মিতু ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ শিকার হবেন, শঙ্কায় বিশিষ্টজনরা
স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কের জেরে চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যার ঘটনায় তানজিলা হক মিতু মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠকসহ বিশিষ্টজনরা।
মঙ্গলবার (১২ ফ্রেব্রুয়ারি) পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এই আশঙ্কার কথা জানান।
সম্পর্কিত খবর
বিবৃতিতে বলা হয়, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি যে, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রামে সংগঠিত হওয়া চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচণ্ড বিদ্বেষ ও ঘৃণা উদ্রেগকারী বক্তব্য প্রকাশিত হচ্ছে। যার নির্মম শিকার হচ্ছেন আকাশের স্ত্রী চিকিৎসক তানজিলা হক চৌধুরী মিতু এবং তার পরিবার, যা বিচারাধীন এই ঘটনাটিকে ‘মিডিয়া-ট্রায়াল’-এর দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।
ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি যে, আকাশের আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে পূর্বানুমানের ভিত্তিতে সমাজের গৎবাঁধা দৃষ্টিভঙ্গি আরোপ করে মিতুকে অভিযোগ করার ঘটনা ব্যাপক হারে ঘটছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সেই একই প্রবণতা দ্বারা পরিচালিত হয়ে মামলা হওয়ার আগেই আইন বহির্ভূতভাবে মিতুকে গ্রেফতার করে এবং পরবর্তীকে রিমান্ডে নিয়েছে, যা উদ্বেগজনক।
বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে চলছে উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য দিয়ে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন আত্মহত্যা করছে, যা কোনভাবেই আমরা সমর্থন করতে পারি না। আমরা সমাজে এই বাস্তবতা দেখছি যে, একটি মানসিক পরিস্থিতিতে কেউ আত্মহত্যা করেন আবার বেশিরভাগ মানুষ সেই একই পরিস্থিতিতে বা তার চেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে পড়েও আত্মহত্যা করে না। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন মানবিক এবং সামাজিক সম্পর্কের নতুন ধারা এবং মাত্রা আমাদের সমাজে প্রবেশ করেছে। সারাবিশ্বেই মানুষ এখন অপর মানুষের সাথে সম্পর্কের মাত্রা নিজে নির্ধারণ করাকে অধিকার ভাবছে। এটা অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হওয়া উচিত নয়। এজন্য আত্মহত্যার দায় অন্যকে দেওয়া এবং প্ররোচনার জন্য অভিযুক্ত করার বিষয়টি অত্যন্ত সচেতনভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন, যেনো আত্মহত্যা করা ইতিবাচক হিসাবে প্রতিফলিত না হয়। কে কোন পরিস্থিতিতে চরম হতাশ হয়ে জীবনকে অর্থহীন মনে করবে তা বলা মুশকিল। তবে যাদের এই ধরণের প্রবণতা থাকে পরিবারের সদস্যরাই সর্বাগ্রে তা বুঝতে পারে। তাই তাদের মানসিক শক্তি যোগানো, জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করা পরিবারের সদস্যদের কাজ৷ বিষয়টির সার্বিক সমাধানে সমাজ ও রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি-গত পরিবর্তনও জরুরি।
পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণ অমূল্য এবং প্রতিটি মানুষের ন্যায় বিচার পাবার অধিকার রয়েছে। তাই আমরা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, অপরাধ প্রমাণিত হবার আগেই আকাশের আত্মহননের দায় যেনো কিছুতেই অন্যায্যভাবে মিতুর কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে মিতুকে এবং তার পরিবারকে লোকলজ্জা ও সামাজিক চাপের মধ্যে ফেলা না হয়। কেননা, বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগে অন্যায়ভাবে কাউকে দায়ী করে তার কাঁধে দোষ চাপানো হলে সেটিও অবিচার হবে এবং সেখানেও লঙ্ঘিত হবে মানবাধিকার।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভবিষ্যতে আর কেউই যেন কোনো পরিস্থিতিতেই আত্মহননের পথ বেছে না নেয় সেই লক্ষ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারের তরফে সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেয়া দরকার বলেও আমরা অনুভব করছি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন ও অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, আইনজীবী শাহদীন মালিক, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির ও লেখক রেহনুমা আহমেদ। এছাড়াও স্বাক্ষর করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক স্বাধীন সেন, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৗস, অধ্যাপক আইনুন নাহার ,অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, আইনজীবী জোতির্ময় বড়ুয়া ও হাসনাত কাইয়ুম চৌধুরী। এছাড়াও স্বাক্ষর করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক সৌভিক রেজা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নাসরীন খন্দকার ও পারভীন জলী ও ব্লগার ও অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক।
এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী, উন্নয়নকর্মী ব্লগার ও অ্যক্টিভিস্ট, ছাত্রনেতা, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠকসহ মোট ৪৯ জন এ বিষয়ে সহমত জানিয়ে স্বাক্ষর করেছেন।
/পিবিডি/একে