• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

সোহরাওয়ার্দীর হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড, এক শিশুর মৃত্যু

প্রকাশ:  ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৩:২২
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একটি শিশু অগ্নিকাণ্ডের ফলে স্থানান্তরের কারণে মারা গেছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সরকারি এই হাসপাতালে আগুন লাগলে এতে ভর্তি ১২শ’র মতো রোগীর সবাইকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

অগ্নিকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা ওই শিশুটিকে পাঠানো হয়েছিল পাশের বেসরকারি কেয়ার হাসপাতালে।

দেড় বছর বয়সী শিশুটিকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন কেয়ার হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক মো. আবদুল্লাহ খান।

তিনি বলেন, শিশুটিকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল। আগুন লাগার পর অক্সিজেন মাস্ক খুলে তাকে আনা হয়েছিল। আমরা তাকে ডেড হিসেবে পেয়েছিলাম।

আগুন লাগার পর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের রোগীদের অনেকে আতঙ্কে ছুটে বেরিয়ে আসেন। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও অন্য রোগীদের বের করে নিয়ে আসে।

আগুনে শিশু ওয়ার্ডের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় বলে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম বড়ুয়া জানিয়েছিলেন।

যে শিশুটি মারা গেছে, তার কোনো নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি।

আবদুল্লাহ খান বলেন,ওই সময় এত হুড়োহুড়ি ছিল যে তা রাখার অবস্থা ছিল না। শিশুটির স্বজনরা সঙ্গে সঙ্গে শিশুটিকে নিয়ে চলে যায়।”

ওই সময় উপস্থিত থাকা কেয়ার হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনও একই কথা বলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তাও একটি শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়ার কথা জানান।

তবে আগুনে পুড়ে কেউ হতাহত হয়নি বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জানিয়েছেন।

কেয়ারের মহাব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ খান জানান, সোহরাওয়ার্দী থেকে ৩০ জন রোগীকে আনা হয়েছিল তাদের হাসপাতালে। এরমধ্যে ২৭ জন ভর্তি হয়েছেন; তার মধ্যে সাতজনকে রাখা হয়েছে আইসিইউতে।

অগ্নিকাণ্ডের ফলে সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে আসতে বাধ্য হওয়া এই রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেয়ার কর্তৃপক্ষ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন আবদুল্লাহ খান।

এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতেই চিকিৎসাসেবা চালু হয়েছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ এখনই চালু ছিলো বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাত দেড়টার দিকে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মামুন মোর্শেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে জরুরি বিভাগ চালু ছিলো। আইসিইউ-তে ১০ জন রোগী ছিল, তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রাত ১২টার পর থেকেই এক ও সাত নম্বর ওয়ার্ডে যেসব রোগী ফিরে আসছেন তাদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে।’

সকালের মধ্যে সব রোগী হাসপাতালে পুনরায় চলে আসবেন বলে জানান ডা. মামুন মোর্শেদ।

এদিকে, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আনুমানিক আড়াইশ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। ওই হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এই রোগীদের ঢামেক হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম নাসির উদ্দীন।

তিনি বলেন, ঢামেক সবসময়ই চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারীদের সেবা দিতে প্রস্তুত থাকে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যদিও সবার আন্তরিক চেষ্টায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। তবে ঘটনার শুরুতেই স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে মেসেজ আসে, প্রস্তুত থাকুন। রোগী আসতে পারে।

কিছুদিন আগে আমরা ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছি। যেখানে একই ছাদের নিচের সব ধরনের সেবা দেওয়া হয়। সোহরাওয়ার্দীর রোগীরা দ্রুত আমাদের এখানে এসে সেই ওয়ান স্টপ সার্ভিস পেয়েছেন। আনুমানিক আড়াইশ সেবাপ্রার্থী এই সেবা পেয়েছেন। এছাড়া হাসপাতালে আগুনের সূত্রপাত নিয়ে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা।

ব্রিফিংয়ের শুরুতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব জি এম সালেহ উদ্দিন বলেন, আগুনের সূত্রপাত হয়েছে হাসপাতালে তৃতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ডে।

তবে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বলেন, আগুন সাধারণত নিচের দিক থেকে উপরের দিকে যায়। এই বিষয় নিয়ে আমরা তদন্ত করছি, এক্সপার্টরা কাজ করছেন। তদন্ত শেষ হলে আগুনের সূত্রপাতের সঠিক স্থান সম্পর্কে জানা যাবে।

এর আগে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জানিয়েছিলেন, নিচতলায় ওষুধের স্টোররুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।

পিবিডি/জিএম

রাজধানী,রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়,ফায়ার সার্ভিস
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close