দখল-দূষণে মরছে দেশের নদ-নদী, প্রয়োজন সেনাবাহিনীর
নদীমাতৃক বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকারে ঘিরে আছে চারটি নদ-নদী বুড়িগঙ্গা, বালু, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ। এ নৌপথ ঘিরেই ঢাকা শহরের বিস্তার লাভ করেছে। ১৯৭০ সালে এই দেশের নৌপথের দৈর্ঘ্য ছিল ২৪,০০০ কিলোমিটার। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পরে গত ৪৭ বছরে সেই নদীপথ বর্তমানে মাত্র ৩,০০০ কিলোমিটার। ক্রমেই সরু হচ্ছে ঢাকার চারপাশের সবগুলো নদ-নদী। নদীর ভেতরে গড়ে উঠছে বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা। আর অস্তিত্ব হারাতে বসেছে ঢাকার চারপাশের নদ-নদীসহ দেশের বেশির ভাগ নদী!
বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব সড়কে দেশের সকল নদ-নদী দখলমুক্ত করতে দ্রুত সেনাবাহিনী নিয়োগের দাবিতে নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন নোঙর এক মানববন্ধনে এ আহবান করে।
সম্পর্কিত খবর
নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন 'নোঙর' সভাপতি সুমন শামস এক লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘দখল-দূষণের কারণে মরে যাচ্ছে দেশের অধিকাংশ নদ-নদী’তাই এখনই প্রয়োজন সেনাবাহিনী সহযোগিতা। গত ২০০১ সাল থেকে এই পর্যন্ত ঢাকার চারপাশে নদ-নদীগুলোর ২৫০ একরের বেশি জায়গা দখল হয়েছে। যদিও রাজধানীর ভেতরে গত সাড়ে তিন দশকে খাল, জলাশয় ও নিম্নভূমি দখল হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ২৪৫ হেক্টর। আইডব্লিউএম এক সমীক্ষায় দেখাযায়, ১৯৭৮ সালে ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় জলাভূমির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯৫২ ও নিম্নভূমি ১৩ হাজার ৫২৮ হেক্টর। একই সময়ে খাল ছিল ২ হাজার ৯০০ হেক্টর। ২০১৪ সালে ঢাকা ও আশপাশে জলাভূমি কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৩৫, নিম্নভূমি ৬ হাজার ১৯৮ ও নদী ১ হাজার ২ হেক্টর।
২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা দখলের চিত্রে দেখা গেছে, ঢাকার চারপাশে সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে তুরাগ নদ। আবদুল্লাহপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত ৫ দশমিক ৭৬ মাইল এলাকাজুড়ে গত এক যুগে নদের ১২০ দশমিক ৭৯ একর ভুমি দখল হয়েছে। এর পর সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে আদি বুড়িগঙ্গা নদী। কামরাঙ্গীরচর থেকে বসিলা পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪১ মাইল এলাকায় গত এক যুগে নদীটি দখল হয়েছে ৯৭ দশমিক ১৭ একর। কাঁচপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫৭ মাইলজুড়ে শীতলক্ষ্যা ও ডেমরা থেকে নন্দীপাড়া পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ মাইলজুড়ে দখল হয়েছে বালু নদ।
বুড়িগঙ্গা ও বালু নদ-নদী দুটি যথাক্রমে ২৩ দশমিক ৮৩ ও ৮ দশমিক ৮৪ একর দখল করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৬০ দশমিক ৬৩ একর খাল ও নদী দখল করা হয়েছে। এই নদী দখলে প্রতিযোগিতার দৃশ্য এখন সারা দেশজুড়ে।
তাই নোঙর মনে করে যে, নদী দখল হওয়া মানে মাতৃভুমি দখল হয়ে যাওয়া। সুতরাং নদীমাতৃক দেশের সকল নদ-নদী, খাল- দখল মুক্ত করতে দ্রুত সেনাবাহিনী নিয়োগ করা জরুরী।পাশাপাশি সকল নদী খোকোদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে দেশের সেবা প্রদান করবে।
চারটি নদীর মধ্যে তুরাগের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। বিভিন্ন ধরনের শিল্প-কারখানা গড়ে তুলে এটি এমনভাবে দখল করা হয়েছে, যা সরু খালে পরিণত হয়েছে। ফলে স্যাটেলাইট ইমেজে তুরাগকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে তুরাগ একসময় হারিয়ে যাবে।
নোঙর অনুসন্ধানে আরো দেখা যায় নদ-নদীগুলো দখল করে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। কামরাঙ্গীরচর ও বসিলায় নদী দখল করে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো সবচেয়ে বেশি গড়ে তোলা হয়েছে। এলাকা দুটিতে এ হার যথাক্রমে ৫০ ও ৫৬ শতাংশ। এছাড়া আবদুল্লাহপুর, গাবতলী, ডেমরা, কাঁচপুর ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় নদী দখল করে ৩৮-৪৮ শতাংশ স্থানে বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। গাছপালা ও কৃষিজমি হিসেবে বেশি ব্যবহার হচ্ছে নন্দীপাড়ায় ৭৩ শতাংশ জমি। আর পরিত্যক্ত জমি হিসেবে বেশি অংশ রয়েছে বসিলায়, প্রায় ৩১ শতাংশ।
হাতারঝিলের মতো অপরাধের অভয়ারণ্য দখল মুক্ত করে যে নান্দনিক একটি দৃষ্টিনন্দন দর্শনীয় স্থান গড়ে তুলতে যে ভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নেয়া হয়ে ছিল, ঠিক সেই রকম করে দখল হয়ে যাওয়া সকল নদী উদ্ধার করতে দ্রুত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নেয়া দরকার।
মানববন্ধনে নোঙর প্রতিষ্ঠতা সভাপতি সুমন শামস এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন গ্রীণ বাংলা কোয়ালিশনের সভাপতি জনাব শামসুল মোমেন পলাশ, ষোলআনা বাঙ্গালীর সভাপতি জনাব আর আই শেখর, নাট্যশিল্পী কিসমত-উল-সাব্বির, নোঙর পরিবারের আমিনুল হক চৌধুরী, সরকার সজীব, সঙগীত শিল্পী শরফাত আলী সেতার, বাপ্পী ও বিপ্লব, আলোকচিত্রী পাভেল আহম্মেদসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদি সংগঠনের একাধিক প্রতিনিধীরা উপস্থিত ছিলেন।
পিবিডি/ওএফ