প্রধানমন্ত্রীকে আগেই মেইল করেছিলেন হামলাকারী
ক্রাইস্টচার্চে নারকীয় সন্ত্রাসী হামলার আগ মুহূর্তে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্নকে ইমেইল করেছিলেন হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট। দুটি মসজিদে ভয়াবহ হামলার কয়েক মিনিট আগে হামলাকারীর মেনিফেস্টোসহ একটি মেইল পায় প্রধানমন্ত্রীর দফতর।
জাসিন্ডার প্রধান প্রেস সচিব অ্যান্ড্রো ক্যাম্পবেলের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো এমন তথ্য জানিয়েছে।
সম্পর্কিত খবর
তিনি গণমাধ্যমকে জানান, জাতিগত বিভেদের বার্তাসহ ইমেইলটি দফতরের একজনের কর্মকর্তার ইমেইল ঠিকানায় পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু তাৎক্ষণিক বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়নি।
নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের খবরে বলা হয়েছে, একই ম্যানিফেস্টো পাঠানো হয়েছে নিউজিল্যান্ডের কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের কাছে। প্রধানমন্ত্রীর একজন মুখপাত্র বলেন, যেসব গ্রাহকের কাছে ওই মেইল পাঠানো হয়েছে, তার বেশিরভাগই দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম। তালিকায় রাজনীতিবিদদের মধ্যে রয়েছেন পার্লামেন্টের স্পিকার ট্রেভর মালার্ড ও ন্যাশনাল পার্টির নেতা সাইমন ব্রিজ।
মুখপাত্র বলেন, মেইলে সে এই কাজের কারণ উল্লেখ করেছে। কিন্তু কী করতে যাচ্ছে তা বলেনি। তাই এটা রুখে দেয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। যে অ্যাকাউন্টে মেইলটি পাঠানো হয়েছে, সেটি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত না।
তার দপ্তরের কর্মকর্তারা এটি ব্যবহার করেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা মেইলে পাঠানো ওই ম্যানিফেস্টো দেখতে পান। তিনি সেটা সংসদীয় নিরাপত্তা বিভাগের কাছে পাঠিয়ে দেন। সেখান থেকে পাঠানো হয় পুলিশের কাছে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই কর্মকর্তা টেরেন্টের পাঠানো ম্যানিফেস্টো ততটা গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেননি। অন্য যাদের কাছে ম্যানিফেস্টো পাঠানো হয়েছে, তারাও এটিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেননি।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ আল নূর ও লিনউড মসজিদে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত হামলা চালায় ব্রেনটন টেরেন্ট। শান্ত পায়ে অস্ত্র হাতে নিয়ে মসজিদে ঢুকে সে। এরপর সামনে যাকেই পায় তাকেই গুলি করে । ভেতরে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। গুলি শেষ হয়ে গেলে বারবার ম্যাগাজিন রিলোড করছিল সে। একপর্যায়ে মসজিদের মধ্যে থাকা আহতদের আবারো গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। মসজিদের ভেতরে রক্তের বন্যা বাধিয়ে শান্তভাবে বেরিয়ে আসে হামলাকারী।
তার নৃশংসতার কবল থেকে কয়েক মিনিটের জন্য রক্ষা পেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা। শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে তারা ওই সময় গিয়েছিলেন মসজিদে। ভিতরে রক্তে তখন সয়লাব। একজন নারী বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের ভেতরে প্রবেশ করতে বারণ করেন। তার নিষেধেই তড়িঘড়ি করে ওই স্থান ত্যাগ করে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
ব্রেন্টন টেরেন্ট তার শুক্রবারের রক্তক্ষয়ী হামলার কারণ ম্যানিফেস্টোতে বিস্তারিত তুলে ধরেছে।
এতে বলেছে, আরেক সন্ত্রাসী অ্যান্ডার্স ব্রেইভিকের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিউজিল্যান্ডে হামলা চালিয়েছে সে। একই সঙ্গে সে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান এবং লন্ডনের মেয়র সাদেক খানের মৃত্যু কামনা করেছে টেরেস্ট। ওই ম্যানিফেস্টোর নাম দিয়েছে সে ‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’।
৪৯ জন নিহত এবং অনেকেই আহত হওয়া এ হামলার ৮৭ পৃষ্ঠার মেনিফেস্টো প্রায় একই সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পোস্ট করা হয়েছিল। যেখানে অভিবাসী এবং মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য রয়েছে।
শনিবার (১৬ মার্চ) স্থানীয় সময় সকালে হামলার সন্দেহভাজন মূলহোতা অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত ব্রেন্টন ট্যারেন্টের (২৮) বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন লঙ্ঘনসহ আরও বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনা হবে বলে ধারণা করছেন আইন প্রণেতারা।
আদালতে হাজির করা হলে আসামির পক্ষ থেকে কোনো জামিনের আবেদন পড়েনি। এছাড়া মামলার শুনানির জন্য আগামী ০৫ এপ্রিল তাকে আবারও হাজির করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন বলেছেন, ব্রেন্টন ট্যারেন্টের কাছে ২০১৭ সালে নেওয়া 'ক্যাটাগরি এ' শ্রেণির একটি লাইসেন্স রয়েছে।এছাড়া ক্রাইস্টচার্চ হামলায় তিনি পাঁচটি অস্ত্র ব্যবহার করেছেন। এসময় তিনি এও বলেন, আমাদের অস্ত্র আইনে পরিবর্তন আনা হবে।
এর আগে অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, ব্রেন্টনকে অস্ট্রেলিয়ায় হাজতবাস করতে হয়েছিল। তিনি মৌলবাদী, ডানপন্থি ও সহিংস সন্ত্রাসী। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন আটক আরও দুইজনকে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি রেকর্ড ছিল না।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে বর্বরোচিত হামলায় আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পিবিডি/জিএম