• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

হোটেলের সিলিন্ডার বিস্ফোরণই আগুনের উৎস, ব্যবহার অযোগ্য ৫ ভবন

প্রকাশ:  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৫:৪০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর ধ্বংসস্তপে পরিণত হয়েছে পুরান ঢাকার চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত রোডের চুড়িহাট্টা এলাকা। বোমাবর্ষণের পর বিধ্বস্ত এলাকার রূপ নিয়েছে শাহী মসজিদের আশেপাশের ভবনগুলো। ওই এলাকার ৫টি ভবন হয়ে ওঠেছে ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর তদন্তকারীরা অনেকটাই নিশ্চিত যে, কেমিক্যালের কারণে নয় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণই আগুনের উৎস। ওয়াহেদ ম্যানসনের নিচতলায় হোটেলে পাওয়া গেছে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের চিহ্ন।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে ঘটেছে বলে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের পর বৃহস্পতিবার দিনগত মধ্যরাতে তিনি সংবাদিকদের এ কথা জানান।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, আমি সরেজমিনে দেখে এসেছি। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে ঘটেছে সেটা ছিল একটি রেস্টুরেন্ট। সেখানে কেমিকেলের কোনো মজুদ বা কোনো গোডাউন ছিল। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা কেমিকেল এলাকা নয়। এখান থেকে সারাদেশের পাইকারী পণ্য বিক্রি হয়। এটা হচ্ছে সিলিন্ডার ব্লাস্ট। ওই এলাকায় গ্যাস স্বল্পতা ছিল। হোটেলে সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার করতো।

তিনি জানান, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান, প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন এবং অগ্নি দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সুপারিশ দেওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে ১২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবে। এর আলোকে শিল্প মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ভয়াবহ আগুন লেগে পাঁচটি ভবনসহ রাস্তার যানবাহনও পুড়ে যায়। আগুনে কমপক্ষে ৭০ জন পুড়ে মারা গেছে। ভয়াবহ এই ট্র্যাজেডির পর রাতভর অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ১৪ ঘণ্টার পর বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডে ভবনগুলো খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এগুলো এখন ব্যবহারেরও অনুপযোগী। ভবনের কলামগুলো দেবে গেছে, রড বের হয়ে গেছে। ধসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চুড়িহাট্টার চৌরাস্তায় সরেজমিনে দেখা গেছে, পোড়া বাড়িগুলো মানুষহীন নীরব নিস্তব্ধ। শাহী জামে মসজিদের সামনেই পাঁচটি সড়কের সংযোগস্থল। পূর্ব দিক থেকে প্রধান সড়কটি এসে মসজিদের সামনে আরও চারটি সড়কের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এ পাঁচটি সড়ক এতটাই সরু যে, এর প্রশস্থতা ১৪ থেকে ১৬ ফুটের বেশি নয়। দুটি গাড়ি পাশাপাশি চলাচল করতেও যেন গা ঘেঁষা হয়। এ পাঁচ সড়কের সংযোগস্থলে মূলত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে মসজিদের তিন পার্শ্বের পাঁচটি ভবন এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে, সেগুলোতে অবস্থান করাই ঝুঁকিপূর্ণ অগ্নিকাণ্ডে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওয়াহেদ মঞ্জিল। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের বিভিন্ন অংশ ধসে পড়েছে। ভবনটির নিচতলা থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত দরজা, জানালা, ইট খসে পড়েছে। লোহার গ্রিল কোনো রকম আটকে আছে। বিমগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পাশের ভবনগুলোও পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তার ওপর বিল্ডিংয়ের অংশবিশেষ ভেঙে পড়ে রয়েছে। ওয়াহেদ মঞ্জিলের উল্টো দিকের একটি দোতলা টিনশেডের ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুড়ে গেছে ভবনের বিভিন্ন অংশ। ভবনের ক্ষতি, বাণিজ্যিক ক্ষতি এবং আসবাবের ক্ষতি বিবেচনা করা হলে তা সহজেই শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণ করা হচ্ছে।

ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ই ঘটনায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। এ ব্যাপারেসংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান সাংবাদিকদের বলেন, মৃতের সংখ্যা ৮০ থেকে ৮১ জন হতে পারে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ সকালে সাংবাদিকদের জানান, এখন পর্যন্ত আমাদের মর্গে (মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ) ৬৭টা লাশ পেয়েছি। আরও ১১টা লাশ আমাদের হাসপাতালে মর্গে আছে। সবমিেলেয়ে মৃতের সংখ্যা ৭৮ হবে। এসব লাশের মধ্যে কিছু কিছু আছে তাদের চেহারা দেখে শনাক্ত করা যাবে।

এনই/

চকবাজারের,চুড়িহাট্টা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close