• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

এক ক্ষণজন্মা মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিকথা

প্রকাশ:  ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:৫৫ | আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:৫৮
ওমর ফারুক হিমেল, কোরিয়া
ফাইল ছবি

Some leader's are readers. হ্যা উনার কথাই বলছি যিনি জনতার মনের ভাষা বুঝতেন, জনতাকে পড়তে পারতেন, জনতাকে পড়েছেনও। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

মনে হয়, এরকম ক্ষণজন্মা মাঝে মধ্য একজনই জন্মায়। আমি ব্যক্তি জীবনে অনেকের স্নেহ সান্নিধ্য পেলেও এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরীর মতো অভিজাত সম্ভ্রান্ত রুচিশীল সৌখিন আত্মাওয়ালা মানুষ আমি চট্রগ্রামে পাইনি। তার নিবিড় স্নেহ সান্নিধ্য পেয়েছি। অনেককে দেখেছি বড়র মতো দেখায়, কিন্ত বড় নয়। সত্যিই এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরীর উদাহরণ কারও সঙ্গে চলে না। তিনি সত্যিকারের গুনী ও বড় মানুষ। তার আশরাফ আখলাক, মানুষকে সম্মানদান অনন্য অসাধারণ।

সম্পর্কিত খবর

    সফল এই মেয়রের আজ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। আমার সাথে ছিল এই মহান ব্যক্তির আন্তরিক সম্পর্ক। সম্পর্কের সূত্রেই উনার বাসায় আমার যাওয়া আসা ছিল, উনি আমাদের বড় পরিসরে পারিবারিক অনুষ্ঠানাদিতে স্বপ্রতিভ উপস্থিত থাকতেন, এই মহান কর্মবীর, এ অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। তাঁকে কখনো ভোলা যায় না। ভুলতে পারি না। চট্রগ্রামের কালজয়ী পুরুষের মৃত্যুবার্ষিকীতে আজ বারেবারে বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে, তেমনি মনে পড়ে চট্রগ্রামের স্বার্থে দেশ-জাতির নানা সংকট-সম্ভাবনার সময়ে।

    আনন্দ-বেদনায়, আপদে বিপদে নানা প্রেক্ষিতে বারবার উচ্চারিত হয় মহিউদ্দিন চৌধুরীর নাম। মনের পর্দায় ভেসে ওঠে তাঁর উজ্জ্বলকান্তি, প্রাণোচ্ছল প্রশান্ত মুখখানি। রাউজানের এক রুচিশীল পরিবার থেকে উঠে এসে তিনি রেখে গেছেন অসাধারণ কীর্তি। ভুলতে পারবে না বীর চট্রলার জনসাধারণ। মেধা, প্রতিভা, সৃজনশীলতা, কর্মউদ্দীপনা, অনমনীয় মনোবল, কর্মনিষ্ঠা ও অধ্যবসায় দ্বারা তিনি অবিস্মরণীয় অবদান রেখে গেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কালের পাতায় রেখে গেছেন চিরস্মরণীয় কর্মবাগান।

    প্রাজ্ঞ রাজনীতিক দক্ষ সংগঠক, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অসাধারণ বাগ্মী হিসেবে যেমন খ্যাত চট্রলার মাহাথির মহিউদ্দীন, তেমনি চারিত্রিক মাধুর্যেও ছিলেন অনন্য, অসাধারণ। সদালাপী বন্ধুবৎসল, চরম অতিথিপরায়ণ, উদার ও অমায়িক এই মানুষটির সান্নিধ্য এসে কেউ মুগ্ধ না হয়ে পারে না। না খেয়ে কেউ যেতে পারে না। তাঁর বদান্যতা ও উদারহস্তের অবারিত কর্মে উপকৃত হয়েছেন চট্রগ্রামের সকল স্তরের মানুষ। দিনের পর দিন তিনি মানব সেবা করেছেন, ভালবেসে মানুষ জমিয়েছেন। অনেকেই মনে করতেন তিনি রাগী, কিন্তু দিল ছিল মায়ায় ভরা। আত্মপ্রত্যয়ী নির্ভীক অধ্যবসায়ী, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর, অক্লান্ত কর্মী পুরুষ এক জীবন্ত ইতিহাস চট্রগ্রামের সাবেক নন্দিত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী।

    আমার সাথে এই মহা পুরুষের অনেক স্মৃতি রয়েছে, আজ দুইটি ঘটনা উল্লেখ করছি। আমাদের পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়ার জন্য আমি উনার বাসায় গেলাম। উনার বৈঠকখানায় দেখি উনি খুব ব্যস্ত নানা শ্রেণীর মানুষকে নিয়ে, আমি সালাম দিলাম, তিনি আমাকে বললেন তুই কোরিয়া থেকে কখন আসছিস। আমি জানালাম, গতকাল। সাথে সাথেই ঘরের বাবুর্চিকে বলেন ফারুককে নাস্তা দাও, আর আমাকে বললেন, আমার সাথে একসাথে আজ খাওয়া-দাওয়া করবি। প্রতিউত্তরে বললাম, ঠিক আছে। কথার ফাঁকে বললেন, নিশ্চয়ই জরুরি কাজে দেশে আসলি। আমি মাথা নাড়ালাম। বললাম, আগামীকাল সুইসপার্কে ছোট ভাইয়ের বিয়ে, আপনাকে আসতে হবে, দাওয়াত দিতে আসছি। তিনি উনার এ পি এস ওসমান ভাইকে ডেকে বললেন আগামীকাল অনুষ্ঠান কয়টা আছে? ওসমান ভাই বললেন, ৭টা অনুষ্ঠান, ফারুক ভাইয়ের ওখানে কেমনে যাবেন। সাথে সাথে নন্দিত রাজনীতির পাঠক মহিউদ্দীন বললেন, কোথাও যাই না যাই ফারুকের দাওয়াতে যাবই যাব। সাথে যোগ করলেন, রাজনীতির জীবনে এই প্রথম কেউ বিয়ের আগের দিন দাওয়াত দিত আসল। ফারুক তোর সাহস বহুত। সেদিন রাতে খাওয়া দাওয়া করে চলে আসলাম।

    এবার বলছি আরেকটি ঘটনা। আমার আব্বার চাকরির একটি বিষয়ে আলোচনা করতে উনার সাথে দেখা করি। আমার আব্বার বিষয়টি জানতে তিনি আমার সামনে নৌ মন্ত্রণালয়ে ফোন করে আদোপ্যান্ত জেনে নিলেন। আমাকে বললেন, বিষয়টি তিনি দেখবেন। পরক্ষণেই বললেন, এখন আমি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব। তুই কই যাবি? আমি বললাম, চকবাজার। তিনি বললেন, আমার গাড়িতে উঠ। গাড়ীতে উঠে অনেক কথার ঝাঁপি খুললেন। জানালেন, সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকবার মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল, তিনি প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ করেন, আমি মন্ত্রী সভায় যাব না। চট্রগ্রামের মেয়র ছিলাম, সেই পরিচয়ে মরতে চাই। সর্বশেষ সৈয়দ মহসিন আলীর মৃত্যুর পর সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব এসেছিল সেই কথাও জানান। তাও তিনি নাকচ করেছেন। তার ড্রাইভারকে বললেন, গাড়ি যেন চকবাজার দিয়ে ঘুরে যায়। তিনি আমাকে অলিয়েস ফ্রসেজের সামনে নামিয়ে দিয়ে প্রিমিয়ারের দিকে ছুটে চললেন।

    সত্যিকার অর্থে চট্রগ্রামের সারথী, চট্রলবীরের এই মানবিক গুণাবলী ভুলা যাবে না, ভুলা যায় না।

    /পিবিডি/আরাফাত

    এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close