• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

নোংরা রাজনীতির শিকার নুসরাত

প্রকাশ:  ১১ এপ্রিল ২০১৯, ১৪:০০
কবীর চৌধুরী তন্ময়

মোবাইলের রিংটোনে কল রিসিভ করতেই আমার সহকর্মী বলেন, ভাই, নুসরাতের জন্য আমাদের প্রদীপ প্রজ্জলন করতে হবে না! কেন-প্রশ্ন করায় সে যা জানাল; আমি রীতিমত নিরব-নিথর হয়ে পড়ি। কোনো কথা আসছে না। কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকি।

এ পৃথিবী থেকে নুসরাত জাহান রাফি চিরতরের জন্য চলে গেছে। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধটা চালিয়েছে নুসরাত। কিন্তু নোংরা রাজনীতির কতিপয় ব্যক্তি বিশেষের বর্বর থাবার অগ্নিশিখায় জ্বলসে অবশেষে অসভ্যতার হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করে তাঁর জীবন দিয়ে আমাদের বুঝিয়েছে; আমরা কতটা বর্বর। সভ্যতার আড়ালে এ সমাজ-রাষ্ট্রে কতিপয় মানুষ নামের নরপশুর হিংস্রতা কতটা নির্মম (!) যা সহ্য করতে না পেরে নুসরাত না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে।

সম্পর্কিত খবর

    বুধবার বিকেল বেলায় বোয়াফ-এর সহকর্মীদের নিয়ে আলোচনা করে সিন্ধান্ত নিয়েছি, শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে প্রদীপ জ্বালিয়ে নুসরাতের জন্য প্রার্থনা করবো। স্যোশাল মিডিয়াতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য ভাইরাল করবো। নুসরাত হয়তো বুঝতে পেরেছে, তাই আমাদের মেকি কান্না আর কিছু রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতির সুযোগ দেয়নি। নুসরাত হয়তো বুঝেছে, এই প্রদীপের আলো আর কতদূর যাবে? কতদূর আলোকিত করবে? এই সমাজ-রাষ্ট্রের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে ধর্ষক, খুনীর বসবাস। রাজনীতির কারণে ধর্ষকের পাশে দাঁড়াতে কতিপয় মানুষের বিবেকবোধ কাজ করে না। ব্যক্তি স্বার্থের কারণে ধর্ষক-খুনীর মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন হয় যে দেশে; সে দেশে নুসরাত হয়তো আর বাঁচতে চায়নি। তাই আমাদের প্রার্থনা না নিয়ে নিজেই অভিমান করে চলে গেছে।

    নুসরাতের অভিমান ছিল তাঁর সহপাঠীদের নিয়েও। তাঁরা কেন, কী কারণে এতো সব জেনেও ধর্ষক, ধর্ম ব্যবসায়ী সিরাজুদৌলার পক্ষে মানববন্ধন করেছে-এমন প্রশ্নও নুসরাত রেখে গেছে। সে তাঁর খাতায় সহপাঠীদের উদ্দেশে লিখেছেন, “তোরা সিরাজুদ্দৌলা সম্পর্কে সব জানার পরও কিভাবে তার মুক্তি চাইতেছিস, তোরা জানিস না ঐদিন ক্লাসে কি হইছে, উনি আমার কোন জায়গায় হাত দিয়েছে এবং আর কোন জায়গায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করছে।

    প্রশ্নের লোভ দেখিয়ে সিরাজুদ্দৌলা কী বলেছে এটিও সহপাঠীদের উদ্দেশে নুসরাত তার খাতায় লিখেছে, ‘‘উনি আমাকে বলছে, নুসরাত ঢং করিও না। তুই প্রেম করিস না, ছেলেদের সাথে প্রেম করতে ভাল লাগে? ওরা তোরে কি দিতে পারবে, আমি তোকে পরীক্ষার সময় প্রশ্ন দেব।”

    পাঠক! কয়েকদিন ধরেই কিছু মানুষের প্রশ্নে উত্তর দিয়ে চলেছি। বিশেষ করে যাঁরা মিডিয়া ও স্যোশাল মিডিয়ায় কম সময় দেন। অনেককে আবার ফোনেও বরেছি যেমন, ফেনীর সোনাগাজীর মেয়ে নুসরাত এ বছর আলিম পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন। সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী ছিলেন তিঁনি। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ-উদ-দৌলা তাঁকে ডেকে নিয়ে কৌশলে ধর্ষণের চেষ্টা করে। যা মিডিয়াতে ‘শ্লীলতাহানি’ নামকরণ করা হয়েছে। আর এ অভিযোগ এনে ২৭ মার্চ ২০১৯ সোনাগাজী থানায় একটি মামলা করে নুসরাতের পরিবার।

    সেই মামলা তুলে না নেওয়ায় অধ্যক্ষের অনুসারীরা গত শনিবার পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। অগ্নিদগ্ধ নুসরাতকে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ফেনী সদর হাসাপাতালে এবং পরে শনিবার রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় নুসরাতের অবস্থা এতোটাই সংকটাপন্ন হয় যে, অবশেষে তাকে লাইফ সাপোর্টে নিতে হয়েছে। নুসরাতের এই মর্মাত্মিক ঘটনার শুরু থেকেই শেখ হাসিনা গুরুত্বের সহিত পর্যবেক্ষণসহ নুসরাতের পাশে দাঁড়িছেন এবং তাঁর চিকিৎসা থেকে আরম্ভ করে দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার নিদের্শ দিয়েছেন।

    এখানেই থেমে থাকেননি শেখ হাসিনা। নিজে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ করে নুসরাতের অবস্থা জেনেছে এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-এই কথাগুলো অনেকের কাছে বলতে বলতে একটা সময় বঙ্গবন্ধুর একটি কথা মনে পড়ে গেল।

    ১৯৪৯ সালের ঘটনা। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিলে দুপুর বেলায় এক মাওলানার সঙ্গে দেখা হয়। সে কোরআনে হাফেজ। তাঁর বাবাও নাকি খুব বড় পীর ছিলেন।

    বঙ্গবন্ধু দূরে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করলেন, হাজতিদের মধ্যে মাওলানা নামাজ পড়ার আগে বক্তৃতা করছেন, ওয়াজ করছেন আর হাজতিরা তা বসে বসে শুনছে। ওই মাওলানা বলছে, খুব জোরে জোরে দরুদ শরীফ পড়ো। শয়তান দূর হয়ে যাবে।

    ওই মাওলানার সুন্দর চেহারা, অল্প বয়স আর তার উপর বলার কায়দা বেশ চমৎকার ছিল। হাতে তজবি আর মাঝে মাঝে চোখ বুজে কথা বলার ধরন দেখার পরে একটি জায়গায় বঙ্গবন্ধুর সন্দেহ হলো, সেটি- তাঁর বেশ লম্বা জামা নিয়ে। তা প্রায় ৬/৭ গজের মতন হবে কমপক্ষে।

    বঙ্গবন্ধু তখন এক পাহারাদারকে জিজ্ঞাসা করলেন, এই মাওলানা কি মামলায় এখানে এসেছে ?

    তখন ওই পাহাদার বঙ্গবন্ধুকে বলেন, জানেন না, রেপ্ কেস; একটা ছাত্রীকে সে পড়াতো। আর তার উপর পাশবিক অত্যাচার করেছে, মসজিদের ভিতর! ওই মেয়েটার ১২/১৩ বছর বয়স। মেয়েটি চিৎকার করে উঠলে লোক এসে দেখে ফেলে। তারপর ধরে আচ্ছামত মারধর করে।

    বঙ্গবন্ধু তখন ওই পাহাদারকে বলেন, হাজতে এসে ধর্ম প্রচার শুরু করেছে। বেটা তো খুব ভন্ড। জমাইছে তো বেশ...।

    পাঠক! ‘কারাগারের রোজনামচা’ থেকে কথাটি এখানে তুলে ধরেছি, কারণ সেই ১৯৪৯ সাল থেকে আজ আধুনিক সভ্যতার ২০১৯ সালে এসেও এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা তাঁদের চিরত্র, দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা-ভাবনাগুলো সভ্যতায় তুলতে পারেনি। তখনও ইমাম, মুয়াজ্জিন মসজিদে ধর্ষণ করতো। এখনো মসজিদ, মাদ্রাসায় ধর্ষণ করে।

    আর তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম যাঁরা আধুনিকতার মুখোশ পড়েছে, অর্থাৎ এই শ্রেণি থেকে উঠে আসা আধুনিক পোশাক পড়া কতিপয় শিক্ষকও আজ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা সুকৌশলে বাড়িতে ডেকে নিয়ে সেই ধর্ষণের অপসংস্কৃতি অব্যাহত রেখেছে।

    আর এই শ্রেণির বংশধরের পরবর্তী প্রজন্ম সেটা আওয়ামী লীগার হোক, বিএনপি করুক, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির হোক; তারা তাদের বংশের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার পক্ষে মানববন্ধন করবে, বক্তব্য-বিবৃতি দিবে, তলে তলে আতাঁত করবে-এটাই স্বাভাবিক।

    এখানে সিরাজ-উদ দৌলা একা অপরাধী নয়। কারণ, তার একের অধিক অপরাধ আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে এসছে স্থানীয় কতিপয় নোরা রাজনীতিবিদ। তারা অনেকে মিলেমিশে সিরাজ-উদ দৌলার সাথে বিভিন্ন অপরাধ সংঘঠিত করেছে বলেই নুসরাতের পরিবার মামলা দেওয়ার পরে নোংরা রাজনীতি খেলতে উঠেপরে লেগেছে। এবং এই তাদের পরিকল্পনায় নুসরাতকে ডেকে নিয়ে কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে অবশেষে হত্যা করেছে।

    অনেক সময় সাপকেও বিশ্বাস করা যায়। কারণ, সব সাপের বিষ থাকে না। কিন্তু সব জামাতীদের বিশ্বাস করা যায় না। জামাতীরা একই আদর্শের, একই চিন্তার যা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রমাণীত। আর এই জামায়াত ইসলামের সোনাগাজী উপজেলার আমীর ছিল অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলা। শুধু তাই নয়, বাচ্চাকে বলৎকারের অভিযোগে অন্য একটি মাদ্রাসা যে সিরাজ-উদ দৌলাকে বিতাড়িত করেছে; তাকে কী করে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিয়োগদান করে? কারা এই নিয়োগ দান করেছে এবং কেন করেছে-এটিও একটি বড় প্রশ্ন!

    বিতর্কিত শিক্ষকের পাঠদান নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে কী ধরনের প্রভাব পড়বে-এটি কি কর্তৃপক্ষ একটিবারের জন্যেও ভেবে দেখেছে? কারণ, এই অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে শুধু বাচ্চা বলৎকারের অভিযোগই ছিল না, তাঁর বিরুদ্ধে তিনতিনটে মামলাও আছে। তার উপর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় নিয়োগ পেয়ে অর্থ আত্মসাৎ করার পরেও যখন সে-সপদে বহাল থাকে; তখন এমনিতেই বুঝা যায়-ভাগ বাটোয়া করেই তথাকথিত রাজনীতিবিদরা সমান অপরাধ সংঘঠিত করেছে।

    সিরাজ-উদ দৌলার পক্ষের মানববন্ধনের ছবি নিয়ে স্যোশাল মিডিয়াতে নানামুখী সমালোচনা হয়েছে। আমিও করেছি। কিন্তু এর নেপথ্যে ছিল নোংরা রাজনীতি। যাঁরা সিরাজ-উদ দৌলার সাথে এতোদিন ভাগ বাটোয়ারা করে সমান অপরাধ করেছে, অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে; এই তাঁরাই মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঠে নামিয়ে তাঁদের আসল চরিত্র তুলে ধরেছে। যার সাহস পেয়েছে সেই বোরকা পড়া অগ্নিসংযোগকারী চার খুনী। কারণ, তারাও দেখেছে- এই সিরাজ-উদ দৌলা এতো কিছু করার পরেও বিচারের মুখোমুখি হয়নি। বাচ্চা বলৎকার, অর্থ তছরুপ, তিনতিনটে মামলা থাকার পরেও আওয়ামী লীগ নেতা থেকে বিএনপি-জামাত নেতারা তাকে সেল্টার দিচ্ছে।

    পাঠক! একটা প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে, এই সিরাজ-উদ দৌলার এটাই প্রথম ধর্ষণ চেষ্টা? নিশ্চয় নয়। আমাদের সমাজের কটু কথার ভয় আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসহযোগিতার উদাহরণ থেকে অনেক ধর্ষিতার সাথে সাথে তার পরিবার বা অভিভাবকও চুপ হয়ে যায়। নিরবে সহ্য করে। অনেকে আবার তাদের নিজেস্ব এলাকা ছেড়ে দূরে কোথাও গিয়ে নিজেকে ‘‘কলঙ্কিত’’ হওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে।

    এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আন্তরিক হলে এটিও বের করা সম্ভব, সিরাজ-উদ দৌলার ধর্ষণ রাজ্যে কয়টা মেয়ের জীবন ধ্বংস করেছে আর তার সাথে কে কে জড়িত। সে সাথে যে শিবির নেতা ও আওয়ামী লীগ নেতার নাম উঠে আসছে ; তাঁরা ধর্ষণ রাজ্যে শুধু ধর্ষণ কাজে সহায়তা করেছে নাকি তাঁরাও ধর্ষক-এটিও খতিয়ে দেখার প্রয়োজনবোধ করছি।

    ধর্ষণ! সমাজ, রাষ্ট্রে আজ মহামারী আকার ধারণ করেছে। এ অভিযোগে স্কুলের শিক্ষক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও বাদ পড়ছে না। সাম্প্রতিক বাংলাদেশেও মি-টু’র আন্দোলন হয়েছে। মানববন্ধন হয়েছে। আমিও লিখেছি। সমাজকর্মী থেকে সংবাদকর্মী বা মিডিয়া হাউজের কতিপয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে তাঁদেরকে বিচারের মুখোমুখি করার চেয়ে এখানেও ধর্ষণ চেষ্টাকারীর পক্ষ অবলম্বন করতে দেখা গেছে। আবার যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁরাও নোংরা রাজনীতিকে ব্যবহার করেছে। এই যেমন নুসরাতের পক্ষে না গিয়ে নোংরা রাজনীতির বা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কতিপয় কোমলমতি শিক্ষার্থী ধর্ষণে চেষ্টাকারী সিরাজ-উদ দৌলার পক্ষে মানববন্ধন করেছে। ঠিক এমনিভাবে মি-ট’ুর অভিযোগ-আন্দোলনের সময়ও শিক্ষিত, মার্জিত এবং সমাজ-রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত কতিপয় ব্যক্তিকেও দেখেছি ইনিয়ে-বিনিয়ে ধর্ষণ চেষ্টাকারীর পক্ষ অবলম্বন করতে!

    ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরবর্তী রাজনীতি এতোটাই কলুসিত হয়ে, এতোটাই নোংরা করেছে যা সর্ব ক্ষেত্রে আজ প্রতীয়মান। আমলা-কামলা, চোর-ডাকাত আর স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তি যখন রাজনীতিবিদ হয়ে উঠে, তখন আলাদা করে সর্বনাশের কথা ভাবতে হয় না।

    সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি ছিল একেবারেই ব্যক্তিক্রম। অন্যরা যেখানে লোকলজ্জার ভয়ে নিরব থাকে কিংবা সহ্য করে; সেখানে নুসরাত প্রতিবাদ করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, অপরাধী সিরাজ-উদ দৌলাকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে মামলা করেছে। আবার সে যে শুধু নিজের কথাই চিন্তা করেছে তাও নয়, যখনই শুনেছে তাঁর বান্ধবীকে ছাদে নিয়ে মারপিট করছে, তখনই বান্ধবীকে বাঁচাতে ছুটে গিয়ে অবশেষে খুনীদের খুন করার নীল নকশায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর কাছে হার মেনে আমাদের বুঝিয়ে দিয়ে গেল- এই সমাজের নোংরা রাজনীতি একটি প্রতিবাদী কন্ঠকে কীভাবে হত্যা করে। নুসরাত আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গেল- রাষ্ট্রযন্ত্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য নুসরাতের জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

    নুসরাতের হত্যার মধ্য দিয়ে সমাজ ব্যবস্থা থেকে রাষ্ট্র ব্যবস্থার রন্ধ্রে-রন্ধ্রে আজ নোংরা রাজনীতির বিদ্যমান অবস্থা নির্ণয় করে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। নুসরাত হত্যার মুল অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে অপরাধীদের সতর্ক বার্তা দিতে হবে। আর সেই সাথে সমাজ-রাষ্ট্রে লুকিয়ে থাকা অপরাজনীতিবিদের ব্যাপারে রাজনৈতিক নেতাদের নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে এবং নোংরা রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন; এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close