অনশনরত ছাত্রীদের হেনস্তার অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগ এনে ফের ভোটের দাবিতে আমরণ অনশনে বসা রোকেয়া হলের পাঁচ ছাত্রীকে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) অনশনকারী ছাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ডাকসুর নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে তাঁদের হেনস্তা করেন।
সম্পর্কিত খবর
অনশনকারী শ্রবণা শফিক দীপ্তি বলেন, চারটি দাবিতে আমরা সুশৃঙ্খলভাবে অনশন করছিলাম। বুধবার রাতে গোলাম রাব্বানী তাঁর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এখানে এসে আমাদের, সমর্থনকারীদের হেনস্তা করেন। ছবি দেখিয়ে একজনকে চরিত্রহীন প্রমাণের চেষ্টা করেন। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, আমরা মদ-গাঁজা খেয়ে আন্দোলন করছি। এ ছাড়া আমাদের চিহ্নিত করে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য প্রক্টরকে বলেন।
এর আগে বুধবার রাতে ডাকসু ও হল সংসদে পুনর্নির্বাচন, হল প্রভোস্টের পদত্যাগ, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তার দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন রোকেয়া হলের পাঁচ শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে চারজন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন পদের প্রার্থী ছিলেন।
হলের প্রধান ফটকের সামনে তাঁরা অনশন শুরু করেন। অনশন শুরু করার পর তাঁদের সমর্থনে হলের ফটকের ভেতরে ও বাইরে অবস্থান নেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় তাঁরা হল প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, বুধবার রাত দেড়টার দিকে মোটরসাইকেলে করে ছাত্রলীগ শতাধিক নেতা-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে রোকেয়া হলের সামনে আসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ডাকসুর নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী। এসেই তিনি ছাত্রীদের হলের ফটকের বাইরে অনশন করা ও তাঁদের সমর্থকদের অবস্থান নিয়ে মুঠোফোনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে কথা বলেন।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রক্টরকে জানান, হলের কিছু মেয়ে মধ্যরাতে গেট খুলে বাইরে অবস্থান করে অন্য শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছেন।
তিনি বলেন, এরা খুব বাড়াবাড়ি করছে, স্যার। এদের সবগুলোর ফাইল দেখে চিহ্নিত করে, গার্ডিয়ান ডেকে এনে স্থায়ীভাবে একাডেমিক বহিষ্কার করেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খোদা হাফেজ করে দেন।
প্রায় পাঁচ মিনিটের কথোপকথনে ডাকসুর নবনির্বাচিত জিএস কয়েকবার প্রক্টরের কাছে একই দাবি জানান।
এ সময় প্রভোস্টের ‘পদত্যাগ’ দাবি করে ‘রোকেয়া হলের আঙিনা, তোমার-আমার ঠিকানা’ বলে স্লোগান দেন অনশনকারীদের সমর্থকেরা।
এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইশরাত কাশফিয়া ইরা, বর্তমান সভাপতি ও ডাকসুর কমনরুম–বিষয়ক সম্পাদক লিপি আক্তার, হল সংসদের সদস্য সুরাইয়া আক্তারসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেত্রী।
ডাকসুর জিএস রাব্বানীর কাছে তাঁরা অভিযোগ করেন, অবস্থানকারীদের কারণে হলের শিক্ষার্থীরা ঘুমাতে পারছেন না, পড়তে পারছেন না।
এরপর রাব্বানী হলের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা অনশনকারীদের কয়েকজন সমর্থককে দেখিয়ে ছাত্রলীগ নেত্রীদের প্রশ্ন করেন, ‘রাত দুইটার দিকে বোরকা, নেকাব পরা এরা কারা? ছাত্রী সংস্থা? শিবিরের কর্মী? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের অবস্থান নিষিদ্ধ।’
এরপর রাব্বানী গণমাধ্যমকর্মীদের ডেকে বলেন, ‘এদের ফোকাস করেন।’
এ সময় ঘটনাস্থলে হলের হাউস টিউটর দিলারা জাহিদ, লোপামুদ্রা, সাদিয়া নূর খান এসে ডাকসুর জিএস রাব্বানীকে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
জিএস চলে যেতে উদ্যত হলে তাঁকে ফিরিয়ে আনেন হল ছাত্রলীগ নেত্রীরা। ফিরে এসে আন্দোলনকারীদের চিহ্নিত করতে হল ছাত্রলীগ নেত্রীদের নির্দেশ দেন রাব্বানী।
এরপর রাব্বানীর সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীরা কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, হলের গেট খোলা রেখে ছাত্রীদের অবস্থানের কথা শুনে হলে অবস্থান করা অন্য শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখানে আসি আমি। এসে দেখি, কয়েকজন মদ-গাঁজা খেয়ে এখানে আন্দোলন করছে। এই ১০-১৫ জনের কারণে অন্যদের ক্ষতি হলে সে দায় নেবে কে?
এ সময় গণমাধ্যমের সামনে এক শিক্ষার্থীর ছবি দেখিয়ে রাব্বানী অভিযোগ করেন, এই মেয়ে মদ-গাঁজা খেয়ে ধরা পড়েছিল। সে এখানে আন্দোলন করছে। এরাই ভোটের দিন ব্যালট ছিনতাই করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোট দিতে দেয়নি। প্রভোস্ট ম্যামকেও লাঞ্ছিত করেছে। এদের সামনে প্রভোস্ট ম্যাম আসবেন কীভাবে?
গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে রাব্বানী বলেন, সবারই আন্দোলন, অনশন করার রাইট আছে। কিন্তু রাত দুইটার দিকে হলের গেট খোলা রেখে অন্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার রাইট কারও নাই।
রাব্বানী বলেন, বোরকা পরে মুখ ঢাকা মেয়েরা এখানে কেন? এরা শিবিরের ছাত্রী সংস্থার। তারপরেও তারা ক্যাম্পাসে। এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা।
রাত সোয়া দুইটার দিকে নেতা-কর্মীদের নিয়ে হলের সামনে থেকে চলে যান রাব্বানী। কয়েক মিনিট পর মোটরসাইকেল করে এসে স্লোগান দিয়ে শোডাউন দেন ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী।
ছাত্রীদের অবস্থানের বিষয়ে চাইলে রাতে হলের সামনে উপস্থিত থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন হাউস টিউটর প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রীদের ভেতরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা যাচ্ছে না। তাদের নিরাপত্তার জন্য আমরাও এখানে অবস্থান করব।
ঘটনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। সবশেষ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত হল গেটের সামনে অবস্থান করছিলেন শিক্ষার্থীরা।
প্রসঙ্গত, সোমবার ডাকসু নির্বাচন চলাকালে রোকেয়া হলে ভোট কেন্দ্রের পাশের একটি কক্ষ থেকে তিন ট্রাংকে ফাঁকা ব্যালট পেপার উদ্ধার করাকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর ভোট শুরু এবং তার এক ঘণ্টা পর আবার ভোট বন্ধ হয়। কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বিকেল ৩টায় ফের ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
পিবিডি/এআইএস