• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আদর নাকি যৌন নিপীড়ন: ভাইরাল ছবি নিয়ে যা বললেন সেই নারী

প্রকাশ:  ২৫ মার্চ ২০১৯, ২২:৫৩ | আপডেট : ২৫ মার্চ ২০১৯, ২২:৫৯
বান্দরবান প্রতিনিধি

বান্দরবানের আলী কদম উপজেলায় ম্রো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির এক বিধবা নারীকে সেখানকার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের জড়িয়ে ধরার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এসব ছবি শেয়ার করে অনেকেই নারীকে যৌন হয়রানি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু আলোচিত সেই ম্রো নারী বলছেন, সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা।

তিনি বলেছেন, তাকে জড়িয়ে ধরে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম কোনো অন্যায় করেননি ।

সোমবার (২৫ মার্চ) বিকেল ৫টায় আবুল কালামের বাসভবনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রুমপাও।

লিখিত বক্তব্যে ম্রো নারী রুমপাও মুরং বলেন, ‘গত ২২তারিখ মেরিন চর এলাকায় নবনির্ব‌াচিত চেয়ারম্যানকে গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দেওয়ার সময় তিনি আমাকে আনন্দে জড়িয়ে ধরেন। এতে তিনি কোনো অন্যায় করেননি। আমি ১৮ই মার্চ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান আবুল কালামের জন্য অনেক কষ্ট করেছি। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় আমরা অনেক খুশি হয়েছি। তিনি আমার বড় ভাই। তিনি আমাকে ছোট বোন হিসেবেই জড়িয়ে ধরেছেন। আমাদের এ ভাই বোনের সম্পর্কে অনেকে খুশি নন। তাই তারা আমাদের সম্পর্কে উল্টা পাল্টা কথা বলে ফেসবুক, ইন্টারনেট, অনলাইন ও টেলিভিশনের মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা একই পরিবারের মত। তাই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আমরা কখনোই প্রতিবাদ করব না।

তিনি জানান, আবেগে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার সময় নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন।

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তাদের পাড়ার কারোরই কোনো অভিযোগ নেই, চেয়ারম্যানের প্রতি তারা সবাই খুবই খুশি বলেও সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন রুমপাও মুরং।

তিনি বলেন, আবুল কালাম চেয়ারম্যান আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই করেন নি। তাই আমরাও এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করব না

তিনি আরও বলেন, এ ছবিগুলো ভাইরাল করা আমার ও আমাদের পরিবারের বক্তব্য নেয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে একটি সুন্দর ভ্রাতৃত্ববোধকে পুরো পার্বত্য এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ছবিগুলো ভাইরাল করা হয়। সাধারণত ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী এ ধরনের সাম্প্রদায়িক উসকানি সৃষ্টি করে তৃপ্তি পায়। আমি ও আমার পরিবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি এ ধরনের অপপ্রচার যারা করে তারা এলাকার শান্তি চায় না, সহাবস্থান চায় না। কেন আমাদের নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে আমি জানি না, এটা দুঃখজনক ও মানহানিকর।

রুমপাও বলেন, চেয়ারম্যান আবুল কালামের সঙ্গে আমাদের পরিবারের দীর্ঘদিনের একটি সম্পর্ক। আমরা তাকে অসাম্প্রদায়িক ও সৎ চরিত্রবান ব্যক্তি হিসেবে জানি। তার বাবাও তার মতো সব সম্প্রদায়ের প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। জয়ী হওয়ার পর আমরা পাড়াবাসী তাকে সংবর্ধনা দেই। সংবর্ধনা চলাকালে আমি অন্যদের মতো চেয়ারম্যানকে মাল্যদান করার পর আবেগপ্রবণ হয়ে খুশিতে কান্না করে ফেলি এবং একপর্যায়ে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার সময় চেয়ারম্যান আমাকে ধরে ফেলেন। তিনি এমনটা না করলে আমি গুরুতর আহত হতাম।

ম্রো সম্প্রদায়ের এই নারী আরও বলেন, চেয়ারম্যান কান্না থামানোর জন্য আমাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় আমার পরিবারের সদস্য মা-বাবা ভাইসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাসহ দুই শতাধিক লোক সংবর্ধনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। চেয়ারম্যানকে আমি আপন বড় ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা করি এবং তিনি আমাদের ছোট বোনের মতো জানেন। তার মধ্যে আমি বা আমরা কখনো খারাপ কিছু দেখিনি। তিনি এই ধরনের লোক নয়।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি আমার ও চেয়ারম্যান আবুল কালামের ছবিসহ অনুষ্ঠানের কিছু ছবি চেয়ারম্যান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে পোস্ট করেন। ওই ছবিগুলোকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের কিছু লোক ও প্রতিক্রিয়াশীল চক্র আমাদের ছবিগুলো ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে বিকৃত মন্তব্য করেন, যা আমার এবং চেয়ারম্যানের আত্মসম্মানে আঘাত লাগে। আমি ও আমার পরিবার চেয়ারম্যানকে আমাদের পরিবারের সদস্য হিসেবে জানি। আমি তার একজন ভক্তও বটে।

সংবাদ সম্মেলনে রুমপাও এর বড় ভাই মেনরুং ম্রোসহ স্থানীয় সাংবাদিক ও মেরিন চর এলাকার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, গত ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে বান্দরবানের আলীকদমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মো. আবুল কালাম। এরপর ২২ মার্চ স্থানীয় নোয়াপাড়া ইউনিয়নের মেরিনচর পাড়ায় সংবর্ধনা নিতে যান তিনি। ওই পাড়াটিতে ম্রো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষদের বসবাস। সেখানেই ওই নারীকে জড়িয়ে ধরেন মো. আবুল কালাম, আর সেসব ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেসবুকে ওই ঘটনার কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন আবুল কালাম।

এ বিষয়ে আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম বলেন, কুরুক পাতা ইউনিয়নের মেরিন চর এলাকায় আমাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ আমাকে সংবর্ধনা দেয়। যে মেয়ের সঙ্গে ছবি তুলেছি, তার পরিবারের সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই আমার পারিবারিক সম্পর্ক। মেয়েটিকে আমি ছোট বোনের মতো। এখানে জোর করে ছবি তোলা হয়নি। আজও বোনের মতোই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে ছবি তুলেছি। এ ছবি তোলার সময় পাশেই তার মা, বাবা ও বড় ভাই ছাড়াও পাড়ার শত শত লোকজন ছিল। আমি যে ছবি তুলেছি তা নিয়ে তার পরিবারের বা পাড়ার কারও কোনো ধরনের আপত্তি ছিল না।

এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কেউ কেউ নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওই ব্যক্তির শাস্তি হওয়া উচিৎ বলেও মন্তব্য করেছেন। তবে আলোচিত চেয়ারম্যানের দাবি, তিনি কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে নয়, বরং সান্তনা দিতেই ওই নারীকে জড়িয়ে ধরেছিলেন।

ভাইরাল হওয়া কয়েকটি ছবিতে দেখা গেছে, তিনি ম্রো নৃগোষ্ঠির এক বিধবা নারীকে জনসম্মুখে জড়িয়ে ধরে আছেন। ওই নারীর অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট যে, তিনি এতে খুবই অস্বস্তি বোধ করছেন এবং জোর করে চেয়ারম্যানের হাত থেকে ছুটে যেতে চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে চেয়ারম্যান তাকে জোরপূর্বক ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

সামাজিক মাধ্যমে ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই চেয়ারম্যানের সমালোচনায় সরব হয়েছেন। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির একজন বিধবা নারীকে এভাবে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হেনস্তা করার দায়ে চেয়ারম্যানের বিচারও চেয়েছেন অনেকে।

পিবিডি/জিএম

বান্দরবান,আলী কদম উপজেলা,ম্রো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close