• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

জনপ্রিয় লেখকের সংজ্ঞা কী?

প্রকাশ:  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:১০
অনীশ দাস অপু

আমি সেই লেখককে জনপ্রিয় বলব দেশের অধিকাংশ পাঠক যার নাম জানেন, যার লেখা পাঠক আগ্রহ নিয়ে পড়েন, যিনি আলোচিত, সমালোচিত দুটোই হন, যাকে বইমেলা এলে গাঁটের পয়সা খরচ করে পত্রিকার পাতায় বইয়ের বিজ্ঞাপন দিতে হয় না।

একজন জনপ্রিয় লেখকের বেশিরভাগ বই পাঠক পছন্দ করেন কারণ, আবালবৃদ্ধ বণিতা তার লেখা বুঝতে পারেন। বাংলা একাডেমিসহ নানান পুরস্কারে ভূষিত হলেই একজন লেখক সর্ব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন না- যদি না তাঁর বই সর্ব শ্রেণীর পাঠক গ্রহণ করেন! আমি বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত অনেক লেখকের লেখায় দাঁত ফোটানোর চেষ্টা করেছি, পারি নি!

আপনি কখনোই জনপ্রিয় লেখক হতে পারবেন না যদি আপনার লেখায় পণ্ডিতি ফলানোর চেষ্টা করেন। পক্ককেশ সমালোচকরা হয়তো আপনার তথাকথিত কালজয়ী বইটির প্রশংসা করবেন কিন্তু সাধারণ পাঠকদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া কদাপি মিলবে না।

হুমায়ূন আজাদ অসাধারণ প্রাজ্ঞ লেখক- প্রবন্ধকার ছিলেন। কিন্তু তিনি হুমায়ূন আহমেদকে হিংসে করতেন তাঁর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার জন্য। তিনি কারণে- অকারণে এই কিংবদন্তী লেখকটিকে অপমান করতেন। তাঁর ৭০-৮০ পৃষ্ঠা আয়তনের বইগুলোকে অপন্যাস বলে তুচ্ছ- তাচ্ছিল্য করতেন। আজ দুজনেই গত। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ আজও নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করছেন বাংলা সাহিত্যর আকাশে, লাখ লাখ পাঠকের মনে। কিন্তু হুমায়ূন আজাদকে নিয়ে এমন উচ্ছ্বাস আমার অন্তত চোখে পড়ে নি!

হুমায়ূন আহমেদের দুই দারুণ সৃষ্টি হিমু ও শুভ্রকে নিয়ে দুই-একজন লেখককে নকলবাজির চেষ্টা করতে দেখেছি। বিশেষ করে হিমু চরিত্রটিকে নিয়ে এখনও কেউ কেউ নকলের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এই মাথামোটাদের মাথায় এটা ঢোকে না যে একটি legendary character কে নকল কিংবা অনুকরণ কিছুই করা যায় না। যেহেতু ওই চরিত্রটির বৈশিষ্ট্যগুলো বহু আগে পাঠকদের মাথায় ঢুকে আছে। কেউ ওই হিমু বা শুভ্রকে নকল করতে গেলে তাকেই নাকাল হতে হবে। এভাবে জনপ্রিয় হওয়া যায় না। ঘিলু থাকলে নিজেরাই একটি ভিন্ন কিছু তৈরি করে নিন না!

মোঃ জাফর ইকবাল নিঃসন্দেহে দেশের সর্বাধিক দ্বিতীয় জনপ্রিয় লেখক। (প্রথমজন, বলাবাহুল্য এখনও হুমায়ূন আহমেদ)। অনেকেই তাঁর মতো জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন লেখক হবার স্বপ্ন দেখেন। সারাবছর যাদের লেখালেখির কোনও খবর নাই, বইমেলা এলেই দেখি বিজ্ঞাপনের চোটে নিজেদেরকে ভাসিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু তাঁরা কখনও জাফর ইকবালের মতো জনপ্রিয় হতে পারবেন না। কেন জানেন? কারণ তাঁদের লেখায় আমি জাফর ইকবালের দুর্দান্ত গল্প কিংবা আশ্চর্য গতিময় ভাষা কোনটাই পাইনি। এরা পাঠকদের কাছে আলোচিত বা সমালোচিত কোনটাই নন। কি করে হবেন বেশীরভাগ পাঠক এদের নামই জানেন না!

জনপ্রিয়তা পেতে হলে এমন বই লিখতে হবে যা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শুধু পত্রিকায় নিজেদের জনপ্রিয় বলে বিজ্ঞাপন দিয়ে বইমেলা ভিত্তিক জনপ্রিয় হলে চলবে না, সারাবছর যার বই পাঠক আগ্রহ নিয়ে কিনবেন তিনিই তো আসল জনপ্রিয়! আর এ কাতারে রয়েছেন আরেকজন লেখক তিনি কাজিদা- কাজী আনোয়ার হোসেন। যার মাসুদ রানা পাঠক সারাবছরই আগ্রহ নিয়ে কেনেন এবং পড়েন।

সত্যি বলতে কি এই তিনজন লেখক ছাড়া আমার চোখে আর কাউকে জনপ্রিয় বলে মনে হয় নি! আমাদের দেশে ভাল ভাল লেখক অনেক আছেন। কিন্তু তাঁরা খুব বেশি পাঠক প্রিয় নন। সেটা অনুবাদ বা মৌলিক সাহিত্য যেটাই হোক। গায়ের জোরে (পড়ুন পয়সার জোরে) নিজেকে পত্রিকার বিজ্ঞাপনে জনপ্রিয় লেখক বলে যে কেউ দাবি করতেই পারেন। কিন্তু আসল বিচারক তো পাঠক! তাঁরা যদি আপনাকে জনপ্রিয় করে তোলেন তবেই আপনি জনপ্রিয় হতে পারবেন নতুবা নিজের ঢাক নিজেই বাজাতে থাকুন। তবে সাবধান! বেশি বাজালে শেষে ঢাকটাই না ছিড়ে যায়!

লেখক- অনীশ দাস অপু: সাহিত্যিক।

(লেখকের ফেসবুক থেকে)

পিবিডি/ হাসনাত

অনীশ দাস অপু,একুশে বইমেলা,জনপ্রিয় লেখক
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close