলোচোনায় থাকা আশিক কলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ পরিচিত মুখ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের স্নাতকোত্তরে পড়াশোনা করছেন কাজী মালিহা৷ তিনি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন৷ রংপুরে জন্মগ্রহণ ও বেড়ে ওঠা মালিহা শিক্ষার্থীদের সমসাময়িক যৌক্তিক সকল আন্দোলনেই ছিলেন সক্রিয়। কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের মাঝে তার রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা৷ এরই সাথে ক্যাম্পাসে নারীদের ভোটের প্রতি লক্ষ্য রেখে মালিহাকে নিয়ে ভাবছেন ছাত্র ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা।
আসন্ন ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি ও প্রার্থীতা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ পূর্বপশ্চিমবিডিকে বলেন, "আমরা দলীয়ভাবে ডাকসু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি৷ ইতোমধ্যে প্রায় দশটি হলে আমাদের প্যানেল ঠিক করা হয়েছে৷এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে প্রার্থীতার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবো৷দলের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবাই নির্বাচন করতে পারবে"৷
দলের প্রার্থিতার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী পূর্বপশ্চিমবিডিকে বলেন, "ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থীতা বিষয়ে খসড়া করা হয়েছে ,তবে তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি৷আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী প্রগতিশীল ছাত্রজোট, আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও বিভিন্ন সময়ে গড়ে ওঠা প্লাটফর্মের সাথে আলোচনা করে একটি বৃহৎ ঐক্য গঠন করার চেষ্টা করছি"৷
নিজের প্রার্থীতার বিষয়ে তিনি বলেন, "নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে আমার কোনো বাধা নেই৷ জোটগতভাবে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে"৷