• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নুসরাত আমার বোন

প্রকাশ:  ১২ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:০৭
আরিফ হাসান

৫-৬ বছর আগে আমি তখন চ্যানেলে ২৪-এ নতুন যোগদান করলাম। এই গণমাধ্যমটির কাজের পরিবেশ সত্যিই অসাধারণ। সবাই আন্তরিক আর বন্ধুসুলভ। এখানে কয়েকজন সিনিয়র সংবাদ পাঠক আপু ছিলেন (এখন আছে কি না জানি না) তারা বাহ্যিক বে যেমন সুন্দরী, তাদের ক্যামেরার সামনে প্রেজেন্টেশনও তেমন মেধার পরিচয় দেয়। আমি তাদের নিউজের বাইরে নিউজরুমে দেখা হলে বিনয়ের সাথে জিজ্ঞেস করতাম, আপু ভাল আছেন? তারাও বেশ আন্তরিকতার পরিচয় দিতেন। আমি মনে মনে ভাবতাম, আমার যদি মেয়ে হয় তাহলে যেন এই আপুটার মত এমন ওয়েল হাইটেড হয়! মজার বিষয় হলো প্রায় চারজন আপু ছিলেন যাদের নামের শেষে বা শুরুতে ‘নুসরাত’ নামটি ছিল।

গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম ‘নুসরাত’ নামের একটি মেয়ে। কী করেছিল মেয়েটি? কী হয়েছিল এই নুসরাতের সাথে তা বাংলাদেশ জানে। আমার কাছে ‘নুসরাত’ একটি সুন্দর, স্মার্ট ও আকষর্ণীয় নাম। না, আমি বলছি না অন্য নাম অসুন্দর বা এ নাম ছাড়া অন্য নামের আক্ষরিক বা প্রাগৈতিহাসিক কোন ব্যাখ্যা নেই। কিন্ত প্রাগৈতিহাসিক যুগে মিথ্যা বললে আগুনে নিক্ষেপ করা হতো, হাত-পা আলাদা আলাদা করে কেটে দেয়া হতো, জিহ্বা কেটে ফেলা হতো! কিন্তু সেটা মিথ্যা বললে! আজকের এই ফোর-জি জেনারেশনে আমাদের অগ্নিতাণ্ডব দেখতে হয়!

সম্পর্কিত খবর

    আচ্ছা, সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নবাব সিরাজ উদ দৌলা প্রাগৈতিহাসিক কালের কোন সময়ের নবাব? কেউ কি জানেন? জানাবেন? লম্বা টুপিওয়ালা.. আহা কী পরহেজগার! মাসুম নরখাদক, বিভৎস, বিক্রিত মস্তিস্ক! ঈশ্বর এই লোকটাকে কী দিয়ে বানিয়েছেন! তার মেয়ে আছে? তার কি মা আছে? সে কি তার বউয়ের গায়ে হাত দেয়? কীভাবে তাকায় সে তার মা, বোন, বউয়ের দিকে? গণমাধ্যম আবার এই নবাব সিরাজ উদ দৌলাকেও বারবার দেখায়! নিউজের টপ হেডলাইনে এই নপুংসক! নুসরাতের স্বপ্নগুলো এক মিনিটে শেষ করে দিল এই পশুটা! জানি না এরকম আর কত নুসরাত আছে ওই মাদ্রাসাটিতে! মানুষ এই রকম ঢিলেঢালা চরিত্রের মানুষকে লম্বা সালাম দেয়। দিনে নয়বার জিজ্ঞেস করে, হুজুর শরীরটা ভালো?

    পাঠক নিশ্চয়ই দেখেছেন সিরাজ হুজুরের চরিত্র, ফুলের মত পবিত্র- এমন টাইপ মিছিল! এদের সংস্পর্শে অনেক খাদেম থাকে। তারাও এই নবাবের মতোই ভয়ংকর! কখন যে ধরবে আর কখন যে ছিড়বে! আমারও একটা ছোট্ট বোন আছে, আমার আত্মার সাথে মিশে থাকে। ওই নুসরাতের নিউজগুলো দেখে ওর কথা মনে হয়! ঈশ্বর যেন কোন বাবা-মা, ভাই-বোনকে এমন করুণ পরিণতি না দেখায়!

    দেশে এখন আর কোন টপিক দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এই সড়ক দুর্ঘটনা, এই চুড়িহাট্টার আগুন, আর তা থামতে না থামতেই ‘নুসরাত’! ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বোনটিকে তিনি সিঙ্গাপুর নিয়ে যেতে আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে গেছি, তনুকে ভুলে গেছি! চুড়িহাট্টার চুড়িগুলো এখনও দুঃস্বপ্ন হয়ে বাতাসে উড়ে! নুসরাতের স্বপ্নগুলো একটা কালো কাপড়ে বন্দি হয়েই থাকল! নিশ্চয়ই নুসরাত ওর শোবার বিছানাটা অনেক যত্নে সাজাত! পড়ার টেবিলের বইগুলো একটার পর একটা ওর ইচ্ছা অনুযায়ী সাজিয়ে রাখত। বাবার সাথে বাইরে গেলে কি নুসরাত চটপটি বা ফুচকার আবদার করত? বড় ভাইয়ের কাছে রেজাল্ট ভালো হলে কি একটা স্মার্টফোন চেয়েছিল? নুসরাতের জন্মদিন কবে ছিল? সামনে তো ঈদ, কী রংয়ের ড্রেস কিনত নুসরাত?

    নুসরাত, ওপারে ভাল থাকিস বোন! আমি তোর এক নির্লজ্জ, উপায়হীন, সহায়সম্বলহীন, আত্মবিশ্বাসহীন, পদমর্যাদাহীন, আবেগবর্জিত ভাই। মাফ কোন মুখে চাই! কারণ, তোর পর জানি না ওই কালো অধ্যায়ে আর কে নাম লেখাচ্ছে!


    লেখক: গবেষক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ নাট্যকলা ও পরিবেশনাবিদ্যা বিভাগে কর্মরত


    /পিবিডি/একে

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close