• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ব্যারিস্টার রাজ্জাক নিজেই কি ক্ষমা চেয়েছেন: নুজহাত চৌধুরী

প্রকাশ:  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:১২
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

‘দীর্ঘ ৪৮ বছর পর যে ব্যক্তি জামায়াতে ইসলামী নামের দলকে তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে বলেন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক নিজে যে দলের সহকারী জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন তার জন্য কি ক্ষমা চেয়েছেন? ক্ষমা চাইলেই কী পাপ মোচন হয়ে যায়? ক্ষমা চাইলেই কি আমি ক্ষমা করে দিতে পারি আমার পিতার হত্যাকারীদের? পারি না।’ জামায়াত ও তাদের ক্ষমা প্রসঙ্গে এভাবেই ক্ষোভ জানালেন শহীদ ডা. এ এফ এম আবদুল আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার যুক্তরাজ্য থেকে জামায়াতের আমির মকবুল আহমদের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান ব্যারিস্টার রাজ্জাক। চিঠিতে তার পদত্যাগের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে জামায়াতের অবস্থা বিষয়ে ক্ষমা না চাওয়াকে। একই সঙ্গে তিনি যে পরিবর্তন চেয়েছিলেন সেই সংস্কার না করতে পারাকে। পরবর্তীতে বিবিসি বাংলার ফেসবুক লাইভে এসে কথা বলেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক।

ফেসবুক লাইভে আবদুর রাজ্জাকের ক্ষমা চাওয়া কতটুকু যৌক্তিযুক্ত এই প্রশ্নের জবাবে ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা বলেন, ‘তিনি গোলাম আজমের নাগরিকত্ব মামলা থেকে শুরু করে জামায়াতের শীর্ষ ১০ নেতার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাতে একজন কৌসুলি হিসেবে কাজ করে গেছে। এই প্রসঙ্গে যাদের কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চাইতে বলছেন তাদেরকে যুদ্ধাপরাধী বা রাজাকার হিসেবে আখ্যায়িত করেননি। অথচ তারা বাংলাদেশের আইনে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বর্তমান চিহ্নিত এবং তাদের অনেকের সাজাও হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে তিনি এই মামলাগুলোকে ভিত্তিহীন বলেছিলেন।’

‘যিনি একসময় তাদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে স্বীকার না করে তাদেরকে আইনি লড়াইয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন, যিনি আদালতে মামলা লড়লেন সেইসকল চিহ্নিত ধর্ষক, খুনি ও দেশদ্রোহীদের পক্ষে তার এই ক্ষমা চাওয়া সম্পূর্ণ দ্বিচারিতা এবং আমাদেরকে বোকা বানানোর ব্যর্থ চেষ্টামাত্র। যে ব্যক্তি চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের সব মামলাতে আইনি সহায়তা দিয়ে ও সাফাই গেয়ে বলেছে তারা কোনো অপরাধ করেনি সেই ব্যক্তি নিজে ক্ষমা চাননি। কিন্তু তার দলকে বলছেন ক্ষমা চাইতে হবে। এতটা বোকা আমরা নই। বাংলাদেশের মানুষকে এতটা বোকা ভাবা উচিত নয়।’

‘বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি বরং উনার এই পুরো ঘটনাতে নিজের ধুরন্ধর মস্তিষ্কের পরিচয় পাই। বাংলাদেশের সকলকে জামায়াতের মতন একটা বাংলাদেশবিরোধী দলের এমন একটি পদক্ষেপকে সূক্ষ্মভাবে বিচার করা উচিত বলে মনে করি। বিশ্বাস তো করা যাবেই না বরং গভীর মনোযোগের সঙ্গে নতুন কী ষড়যন্ত্র করছে তারা সেটা বের করা দরকার। আমি মনে করি উনার আজকের এই পদত্যাগ পত্র দেওয়া এবং ক্ষমা চাইতে বলা নতুন ষড়যন্ত্রের একটি প্রাথমিক অধ্যায়। এটাকে শুধু দেশীয় ষড়যন্ত্র বা রাজ্জাকের ব্যক্তি ষড়যন্ত্র হিসেবে না দেখে আমি একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র দেখছি, যার পেছনে কোনো বিশেষ শক্তি কাজ করছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন তা ব্যাহত করার জন্য আমরা দেখেছি বিএনপি-জামায়াত বা তাদের নবরূপ ঐক্যফ্রন্ট কী কী ষড়যন্ত্র করেছে। তারই ধারাবাহিকতাতে আবার জামায়াত হয়তো নতুন রূপে আসার চেষ্টা করছে। চেষ্টা করছে নিজেদের একটি পরিষ্কার ইমেজ বানাতে। কিন্তু চাইলেই কি পাপ মোছা যায়? ধর্ষণের বিচার কি গোসল করলেই চলে যায়? যায় না।’

নুজহাত চৌধুরী বলেন, ‘তাদের আমাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তির আওতায় আসতে হবে। শাস্তির বিধান হওয়ার পরে যদি বাংলাদেশের মানুষ মনে করে এমন ঘৃণ্য অপরাধীদের জায়গা দেবে সেটা তখনকার বিষয়। আমার বিশ্বাস শহীদদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই বাংলাদেশে বাঙালি তাদের কখনোই ক্ষমা করবে না।’

জামায়াতের সদ্য পদত্যাগ করা এই সেক্রেটারি জেনারেলের পদত্যাগপত্র দেওয়া ও জামায়াতকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলাকে কীভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শহীদ কন্যা বলেন, ‘আমি উনাকে প্রশ্ন করতে চাই, উনি কী বাংলাদেশের মানুষকে এতটাই বোকা ভাবেন? বুদ্ধিহীন ভাবছেন? চারটি দশক তিনি জামায়াত করেছেন। তিনি তার ছাত্র অবস্থা থেকেই ছাত্রসংঘ করতেন। নিজামির আদর্শে ছাত্রসংঘের প্রতিটা মানুষ কিন্তু আলবদর হয়েছিল। সুতরাং সেই সূত্রে তিনিও কিন্তু একজন আলবদর। ৪৮ বছর পরে যিনি এভাবে জামায়াতকে ক্ষমা চাইতে বলছেন তিনি নিজে কি ক্ষমা চেয়েছেন? তিনি কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে তার কৃতকর্মের জন্যে ক্ষমা চাননি।’

‘আমি মনে করি এটা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিশেষ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির বর্তমান অবস্থান দেখে তাদের পাল্টানো একটা রাজনৈতিক কৌশল মাত্র। বাংলাদেশের তরুণরা স্পষ্ট বলেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সঙ্গে তারা আছে এবং যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত শিবিরের সঙ্গে তারা কোনো কম্প্রোমাইজ করবে না। তারুণ্যের এমন সিদ্ধান্তের সামনে তারা এখন একটা চক্রান্ত করছে মাত্র। একটি শুদ্ধ চেহারা নিয়ে সবাইকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’

‘এত সহজ? আমি কি ক্ষমা করে দেবো আমার পিতার খুনিদের? অবশ্যই নয়। ক্ষমা চাইলেই কি পাওয়া যাবে? একজন শহীদের সন্তান হিসেবে আমার উত্তর, না। তারা যদি ক্ষমা চায় তবে তাদের আগে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তিভোগ করতে হবে অবশ্যই। আবদুর রাজ্জাক যেসব সংস্কারের কথা বলেছেন তার মধ্যে একটা সংস্কার ছিল নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে। জামায়াতের নেতারা একসময় বলতেন নারী নেতৃত্ব হারাম। কিন্তু তিনি বলছেন যেহেতু তাদের দলের দুইজন মন্ত্রী একজন নারীর নেতৃত্বে ছিলেন তাই এটাকে কোনো বিশেষ গুরুত্ব আর দিতে চাচ্ছেন না। তবে ভবিষ্যতে উনি আবার নিজ দলেই এখন নারীর ক্ষমতায় দেখতে চান। এই ধরণের দ্বিচারিতাকে আসলে কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়?’

‘আমি আসলে এটা নিয়ে কথা বলার কোনো প্রয়োজনই দেখি না। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ের কথা বাদ দিলাম। স্বাধীন বাংলাদেশে দীর্ঘ ৪৮ বছর যারা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বিরোধী অবস্থান নিয়েছিলো শেষ বয়সে তিনি কেনো নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলছেন? আমি মনে করি না পঙ্কিলতার আশ্রয় যারা নেয় তারা এত সহজেই পরিবর্তন হবে বলে’ বলেন নুজহাত চৌধুরী।

আবর্জনা ধুলেই কি সেটি পরিষ্কার হয়ে যায়? যায় না। জামায়াত এতটাই ঘৃণ্য, এতটাই বিষাক্ত যে সেটার আসলে কখনোই পরিবর্তন সম্ভব না বলেই আমার মত। আমার ধারণা, বাংলাদেশের সবাই এই ধারণাই রাখে তাদের ব্যাপারে।

সূত্র: সারাবাংলা

জামায়াতে ইসলামী,ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক,নুজহাত চৌধুরী
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close