• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

দুর্নীতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’

প্রকাশ:  ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ১৫:১৯
নজরুল ইসলাম তোফা
ফাইল ছবি

ঔপনিবেশিক আমলের ঘুণেধরা শাসনব্যবস্থা সর্বস্তরে যেন বিদ্যমান আছে। বাংলাদেশের সকল মানুষের জীবনে দুর্নীতি বিরাজ করছে। উন্নয়ন ও অগ্রগতি ধারাকে অব্যাহত রাখার প্রয়োজনে সব ধরনের নাগরিক প্রশাসন, সমাজ বা সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই যেন দুর্নীতি মুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এই দেশের সকল জাতিই কমবেশি দুর্নীতিগ্রস্ত কিংবা দুর্নীতিবাজ। একে অপরের সহিত অঙ্গাঙ্গী ভাবে কোনো না কোনো বিষয়েই জড়িত।তাকে অশিকার করবার উপায় নেই। দুর্নীতি জাতির জীবনে চরম সর্বনাশ ডেকে আনে। তাই এই জাতির জীবনে দুর্নীতি বিষয়কে অভিশাপ হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। আসলে, সত্য ও ন্যায়ের পথে অগ্রসর হলে জাতির উন্নতি সহজ হয়। তাই উন্নয়নে আগ্রহী মানুষের প্রধান কাজ "সত্যের সাধনা"। বলা যায় যে, জাতীয় অর্থনীতিকে আরো অনেকাংশেই যেন সুদৃঢ় ভিত্তির উপরে দাঁড় করিয়ে সমাজের শোষিত বঞ্চিত মানুষের স্বার্থ রক্ষা বা অধিকার নিশ্চিত হলেই যেন দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ হবে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন তাকেই বলা হয়, যখন রাজনীতিতে "অসৎ" উদ্দেশ্য এবং অনৈতিক কর্মকান্ডে আমলারা যুক্ত হয়ে পড়ে, অর্থাৎ রাজনীতিতেই যুক্ত দুর্নীতিকে রাজ দুর্বৃত্তায়ন বলা যেতে পারে। আসলেই উন্নয়ন শীল সমগ্র বিশ্বে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন উন্নয়নের অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। রাজনৈতিক দল থেকে সরকার কাঠামো তৈরি হয়। সে রাজনৈতিক দল যখন নিজে দুর্নীতি করে, তখন সেই দেশও হয়ে যায় দুর্নীতিগ্রস্ত।বর্তমানে এই আওয়ামীলীগ সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দুর্নীতি প্রতিরোধ করে দেশের অনেক তরুনদের বেকারত্বের সমস্যা সমাধান করতে পারা। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহা-জোটের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্স এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এই দেশের জনগণ ভোট দিয়ে নিরঙ্কুশ জয়ও পেয়েছে।

বাংলাদেশের জনসাধারণের এখন প্রত্যাশা তাহলো, সরকার প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করে ন্যায়নীতির ওপর রাষ্ট্র দুর্নীতিমুক্ত ভাবে পরিচালিত হোক। ন্যায় নীতির পথে রাষ্ট্র চললে জাতি উন্নতির শীর্ষে উঠতে পারবে বলেই জনগণ মনে করে। পৃথিবীর ইতিহাসে, যে সব জাতির উন্নতির দিকে অগ্রসর হতে পেরেছে তার পেছনেও কাজ করেছে সততা এবং ন্যায়নিষ্ঠা। অপর দিকে জাতীয় জীবনেও যদি দুর্নীতির প্রবেশ ঘটে তবে সে জাতির উন্নতি হয় রুদ্ধ। তখন জাতির সামনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। আসলে অন্যায় এবং দুর্নীতি যে জাতির মধ্যে বিরাজ করে সে জাতি নানাবিধ অনাচারে লিপ্ত হয়। ফলে, জাতির উন্নতির কথা ভুলে গিয়ে নিজের সুখ, সুবিধা ও স্বার্থের কথা ভাবতে থাকে। অন্যকে তারা বিভিন্নভাবে প্রতারণার ফাঁদে ফেলেই নিজের লাভের পরিমাণ বাড়ানো যায় দুর্নীতিবাজ মানুষ তাই চিন্তা করে। এ ক্ষেত্রে নিজের লোভই বড় হয়ে দেখা দেয়, সুতরাং অন্যের মঙ্গলের কথা দুর্নীতি বাজ লোকের ভাবনায় আসেই না। বলা যায় যে কোনো জাতি জীবনে যদি দুর্নীতিতে প্রবেশ করে তবে সেখানে স্বার্থের যে খেলা চলে, তাতে যেন জাতির উন্নতির পথ বন্ধ হয়ে যায়। তাই, দুর্নীতিকেই জাতির জীবনে "চরম অভিশাপ" হিসেবেই বিবেচনা করা যেতে পারে। এমন "অভিশাপ" জাতির সর্বনাশ ঘটায়। সুতরাং সকল মানুষের জীবনেই তখন নেমে আসে চরম দুঃখ-দুর্দশা।

দুর্নীতি নামক এমন ব্যাধি-ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও রাজনীতিবিদের মধ্যেই যেন অনেক বেশি। তাছাড়া দুর্নীতির মধ্যেই যেন স্বভাবত জড়িত রয়েছে- জ্যেষ্ঠ আমলারা, বড় বড় মুনাফাখোর, অসাধু ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি, কর প্রতারক এবং ব্যাংক ঋণখেলাপিরা। মাছের পচন শুরু হয় মাথা থেকেই, তেমনি দুর্নীতির সংক্রমণ শুরু হয় 'উঁচু মহল' থেকে। আবার, পানিও যেমন ওপর থেকে নিচে গড়ায়, দুর্নীতিও তেমনি সব সময় অধঃগামী। সুতরাং, রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমেই 'দুর্নীতি মুক্ত' করার ছোঁয়া লাগবে, ঠিক তখনই প্রকৃত পক্ষে দুর্নীতি মুক্ত একটা 'আদর্শ সমাজ' গড়ে উঠবে। তাই সমাজের সকল স্তুর কিংবা সব জায়গাতে যত বেশি প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারবে তত বেশিই দুর্নীতি মুক্ত হবে বাংলাদেশ। দুর্নীতি মুক্ত হলেই যেন এইদেশের তরুণদের বেকার সমস্যার সমাধান হবে। জানা যায় যে, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর- 'খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ' তিনি বলেছেন, এ সরকারের দুটি চ্যালেঞ্জ, তাহলো: রাজনীতি এবং নির্বাচন। এমন এই চ্যালেঞ্জ দূর করার একমাত্র পথ হচ্ছে- দুর্নীতি দূরীকরণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী 'শেখ হাসিনা' হয়তো বা কঠোর অবস্থানে যাবেন কিছু কিছু নীতিতে। দেশের 'বেকার সমস্যার সমাধান এবং দুর্নীতি রোধ' করাই হচ্ছে এই সরকার বা প্রধানমন্ত্রীর "বড় চ্যালেঞ্জ"। তাই তিনি মন্ত্রিসভায় বেশিরভাগই নতুন ও তরুণের নিয়েছেন। তাঁরা ঝুঁকি থাকলেও এই মন্ত্রিসভায় ভালো কাজ করবে বলেই তিনি আশাবাদী।

আন্তর্জাতিকভাবেই ২০০৪ সালে প্রথমবারের মতো 'দুর্নীতি বিরোধী' কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয় জাতিসংঘে। সেখানে- 'বাংলাদেশে ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল' এর আয়োজনে নানা রকম কর্মসূচি গ্রহণ হয়েছিল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ও এর সম্পর্কে প্রচার প্রচারণা চালানোই ছিল মুল উদ্দেশ্য। জানা যায়, এ পর্যন্ত জাতিসংঘে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের একটি সনদে সই করেছিল বহু দেশ। সে দেশগুলোর মধ্যে- হাইতি, নাইজেরিয়া, প্যারাগুয়ে ও আজারবাইজানসহ আরো দেশ। ২০০৪ সালের দিকে 'বাংলাদেশ ও হাইতি ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল' এর সমন্বয়েই 'দুর্নীতি ধারণা' সূচকে যৌথ ভাবেই শীর্ষে ছিল। সেই হাইতিই ২০০৩ সালে মেরিডা কনভেনশন চলাকালে ১০ ডিসেম্বর সনদে সই করে। কিন্তু এমন বাংলাদেশ এখনো সে সনদে সই না করলেও দুর্নীতি দমনে যেন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ, এমন লক্ষ্যেই 'স্বাধীন দুর্নীতি' কমিশন গঠন করেছে। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা "টিআইবির নির্বাহী পরিচালক" এবং দুর্নীতির সচেতন ব্যক্তি ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একটি অভূতপূর্ব নির্বাচন ও অভূতপূর্ব ফলাফলের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হয়েছে তার জন্যেই চ্যালেঞ্জটাও বহুমুখী। আওয়ামী লীগকে এই বিপুল পরিমাণ জয় এনে দিতেই যারা পরিশ্রম করেছেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটাই মন্ত্রীদের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে অর্থনীতিতে যে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে এখন সে প্রবৃদ্ধির সুফল সবাই পাচ্ছে কি না নতুন সরকারকেও সেটি দেখতে হবে। কারণ, যেভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে তাতে করে এই দেশে কর্ম-সংস্থান সেভাবে তৈরি হচ্ছে না আর এটিই বড় চ্যালেঞ্জ দুর্নীতির সঙ্গে।

একটি উদাহরণ দিতেই হয় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ দীর্ঘদিন রাজনীতিতে অনুপস্থিত থেকে পুনরায় রাজনীতিতে এসেই- সংসদ নির্বাচনে বিশাল জয়লাভ করেছিল। '৯২ বছর' বয়সের এমন বর্ষীয়ান প্রধানমন্ত্রী, 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে' অনেক কঠিন অভিযান শুরু করেই মালয়েশিয়ার জনগণের আশা পুরনে সক্ষম হয়েছিল। আজ মালয়েশিয়াকে "রোল মডেল" করে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করবার অনেক কিছু আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য 'আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক' বলেছেন, এবারের মন্ত্রি সভায় নবীন ও প্রবীণের সমন্বয় ঘটেছে। তরুণ মন্ত্রীরা দেশ-বাসীর আবেগ ও অনুভূতি তাঁরা বুঝতে পারবে এবং তাঁরা এদেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হতে পারবে। জানা দরকার, তা হলো: ২০০৮ সালের আগে পরপর ৫ বার এমন দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল৷ আসলেই তখন কোনো কিছুতেই প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল না৷ তখন একটা জমির পরচা পেতেও শত কিলোমিটার দূরে যেতে হতো এবং দালাল ধরে দুর্নীতির মাধ্যমেই সেটা করতে হতো৷ আজকে ২০০ রকমের "সেবা" অনলাইনে আনতে পেরেছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। আন্তর্জাতিক ভাবেই- ধীরে ধীরে দুর্নীতির সূচকে, দুর্নীতিগ্রস্ত বা দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হচ্ছে৷ সুশাসনের জন্য নাগরিক এর সাধারণ সম্পাদক- "ড. বদিউল আলম মজুমদার" বলেছেন, বর্তমানের এ আওয়ামী লীগ সরকার নিজস্ব ইশতেহারেই "সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্পষ্ট ঘোষণা" দিয়েছে। আবার স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, 'তাজুল ইসলাম' বলেন, দুর্নীতি গ্রস্ত সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কোনো ভাবেই বরদাশত করা হবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স। দুর্নীতির কারণেই কোনো সরকারি প্রকল্প যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেইদিকে কঠোর নজর দারির তাগিদ দিয়েছে। তাছাড়াও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক 'খালিদ মাহমুদ চৌধুরী' বলেন, দুর্নীতি এবং বেকার সমস্যার সমাধান বড় চ্যালেঞ্জ হলেও শেখ হাসিনা'র সরকার সব সময়ই চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করে। সুতরাং, বুঝা যায় এই সরকার 'দুর্নীতিরোধ ও কর্মসংস্থান' সৃষ্টিতে কঠোর দৃষ্টি রাখবে। কিন্তু, জনগণের চাওয়া দুর্নীতি দমনের জন্যেই দায়িত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠান 'দুদক'। দুদককে পক্ষপাতিত্ব না করে ভয়ানক কিছু দেখালে জণগন 'খুব খুশি' হবে বলে মনে করি। রবীন্দ্রনাথের এক বাণী রয়েছে তা হলো, ‘ক্ষমা যেথা হীন দুর্বলতা, হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা’- এর প্রতিফলন জাতি আশা করে।

লেখক: টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক

/পিবিডি/একে

দুর্নীতি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close