আজও স্বীকৃতি পায়নি কালাইয়ের ভাষা সৈনিক মোনোমহন
১৯৫২’র মহান ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার তালোড়া বাইগুনি গ্রামের ৯৩ বছর বয়সী ভাষা সৈনিক মোনোমহন চৌধুরী। দীর্ঘ ৬৭ বছরেও তার প্রাপ্য স্বীকৃতি না পাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
মোনোমহন চৌধুরী জানান, ১৯৫১ সালে কালাই ময়েন উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করে তিনি ভর্তি হন, বগুড়া আযিযুল হক কলেজে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন যখন দেশব্যাপী ক্রমেই জোরদার হয়ে উঠে, তখন তিনি টগবগে যুবক। তাই আন্দোলনকারীদের সাথে তিনিও যোগ দেন এবং বিভিন্ন মিটিং-মিছিলে অংশ নেন।
সম্পর্কিত খবর
তিনি জানান, পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী এক পর্যায়ে ঊর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে বাংলাকে হত্যার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়; তখন বাংলা ভাষাভাষী মানুষ দেশজুড়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, তৎকালীন গভর্নর নূরুল আমিন বগুড়া সার্কিট হাউজে উপস্থিত হলে প্রতিবাদে ভাষা সৈনিক গাজিউল হকের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী শহরে বিক্ষোভ করে। সে সময় একটি কুকুরের গলায় জুতার মালা দিয়ে ওই গভর্নরের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা হয়।
সে আন্দোলনে তিনিও (মোনোমহন) একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৫২’র ভাষা আন্দোলনেও অংশ নেন তিনি। তারপর ১৯৬৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি পেশ করলে, তাতেও মোনোমহন অংশ নেন। এভাবেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে, শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি ৭ নম্বর সেক্টর কমান্ডার কাজী নুরুজ্জামের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। সে সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর হোসেনের নেতৃত্বে জয়পুরহাটের কড়ই কাদিরপুর এলাকা ও দিনাজপুরের হিলি এলাকায় সংঘটিত বিভিন্ন অভিযানেও অংশ নেন। এক পর্যায়ে দেশ স্বাধীন হয়। ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের চাকরি পান তিনি। বর্তমানে তিনি অবসরকালীন জীবন-যাপন করছেন। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের প্রায় ৬৭ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত কেউ খোঁজ রাখেনি বিপ্লবী সৈনিক মোনোমহনের। পাননি কোনো স্বীকৃতিও।
মোনোমহনের আক্ষেপ, ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সরাসরি অংশ নিয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করে দেশবাসীকে স্বাধীনতা উপহার দিলেও দীর্ঘ ৬৭ বছরেও কেউ তার খবর নেয়নি, দেয়নি ভাষা সৈনিকের ন্যায্য স্বীকৃতিটুকু, এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়।
কালাইয়ের মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল ইসলাম জানান, মোনোমহন চৌধুরী বয়সে তাদের চেয়ে অনেক বড়। ৫২’র ভাষা সংগ্রাম থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন তিনি। এ কথা অনেকেরই জানা। যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখে মোনোমহন চৌধুরীর কর্মের স্বীকৃতি দিবেন বলেও তিনি আশাবাদী।
/অ-ভি