• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

গোধূলী রঙের ভোর ও লেখক হাসনাত মোশাররফের গ্রন্থ পর্যালোচনা

প্রকাশ:  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:৫৪ | আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:৪৫
হাসনাত মোশাররফ

আটাশটি কবিতা নিয়ে তরুণ কবি ঈস্পিতা অবনী চৌধুরী'র কাব্যগ্রন্থ 'গোধুলি রঙের ভোর' এবারের একুশের বই মেলায় প্রকাশ করেছে 'জার্নিম্যান বুকস'।

কবি নিগৃহীত, পোড়খাওয়া নারীদের সহমর্মিতায় লিখেছেন বেশ কয়েটি কবিতা। তথাকথিত 'পুরুষদের' নারীদের প্রতি বঞ্চনার নানান দিকগুলো আন্তরিকভাবে দেখাতে চেয়েছেন সাহসিকতার সাথে। সত্যি-তো নারী উন্নয়নে কতো সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, বক্তৃতা চলছে সেই কোন কাল থেকেই, কিন্তু ফলাফল? - যথা তিমিরেই নারীর অবস্থান! ক্ষোভ এ জন্যেই কবির। আর বসে না থেকে প্রতিবাদী হওয়ার আহবান জানান কবি।

সম্পর্কিত খবর

    বইয়ের প্রথম কবিতা 'অতৃপ্ত ফানুস'। কবিতাটির প্রথম স্তবক -

    "তোমার ছায়াপথ জুড়ো হেঁটে যাওয়া

    সময়ের বুকে আমি গড়ে তুলেছি

    ক্ষুধা আর তৃষ্ণার ঘর।"

    কিন্তু শেষ তিনটি লাইনে কী দুঃখ বোধ -

    "সমস্ত পদ্মলিপ্সার অন্তরালে এক গভীর জীবন বয়ে যায়;

    পান করে নাও তার অমিয় সুখের,

    মৃতসঞ্জীবনী।"

    দ্বিতীয় কবিতা - উচ্ছিষ্ট'তে কবি বলছেন নারীকে প্রতিবাদী হতে -

    "শরীর নিভিয়ে দিচ্ছে রুখে দাঁড়াবার প্রতিবাদী মশাল" এবং জিজ্ঞেস করছেন - "নারী তুমি কেন জন্মেছো?"। তারপরেই একরকম যেন মিনতি করেই বলছেন -

    "প্রতিবাদিনী হও

    নিশ্চুপ থেকো না তুমি নারী,

    পথের সীমানায় আপন অধিকারটুকু আদায়ে মরিয়া হোক,

    প্রাণবন্ত অদম্য ও দুর্বার হোক।"

    'বারবিলাসিনী' কবিতায় কবি ক্ষুব্ধ।

    "ছিঁড়ে ফেলুন গোপন আবরণ!

    তার গায়ে আঁকুন প্রেমের মানচিত্র।

    সংকোচ রেখে একবার স্পর্শ এঁকে দিন পাঁজরে।"

    কিন্তু কবির এই ক্ষুব্ধতার আগুন বাধ্য হয়েই পুরুষ শাসিত একপেশে সমাজের কাছে যেন নতজানু।

    "সত্যি বলছি, বিশ্বাস করুন, সব কিছুর পরেও,

    শুধু আপনার বুকেই সে জ্বলতে থাকা স্বর্গকে পায়।"

    বইটিতে বেশ কয়েকটি প্রেমের কবিতা স্থান পেয়েছে। তবে প্রেমের ক্ষেত্রেও কবি সন্দিহান! নয়-তো তিনি তাঁর 'স্পৃহার আলিঙ্গন' কবিতায় জিজ্ঞেস করতেন না - "তুমি আছো? সত্যি আছো? বলো তুমি!"

    আবার 'বসন্তসেনা' কবিতায় -

    "সারারাত খেলার পরে

    ভোর- ভোর খুঁজছে মৃগনাভির বোঁটা।"

    একান্ত আপন করে চাওয়া-পাওয়ার মাঝেও এতো স্বার্থবাদী কেনো মানুষ! দুঃখ-বোধে একপ্রকার বাধ্য হয়েই তিনি 'অপূর্ণতা' কবিতায় সমর্পণ করেন নিজেকে-

    "সব সংশয় পূর্ণতা পেলো

    ইচ্ছেরা সদাই হলো

    গ্রহণের বিভীষিকা হয়ে।"

    কবি ভুলে যান নি আমাদের মহান মুক্তি যুদ্ধের অমর গাঁথা। সাহসী যোদ্ধাদের।-

    "যে তরুণ, যে চাষা, ছাত্র-শ্রমিক হাসিমুখে

    বুকে বেঁধেছে গোলা, ছুঁড়েছে গ্রেনেড,....

    রচিত হলো রক্তমাখা মহাকাব্যের শেষ পঙক্তি-

    জন্ম নিলো নতুন এক রাষ্ট্র, নাম তার 'বাংলাদেশ'।"

    'গোধূলি রঙের ভোর' কবিতার বইটির কবিতাগুলো শব্দের বুননে যেন এক একটি গল্প। চলমান গতির কারণে পড়তে কোনো বাধাগ্রস্ত হয় নি। উপমাগুলো বিষয়ের সাথে চমৎকার মানানসই। ঈস্পিতা অবনী চৌধুরী তরুণ কবি। তাঁর এটি প্রথম কবিতার বই হলেও সুখপাঠ্য। যেটুকুন অসামঞ্জস্য, তা তারুণ্যের কারণেই। কবি এভাবে লেখা অব্যাহত রাখলে পাঠক যেমন নতুন ভাবধারার কবিতা পড়তে পারবেন, তেমনি কবিতার জগতেও নতুন একটি নক্ষত্রের স্থায়ী আসন হবে বলে ধারণা করাই যায়।

    সাধারণ ও যে কখনো কখনো অসাধারণ হয়, তা এই বইটিই দেখিয়েছে তার প্রচ্ছদে। পরিচ্ছন্ন ছাপা, উন্নতমানের কাগজের ব্যবহার। সব মিলিয়ে কবিতার এই বইটি সংগ্রহে রাখার জন্য উপযুক্ত।

    প্রসঙ্গত- কবি- ঈস্পিতা অবনী চৌধুরীর একক কাব্যগ্রন্থ 'গোধূলি রঙের ভোর'। প্রকাশক - জার্নিম্যান বুকস, প্রচ্ছদ- তারিক সুজাত, প্রকাশকাল - একুশে বইমেলা'১৯, ঢাকা। মূল্যঃ ৳ ২০০.০০, মেলা মূল্য: ৳ ১৫০.০০

    লেখক- নাট্যকার

    হাসনাত মোশাররফ,ঈস্পিতা অবনী চৌধুরী,গোধুলি রঙের ভোর
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close