• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

আমাদের মা-মেয়ের ছোট্ট সংসার ও ভালোবাসা দিবস

প্রকাশ:  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:৪৪
খুজিস্তা নূর-ই–নাহারিন (মুন্নি)

আমাদের মা-মেয়ের ছোট্ট সংসারে আমি যতটা না ব্যস্ত তার থেকে বেশী ব্যস্ত আমার মেয়ে। কারো হাতেই দুদণ্ড সময় নেই একটু থেমে কথা বলার। আমাদের বাসায় আরও আছেন আমার মা। বসতে পারেন না বলে মা’য়ের একমাত্র কাজ হচ্ছে টেলিভিশন দেখা।

মা’ কে যতবার দেখি ততোবার সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা, ‘' এ জীবন যেন কারো না হয় ’'। আমি নিজে নিজেকে সারাক্ষণ বলি এই অবস্থার বহু আগে আমি পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চাই।

সম্পর্কিত খবর

    এবারের ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে অনেক পরিকল্পনা ছিল আমার মেয়ের। আমার মেয়ে হচ্ছে প্ল্যানিং এর একটা ডিব্বা। এক মুহূর্ত স্বস্থিতে শান্ত ভাবে বসে থাকতে পারে না, প্রতিদিন নিত্য নতুন প্ল্যানিং, ভয়াবহ রকমের আড্ডাবাজ । আমি সবকিছু বুঝেও না বুঝার ভান করি কখনোবা এড়িয়ে চলি। প্রতিটি মুহূর্তে আমি ওর সুখ কামনা করি।

    আমি নিজে যেহেতু ব্যস্ত মানুষ প্রতিটি সেকেন্ড কাজে লাগাতে চাই, চেয়েছি মেয়েও তার পৃথক পৃথক সার্কেল গড়ে নিক জীবনটাকে বুঝতে শিখুক, একা একা চলতে শিখুক। দিন শেষে মানুষ মূলত একাই তো !

    চিরপরিচিত দৈনন্দিন ঘরের আবহে নতুন কোন আবেগ বা সুর থাকে না। সারাদিনের ক্লান্ত-শ্রান্ত, অবসন্ন শরীরটাকে কেবল বিছানায় এলিয়ে দেওয়া, কয়েক ঘণ্টা ধরে নিশ্চিতির ঘুম। আমার মা’ না থাকলে দিনের বেলা বাসাটা জন- মানবহীন মনে হত ।

    আমার মেয়ের পছন্দের একটি হচ্ছে মায়ের সাথে ভালো কোন রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া সেই সাথে একান্তে সময় কাটানো নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক ভাবনার আদান-প্রদান। আমি জানি আরেকটু বড় হলে এই সময়টুকুও ও’ অন্য কারো সাথে শেয়ার করতে চাইবে অথবা কে জানে হয়তো মায়ের জায়গাটা আলাদাই রয়ে যাবে।

    গুণে গুণে প্রায় ৭২ ঘণ্টা এক নাগাড়ে বিছানায় শুয়ে আছি। পা’ নাড়াতে পারছি না, ১০ কেজি ওজনের এক্সট্রা ওয়েট নিয়ে পা’ নাড়ানো অসম্ভব প্রায়। ডাক্তার বলে দিয়েছেন আগামী ৭ দিন পা’য়ের উপর বিন্দু মাত্র প্রেসার দেওয়া চলবে না। উঁচু বালিশের উপর পা’ তুলে রাখতে হবে। আমার জন্য রাত দিনের কোন তফাৎ না থাকলেও ভোরের আলোটার জন্য অপেক্ষায় থাকি। দরজা জানালা খুলে সূর্যের আলোক ছটা দেখা মাত্রই মন এক ধরণের ভালো লাগায় আপ্লুত হয়। কই বিগত ৭২ ঘণ্টায় আমার সাথে সাথে পৃথিবীর কোন কিছুই তো থেমে নেই, সব কিছুই তাঁর আপন গতিতে ঘূর্ণায়মান। তবে মিছেই কেন এতো মাথা ভর্তি জঞ্জাল, শোঁক আফসোস, ঘৃণা আর অহংকার !

    ক্লাস ওয়ান থেকে মা’য়ের প্রেশার পরীক্ষায় ফার্স্ট হতেই হবে। এই প্রেশার সহ্য করতে করতে জীবনের দুঃসহ প্রেশার সহ্য করে এগিয়ে যেতে শিখে গেছি। কিন্তু আগামী আরও দেড় মাস কি করে কাটবে এই চিন্তায় আমি শেষ!

    মেয়ে গত রাতে খুব বুদ্ধিদৃপ্ত একটি কথা বলেছে। বলেছে, ‘’ তুমি বেশীদিন বাঁচতে চাও না বলে সৃষ্টিকর্তা তোমার পাওনা আগেই শোধ করছে’'।

    ফেব্রুয়ারী মাসকে ঘিরে কত প্ল্যান, টক শোতে যাব সাদা কালো শাড়ী পরে, হলুদ শাড়ির তাক থেকে শাড়ি নিয়ে পহেলা ফাল্গুনে মেয়ে আর নিজেকে সাজাবো। ১৪ তারিখে দিনে এবং রাতে দুই রকমের শাড়ি। আগামী ৯ই মার্চ আমাদের তারুণ্যের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাই প্রোগ্রামের শাড়ির ব্লাউজ এখনও বানাতেই দেইনি। ভেবেছি পুড়নো সবার সাথে দেখা হবে আরও ৩-৪ কেজি ওজন ঝরিয়ে নেই আগে।

    ঠিকই তো ভাগ্যে যা আছে ভালো অথবা খারাপ তা অবশ্যই ভোগ করতে হবে। আমরা অর্থাৎ সাধারণ মানুষরা নিছকই এতো ছুটোছুটি করি কষ্ট পাই, কখনো নিজের অর্জন বলে আনন্দে উদ্বেলিত হই, ভুলে যাই আমরা কেবলই তাঁর (সৃষ্টিকর্তার) খেলার পুতুল, তাঁর ইশারাতেই এই জগত সংসার। এখানে আমাদের হারাবার অথবা পাবার মূলত কিছুই নেই।

    লেখক- সম্পাদক, পূর্বপশ্চিমবিডি ডট নিউজ

    খুজিস্তা নূর-ই–নাহারিন (মুন্নি)
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close