• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আরেকটি রাজনীতির গল্প

প্রকাশ:  ০৬ মার্চ ২০১৯, ২১:৫০ | আপডেট : ০৬ মার্চ ২০১৯, ২২:০৪
মানস মেহেদী
ফাইল ছবি।

একজন সুস্থ মনের মানুষ হিসেবে যখন ভাবি মনটা ভীষণভাবে তিক্ত হয়ে ওঠে। শক্ত হতে চাইলেও চোখের জল আটকে রাখা আমার মত মানুষের জন্য খুব দুরূহ হয়ে যায়। তারপরেও অমানবিকের মতই চোখের জল আটকে ফেলেছি। মনের মধ্যে যে জল প্রবাহিত হয়েছে তাতেই এক দেশের দুর্গন্ধযুক্ত রাজনীতিকে ভাসিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। আজ ৬ মার্চ বিশেষ কোন দিন নয়, বিশেষ দিন আগামীকাল বা অন্য কোন দিন। তারপরেও আজকের দিনটা আমার কাছে বিশেষ দিন, আরেকটি রাজনীতির গল্প বলার দিন। তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী ২০১৩ সালে এ লেভেল পরীক্ষায় রসায়নে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে রেকর্ড গড়েছিল। ত্বকীর সপ্ন ছিল প্রকৌশলী হবে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ তার জন্য ছিল অভিশাপ। রাজনৈতিক অভিশাপের কবলেই হারিয়ে গেছে বড় হবার সপ্ন। হয়ত এই দেশ, দেশের রাজনীতি মেধাবীদেরকে চায় না। তাই তার নিয়তিও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাজনীতির প্রতিহিংসা। প্রতিহিংসা আমাদের মানুষের রক্তে মিলে মিশে এক হয়ে গেছে। রক্ত এখন বুড়ি গঙ্গার পানি তুল্য। আর রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বর্তমান সময়ের সব থেকে বড় অভিশাপ, মানবিক বিপর্যয়ের মূল হোতা।

ত্বকীর বাবা নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার ফোরাম এবং নাগরিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতা। বাবাকে শাস্তি দেবার জন্য ছেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় একই দলের প্রতিপক্ষ গ্রুপ। কে বা কারা করে সেই কিছু বলার প্রয়োজন নেই, এই বিষয়ে বিষদ আলোচনা আছে "বিচারের বাণী সরবে কাদে" নামক লেখাটিতে। লেখাটি ৫ মার্চ, ২০১৯ প্রকাশিত হয় ডেইলি স্টার অনলাইনে।

৬ মার্চ গ্রন্থাগারে যাবার পথে ত্বকী গুমের জন্য কুখ্যাত নগরী নারায়ণগঞ্জে নিজ এলাকা থেকেই অপহৃত হয়। দুইদিন পরে ৮ তারিখ শীতলক্ষ্যা নদীর খালপাড়ে ত্বকীর লাশ পাওয়া যায়। কী এক দুর্বিষহ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। রাজনীতির কামড়ে যেন খ্যাপা কুকুর হয়ে গেছে প্রায় প্রত্যেকটা রাজনৈতিক প্রাণী। বিভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শ এবং ত্বত্ত্ব নিয়ে ওয়াজ করলেও মানবিক রাজনীতির চর্চা এখানে কোনদিন হয় নাই। যে যখন সুযোগ পেয়েছে ছিড়েফেড়ে খেয়েছে দেশের আপাদমস্তক।

ত্বকী খুনের বিচার প্রসঙ্গে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ভরসা দিলেও রাজনৈতিক কারণে এখনো ঝুলে আছে বিচার কাজ। সাথে প্রশাসন বলছে তাদের হাতে পর্যাপ্ত প্রমান আছে। তবুও কেন বিচার হচ্ছে কেন সেটা নিয়ে আক্ষেপ থাকলেও প্রত্যাশা নেই। কারণ বিচার কাজ কতটুকু স্বাধীন এবং স্বচ্ছভাবে হয় তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

এটি গেল এক ত্বকীর গল্প, রাজনীতিকে কেন্দ্র করে খুন, গুম, ধর্ষনের ঘটনা এখন নিত্যদিনের বিষয়। প্রত্যেকটা অনৈতিক, অমানবিক কার্যকলাপের ভিড়ে মানবিকতা গৃহবন্দী দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে বের হবার পথ কি আছে! আমাদের জাতীয় নেতারা বিভিন্ন আগ্রাসী বক্তব্যে ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রত্যেকটা মানুষের মগজের মধ্যে এক ধরনের হিংসা প্রতিহিংসার জন্ম দিয়েছে। তাতে করে একটা মানবিক রাষ্ট্র গঠন করতে লেগে যাবে অনেক বর্ষ।

মানুষের সুস্থ স্বাভাবিক শ্বাসতন্ত্র পরিচালিত হয় আশার শক্তিতে, সেই আশা নিয়ে আমিও বলতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দ্রুত ত্বকী হত্যার আসামিরা উপযুক্ত শাস্তি পাবে। আর কোন মানুষ যেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার না হয় সেদিকে দৃষ্টি দেবার জন্য অনুরোধ করছি। প্রত্যেকটা নাগরিক সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চায়। সেটা নিশ্চিত করার দ্বায়িত্ব কাঁধে নিয়েই আপনারা পার্লামেন্টে বসেন। আন্তরিক অনুরোধ জনকল্যাণমুখী রাজনীতি করুন। রাজনৈতিক কারণে একটি প্রাণের ক্ষতি হলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আপনাদের বীভৎস ছবি ঝুলবে আর সবাই তাতে থুথু ছিটাবে।

মানস মেহেদী: চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক।

পিবিডি/ এইচ কে

মানস মেহেদী,রাজনীতি,ত্বকী হত্যাকাণ্ড
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close