• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

জনবল সংকট

আয়া চালান ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র!

প্রকাশ:  ১০ মার্চ ২০১৯, ১৮:৩৪
মণিরামপুর (যশোর) সংবাদদাতা

যশোরের মণিরামপুরের হরিহরনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রটির বেহাল দশা বহুদিনের। একজন আয়া ছাড়া এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই কোনো চিকিৎসক, এমনকি পরিদর্শকও। প্রায়ই অফিস সময়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির দরজায় তালা ঝুলে থাকে। বিভিন্ন এলাকা থেকে সেবা নিতে গিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের গেটে তালা দেখে ফিরে যাওয়া এখানকার রোগীদের তিক্ত অভিজ্ঞতা।

গত দুই বছর ধরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির বেহালদশা থাকলেও তার কোনো খবর রাখে না কর্তৃপক্ষ। ফলে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত ইউনিয়নের প্রায় ২৭ হাজার মানুষ। আয়া নির্ভর স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পরিত্যক্ত থাকায় তা এখন নেশাগ্রস্থদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে। এখানকার চিকিৎসক ও পরিদর্শকদের জন্য বরাদ্ধ আবাসিক কক্ষগুলো পরিণত হয়েছে টয়লেটে।

সম্পর্কিত খবর

    জানা যায়, জন্ম নিয়ন্ত্রণ, গর্ভবতী ও প্রসূতি নারী, শিশু এবং সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবার লক্ষে উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতো হরিহরনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি গড়ে ওঠে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক ও পরিদর্শকের থাকার জন্য কেন্দ্রটির সাথে চারকক্ষ বিশিষ্ট দু’টি কোয়াটারও রয়েছে। কেন্দ্রটিতে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার, একজন পরিবার পরিকল্পনা ভিজিটর, একজন পিওন ও একজন আয়া থাকার কথা। জনবল সংকট থাকায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে একজন আয়া ছাড়া বাকি তিনটি পদই শূন্য।

    তবে যিনি আয়া হিসেবে আছেন, তিনিও কর্মস্থলে আসেন ইচ্ছেমত। যেদিন আসেন সেদিনও পরিচ্ছন্ন কাজ করেন না ঠিকমত। ফলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির আবাসিক ভবনটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

    ইউনিয়নবাসী বলছেন, যদি প্রতিষ্ঠানটিতে কাউকে পাঠানোই না হবে, যদি রোগীদের এসে গেটে তালা দেখে বিনা চিকিৎসায় ফিরে যেতে হয় তাহলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে এই কেন্দ্র গড়ে তোলার দরকার ছিল কি। আর এই কেন্দ্রের জন্য বরাদ্ধের ওষুধও বা যায় কোথায়?

    এলাকাবাসীর অভিযোগ, রোগীরা চিকিৎসা সেবা না পেলেও এই কেন্দ্রের জন্য বরাদ্ধকৃত সমুদয় ওষুধ কিন্তু উত্তোলিত হচ্ছে নিয়মিত।

    সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির গেটে তালা ঝুলছে। সেখানে আবাসিক ভবন থেকে তিন তরুণকে বের হতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে নাহিদুল ইসলাম নামে এক কলেজ ছাত্র জানায়, একজনকে মাঝে মধ্যে দেখি এসে হাসপাতাল ঝাড়ু দেয়। এছাড়া কাউকে দেখিনে। এখানে ডাক্তারদের জন্য বরাদ্ধ দুইটি কক্ষে আমরা ফুটবল খেলার সরাঞ্জাম রাখি। কেউ না থাকায় ময়লা-আবর্জনায় ভরা পুরো এলাকা।

    নাহিদুলের ধারণা, সরকার এতো কোটি টাকা খরচ করে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে না তুলে একটা স্টেডিয়াম গড়ে দিলে তারা খেলাধুলা করতে পারতো।

    হরিহরনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি লাগোয়া খাটুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, আগে একজন এফডব্লিউভি ছিল। তাকেও দেখিছি অফিস ফাঁকি দিতে। দুই বছর আগে সে অবসরে গেছে। সেই থেকে এখানে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। একজন আয়া এসে ঝাড়ঝুড় দিয়ে বসে থাকে।

    তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গেট তালাবদ্ধ রেখে তো আর জনসেবা হয় না। লোকবল পাঠিয়ে কেন্দ্রটি চালাতে না পারলে বন্ধ করে দেওয়াই ভালো।

    খাটুরা বাজারের ব্যবসায়ী দলিলুর রহমান বলেন, রোগীরা গেলে বলে ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই। মাস দুয়েক আগে আমার মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলাম। আয়া বলল, ওষুধ নেই।

    মণিরামপুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন ডা. চন্দ্র শেখর কুন্ডু। গত দুই বছরে তিনি একবারও এই কেন্দ্র পরিদর্শনে যাননি বলে অভিযোগ।

    স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির আয়া সাধনা রানী বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে এখানে আমি ছাড়া কেউ নেই। আমি সবসময় থাকি। মাঝেমাধ্যে বাচ্চার (ছেলে) সমস্যা থাকলে আসতে পারি না। শনিবার আমার বাচ্চা অসুস্থ ছিল। তাই এসে আবার তালা দিয়ে চলে গিয়েছিলাম। কেউ না থাকায় পরিদর্শক স্যারও (ডা. চন্দ্র শেখর) এই কেন্দ্র ভিজিটে আসেন না। অন্য কেন্দ্র থেকে সপ্তাহে একদিন একজন এফডব্লিউভি আসেন। রোগীরা আসলে তাদের সেই দিন আসতে বলি।

    এই বিষয়ে জানতে ডা. চন্দ্র শেখরের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতে চাইলে ব্যস্ততার অজুহাতে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

    মণিরামপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার বলেন, হরিহরনগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন আয়া ছাড়া কেউ নেই। ওই কেন্দ্রে একজন এফডব্লিউভিকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া আছে। তিনি প্রতি মঙ্গলবার সেখানে দায়িত্ব পালন করেন। লোকবল কম থাকায় সমস্যা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে লোকবল চেয়ে আমি প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছি।

    /অ-ভি

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close