• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আলো আসুক ফিরে: এক বৈচিত্রময় সমকালীন সৃষ্টি

প্রকাশ:  ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৩:৫১
আ.ফ.ম. মশিউর রহমান

এ বছরের বইমেলায় প্রকাশিত তরুণ লেখক শাফিউল কায়েসের সমকালীন উপন্যাস আলো আসুক ফিরে পড়ার সুযোগ হলো কয়েকদিন পূর্বে। আর সেই থেকেই ভাবছি বইটির বিষয়ে একটি রিভিউ লেখার। প্রত্যেক লেখকেরই একটি নিজস্ব ভাবনার জগত যেমনি থাকে ঠিক একইভাবে থাকে একটি নিজস্ব বুনন শৈলী, আর তেমনই এক মনোমুগ্ধকর বৈচিত্রময় নির্মাণ শৈলী এই তরুণ লেখকের প্রথম উপন্যাসেই ফুটে ওঠেছে।

উপন্যাসটির শুরুই হয়েছে ভালোবাসা হোক উন্মোক্ত নামক একটি অসাধারণ কবিতার মাধ্যমে, যেখানে লেখকের সার্বজনীন ভালোবাসাপূর্ণ সত্তা যেমন ধরা দিয়েছে তেমনি করে কবি সত্তাও উঁকি দিয়েছে। যদিও লেখক বলেছেন, এই কবিতার সাথে উপন্যাসটির কোনো সম্পর্ক নেই। তবে রিডার রেসপন্স থিওরির দৃষ্টিকোন থেকে আমি একটি সম্পর্ক খুঁজে নিতেই পারি।

তরুণ ঔপন্যাসিক কায়েস এই উপন্যাসটিতে মূলত উপজীব্য করেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত নির্যাতিত রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর বাস্তব জীবনচিত্র। তিনি মূল প্লট নির্মাণ করেছেন রশিদা ও আবীর নামক দুটি চরিত্রের প্রণয় ও পরিণয়ের কাহিনী নিয়ে। তবে এসবের সাথে নিপুন হাতে যুক্ত করেছেন সাবপ্লট ও গৌণ চরিত্রসমূহ। আর এর মধ্য দিয়েই তুলে ধরেছেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পূর্ব ইতিহাস ও সময়ে সময়ে নিপীড়ীত হবার রোমহর্ষক ঘটনা। বিশেষ করে বর্তমান পরিবেশে শরনার্থী শিবিরে তাদের মানবেতর জীবনযাপন ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের যাত্রা। যেখানে রয়েছে অসংখ্য পিতা-মাতা হারানো সন্তান, সন্তানহারা পিতা-মাতা, ভাই হারানো বোন কিংবা বোন হারানো ভাই এমন সব পরিবার। যারা এখনো কেঁপে ওঠেন ফেলে আসা রোমহর্ষক ঘটনার কথা স্মরণ করে।

আর এমনটিই ঘটেছে রশিদার ক্ষেত্রেও, যার ছোট ভাই-বোনের মুখে খাবার তুলে দিতে এমনকি অনৈতিক পথে পর্যন্ত পা বাড়াতে হয়। যেমনটি তার বান্ধবী লতুর ক্ষেত্রেও ঘটে। আর এখানে ফুটে ওঠেছে, জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার তরে কিভাবে এই জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ দিন দিন জড়িয়ে যাচ্ছে দেহ ব্যবসা ও মাদক ব্যবসার বেড়াজালে যা শুধু ঐ জনগোষ্ঠী নয় বরং পুরো বাংলাদেশের জন্যই হুমকির কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে।

উপন্যাসটির শেষ দিকে এসে দেখা যায় আসল চমক যেখানে রশিদা আর আবীরের নাটকীয়ভাবে দেখা হয়ে যায়। তারা একে অন্যকে এতদিন পরে ফিরে পেয়ে যেনো সাত রাজার ধন ফিরে পায়। ভালোবাসার সত্যিকার শক্তিবলে রশিদার পদস্খলনের ঘটনা জেনেও আবীর সব ভুলে তাকে নিয়েই বাঁধে সুখের নীড়। আর এর পরে লেখক আবারো একটি কবিতার মাধ্যমেই শেষ করেছেন তার উপন্যাসটি যা পুরো উপন্যাসটিকেই একটি আলাদা মাত্রা দিয়েছে। সর্বোপরি তরুণ লেখক হিসেবে সত্যিকারেই এটি এক অসাধারণ সৃষ্টি যদিও ভাষাগত কিংবা মুদ্রণজনিত কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়েছে যা তরুণ লেখক হিসেবে অভিজ্ঞতা কমের কারণে কিংবা তাড়াহুড়োর কারণেই হয়েছে বলে আমি মনে করি। তবে আশা করি বইটি আমার মত অন্যান্য পাঠকের মনেও সাড়া ফেলবে। উল্লেখ্য উপন্যাসটি বইমেলার লেখালেখি প্রকাশনীর ৪৩৮ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে।

লেখক: কবি, সাংবাদিক ও গবেষক (এমফিল গবেষণারত) ইমেইল: [email protected]

পিবিডি/এআইএস

কায়েস
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close