‘লেখার আগে একটি ছড়া, পড়তে হবে একশো ছড়া’
লুৎফর রহমান রিটন। শিশুসাহিত্যিক এবং ছড়াকার। তবে ছড়াকার হিসেবে মানুষের কাছে তিনি সর্বাধিক প্রিয়। বাংলা ছড়াসাহিত্যের একজন শক্তিমান ছড়াকার তিনি। আজ থাকছে তার সাক্ষাৎকার-
সম্পর্কিত খবর
রবিউল কমল: আপনার প্রথম লেখা ছড়ার প্রথশ চার লাইন শুনতে চাই-
লুৎফর রহমান রিটন: আমার লেখা প্রথম ছড়াটা ছিলো খুবই দুর্বল মানের একটা ছড়া। কিন্তু সেই দুর্বল ছড়াটাই ১৯৭২ সালে পরম যত্নে ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার আসরে ছেপে দিয়েছিলেন রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই। ছড়াটা ছিলো এমন--
খুকুর পুতুলের বিয়ে
পোলাও কোর্মা খেয়ে
বর আসবে পালকি চড়ে
বকুল তলা দিয়ে।রবিউল কমল: আবার যদি ছেলেবেলা ফিরে পেতেন, তাহলে কি করতেন?
লুৎফর রহমান রিটন: আবার যদি ছেলেবেলা ফিরে পেতাম তাহলে ছেলেবেলায় দেখা গ্রামে ফিরে যেতাম। শিং মাছের ঝোল দিয়ে লাল চালের ভাত খেতাম। ছিপ দিয়ে মাছ ধরতাম। ঠেলি জাল দিয়ে মাছ ধরতাম। কোঁচ দিয়ে মাছ ধরতাম। নদীতে সাঁতার কাটতাম। একলা একা কোষা নৌকা চালিয়ে নদীর জলে ভাসতে ভাসতে চলে যেতাম দূরে বহু দূরে, যেখান থেকে ফিরতে পথ ভুল হতো। সাপ্তাহিক হাটবারের দিন হাটে যেতাম। ঠোঙা ভর্তি মুরালি কিনে খেতাম। চিনির শক্ত প্রলেপ মাখা জাম মিষ্টি কিনে খেতাম। সবুজ কচুরিপানার বনে ফুটে থাকা বেগুনি-শাদা কচুরিফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে মোহিত হতাম। সকালের সোনালি রোদে শিমের মাচায় সুন্দরী শিমফুলের নৃত্য দেখতাম। এবং কিউট একটা ছাগলের বাচ্চা পুষতাম। রবিউল কমল: কেউ যদি ছড়াকার রিটন হতে চাই, তাহলে তাকে কি পরামর্শ দেবেন?লুৎফর রহমান রিটন: লেখার আগে একটি ছড়া, পড়তে হবে একশো ছড়া। অর্থাৎ পড়তে হবে বেশি। কিন্তু আমার অধিকাংশ বন্ধুই উল্টোটা করে। লেখে বেশি পড়ে কম।
রবিউল কমল: ছোটদের জন্য লেখা কিছু বইয়ের নাম বলুন, যেগুলো আপনার প্রিয়-
লুৎফর রহমান রিটন: নিজের লেখা কোনো বই-ইতো নিজের কাছে অপ্রিয় হবার কথা নয়। একেকটা বই তো লেখকের কাছে একেকটা সন্তানের মতোই। তারপরেও কয়েকটির নাম জানতে চাইলে বলবো, তালিকাটা এরকম--ধুত্তুরি, শেয়ালের পাঠশালা, ঘোড়ার ডিম, হ্যালো হুলো, ভূতের ডিমের অমলেট, নাই মামা কানা মামা, এই বইটা তোমার, বাচ্চা হাতির কাণ্ডকারখানা, ভাইবোনের গল্প, ধিতাং ধিতাং, আমার একটা বেড়াল ছিলো, রসগোল্লাটা কথা বলে।
রবিউল কমল: আপনাকে যদি একটা ইচ্ছে পূরণের দৈত্য দেওয়া হয়, কোন দুটি ইচ্ছেকে আপনি পূরণ করবেন?
লুৎফর রহমান রিটন: ১। ছেলেবেলায় ফিরে গিয়ে ঝকমকে একটা গিটার কিনবো। ( তখন আমার টাকা ছিলো না। একটা গিটার কেনার খুব শখ ছিলো ছেলেবেলায় কিন্তু বাজে খরচ বিবেচনা করে বাবা সেটা কিনে দেননি। এখন আমার টাকা আছে। চাইলে দোকানের সবক'টা গিটারই কিনে ফেলতে পারি। কিন্তু কেনা হয় না। কারণ ছেলেবেলার সেই স্বপ্নটা মরে গেছে। ) ২। ইচ্ছে পুরণের দৈত্যটাকে বলবো--আধপেট খেয়ে কিংবা খেতে না পেয়ে পেটভর্তি খিদে নিয়েই কাঁদতে কাঁদতে যে শিশুগুলো ঘুমিয়ে আছে রেল স্টেশনে, ফুটপাথে কিংবা বারান্দায়, তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করো। ওদের উদোম গায়ে পোশাক আর পায়ে জুতো পরিয়ে দাও। কারখানার কাজ থেকে ছাড়িয়ে এনে ওদের কাঁধে তুলে দাও বই-খাতা-পেন্সিলের ব্যাগ, তারপর ভর্তি করিয়ে দাও কোনো স্কুলে। অসুস্থ শিশুদের জন্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করো। আর প্রত্যেকের থাকার জন্যে বানিয়ে দাও বাড়ি। যাতে আর একটা শিশুকেও রাস্তায় ঘুমুতে না হয়।
রবিউল কমল: লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে চার লাইনের একটা ছড়া লিখুন আমাদের ছোট্ট বন্ধুদের জন্য
লুৎফর রহমান রিটন:
লাল-সবুজের এই পতাকা অনেক অনেক দামি
তিরিশ লক্ষ প্রাণের দামেই কিনেছি তা আমি।
আমি মানে আমরা, মানে বীর বাঙালি জাতি
এই পতাকাই সাহস আমার, এই পতাকাই সাথী।
রবিউল কমল: ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...’ এই দুটি লাইন শোনার পরে আপনার অনুভূতি কেমন হয়?
লুৎফর রহমান রিটন: ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...’ গানটি শোনার সময় ভীষণ ইমোশনাল হয়ে পড়ি। চোখের কোণে অশ্রু জমে। বুক ঠেলে কান্না আসে। কেনো এমন হয় জানি না। এই প্রেম এই ভালোবাসার এই আবেগের কোনো ব্যাখ্যা আমার জানা নেই।