• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

নারায়ণগঞ্জে অন্তঃসত্ত্বা ইউএনওকে ওএসডি, তদন্তের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশ:  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:২৫ | আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:৫০
নিজস্ব প্রতিবেদক

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা বেগম বীনাকে ওএসডির ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গণমাধ্যমে খবরটি প্রকাশ হলে সেটি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে এবং আজ সকালে তিনি জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহম্মদকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি হোসনে আরা বেগম বীনাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়। এরপর গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে বীনা তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যা নিয়ে তোলপাড় চলছে প্রশাসনে।

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) শেখ ইউসুফ হারুন জানান, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অন্তঃসত্ত্বা হোসনে আরা বেগম বীনাকে টেনশনমুক্তভাবে বিশ্রামে রাখতে তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। জানা যায়, মাত্র ৯ মাস পূর্বে তিনি এ পদে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৯ বছরের দাম্পত্য জীবনে বহু চেষ্টা চিকিৎসার পরও কোনো সন্তান হয়নি তার। কিন্তু ৫ মাস পূর্বে জানতে পারেন তিনি ২ মাসের সন্তানসম্ভবা। এ অবস্থা নিয়েই ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।

ওএসডি হওয়ার করার পর বিষয়টি জানিয়ে হোসনে আরা বীনা গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটসে লিখেন, ‘আমি ব্যক্তিগত বিষয়গুলো সাধারণত ফেসবুকে খুব একটা শেয়ার করি না। তবে আজ মনে হলো এখন চুপ করে থাকাটাও অন্যায়। তাই আজ আর না, আজ আমি বলব। আমি হোসনে আরা বেগম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নারায়ণগঞ্জ সদর, মাত্র ৯ মাস পূর্বে আমি এ পদে যোগদান করি। আমার দীর্ঘ ৯ বছরের দাম্পত্য জীবনে বহু চেষ্টা চিকিৎসার পরও আমরা কোনো সন্তান লাভ করতে পারিনি। কিন্তু পাঁচ মাস আগে আমি জানতে পারি আমি দুই মাসের সন্তান সম্ভবা। আমি আমার বাবুকে পেটে নিয়েই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে আমি নারায়ণগঞ্জ-৪ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের আংশিক নির্বাচন অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন করি। অথচ আমি সন্তান সম্ভবা হয়েছি শোনার পর থেকেই একজন বিশেষ কর্মকর্তা, যার নাম বলতেও আমার রুচি হচ্ছে না, বিভিন্ন মহলে আমাকে অযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করে আমাকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে বদলির পাঁয়তারা করেই চলেছিল। আমার সন্তান সম্ভবা হওয়াটাকেই সে বিভিন্ন মহলে আমার সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা হিসেবে উপস্থাপন করেছে’।

তিনি লিখেন, ‘আমার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ছিল এপ্রিলের ২০ তারিখ, তেমন মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই আমি ছিলাম। গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রেগুলার চেকআপ করতে স্কয়ার হাসপাতালে অবস্থান করার সময় আমার একজন ব্যাচমেট ফোন করে জানায় আমার সদাসয় কর্তৃপক্ষ ওএসডি করেছে অর্থাৎ আমাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেছে। আমার অপরাধ হলো আমি সন্তান সম্ভবা। আর তার চেয়েও বড় কারণ হলো সেই তথাকথিত ক্ষমতাধর কর্মকর্তার উপরের মহল কর্তৃক তদবির।’

তার ফেইসবুকে হোসনে আরা বেগম বীনা আরো বলেন, ‘খবরটা শোনার পর আমি মানসিক চাপ সহ্য করতে পারিনি। আমি অ্যাজমার রোগী। প্রচুর মানসিকচাপে আমার ব্লুাড সার্কুলেশন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, ফলে আমার পেটের সন্তানের অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায় এবং হঠাৎ করেই আমার পেটের বাবু নড়াচড়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। তাৎক্ষণিক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ডক্টর সেদিন রাতেই সিজার করে বাবু বের করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। পরে আমার মাত্র ৩১ সপ্তাহ বয়সী প্রি-ম্যাচিউর বেবিকে সিজার করে বের করে ফেলা হয়। এখন সে স্কয়ার হাসপাতালের এনআইসিওতে বেঁচে থাকার জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ করে যাচ্ছে।’

হোসনে আরা বীনা লিখেন, ‘আমার এই নিষ্পাপ সন্তানটার কী অপরাধ ছিল? নাকি মা হতে চাওয়াটাই আমার সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল আমি জানি না!!! তবে জানি একজন সব দেখেন, তিনি আমার নিষ্পাপ মাসুম সন্তানের ওপর এই জুলুমের বিচার করবেন। এই নিষ্ঠুর অমানবিকতার পৃথিবীতে কোনো কর্তা ব্যক্তিদের কাছে আমি এ অন্যায়ের বিচার চাই না, শুধু আমার সৃষ্টিকর্তাকে বলব, তুমি এর বিচার কর!!! আর যারা আমাকে একটুও ভালোবাসেন আমার নিষ্পাপ সন্তানটার জন্য দোয়া করবেন। ও সুস্থ হয়ে গেলে কোনো কষ্টের কথাই আমার মনে থাকবে না।’

এনই

নারায়ণগঞ্জ,ওএসডি,টিএনও
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close